ভোট করবে, জামিন নেবে, নাকি জেলে যাবে’ জেনুইন নির্বাচন না হলে বিপর্যয়

ক্রাইমবার্তা রিপোট: নির্বাচন ও ভোটাধিকার বিষয়ক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা প্রায় এক বাক্যেই বললেন, দেশবাসী একটি প্রকৃত নির্বাচন দেখতে চায়। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে যেটি হতে হবে ‘জেনুইন ডেমোক্রেটিক ইলেকশন।’ গোটা দুনিয়া বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনকে সহিংসতামুক্ত, অবাধ, সুষ্ঠু, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখতে মুখিয়ে আছে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, জনমতের সত্যিকারের প্রতিফলন ঘটবে- এমন নির্বাচন সবাই চায়। যেখানে ভোট কারচুপি হবে না। রেফারি হিসেবে নির্বাচন কমিশন হবে পুরোপুরি নিরপেক্ষ। কমিশনের ভেতরে থেকে কেউ সিস্টেমেটিক ম্যানুপুলেশন বা নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারবে না। সবার জন্য নিশ্চিত হবে সমান সুযোগ। কমিশন কারও আজ্ঞাবহ হবে না বরং মেরুদ- সোজা করে অর্পিত সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করবে। প্রয়োজনে মাঠ প্রশাসনে ব্যাপক রদবদলও আনবে।

কমিশন সেটি করতে ব্যর্থ হলে তারাই দায়ী থাকবে। তবে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, মানুষ যদি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা হারায় তবে জাতিগতভাবে বিপর্যয় নেমে আসবে। হানাহানির আশঙ্কাও করেন কেউ কেউ। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নানাভাবে হয়রানির অভিযোগ নিয়েও কথা হয়।

অনুষ্ঠানের মুখ্য আলোচক প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম বলেন, কোর্টে এখনও হাজারেরও বেশি লোক জামিন নিতে অপেক্ষায় আছে। এখন মানুষ নির্বাচন করবে, নাকি বেইল নেবে, নাকি জেলে যাবে? ‘নির্বাচনের রাজনীতি ও জনগণের ভোটাধিকার’ শীর্ষক ওই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজক ছিল সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্ট্যাডিজ। রাজধানীর ইস্কাটনস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্ট্যাডিজ মিলনায়তনের ওই আয়োজনে সরকার ও বিরোধী দলের প্রতিনিধিরা যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন- আইনজ্ঞ, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, সামরিক ও বেসামরিক সাবেক কর্মকর্তাবৃন্দ, শিক্ষাবিদ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, গবেষক, বিশ্লেষক ও নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধিরা। প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টার প্রাণবন্ত ওই আলোচনায় ছিল যুক্তি, পাল্টা-যুক্তি। সরকার, বিরোধী পক্ষ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের ত্রিমুখ বিতর্ক। সেখানে ঘুরে-ফিরে আসে বহুল আলোচিত ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন প্রসঙ্গ। ওই নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীনরাও যে স্বস্তিতে ছিলেন না, সেটি স্বীকার করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। সেখানে ২০১৪ সালের ওই নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের অংশ না নেয়ার সমালোচনাও হয়। তবে সবাই এটা আশা করেন ৫ই জানুয়ারির পুনরাবৃত্তি আর ঘটবে না। আনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রফেসর ড. এম আতাউর রহমান।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। মুখ্য আলোচক ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার আমির উল ইসলাম। আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম. হাফিজ উদ্দিন খান, সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেটট শ ম রেজাউল করিম, বিএনপির সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন, শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, প্রফেসর আবুল কাশেম ফজলুল হক, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ইকতেদার আহমেদ, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক পিএসও ও বিজিবির সাবেক ডিজি লে. জেনারেল (অব.) মইনুল ইসলাম, ব্যবসায়ী নেতা আবদুল হক, গবেষক ড. এনামুল হক, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ গ্রুপ ফেমার প্রেসিডেন্ট মনিরা খান, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান, গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইকারাস ইউএসএ ইনকরপোরেশনের প্রধান নির্বাহী মাহমুদ রেজা চৌধুরী এবং সেন্টার ফর গভর্নমেন্ট স্টাডিজের ভাইস চেয়ারম্যান ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ।

চ্যানেল আই-এর তৃতীয় মাত্রার উপস্থাপক সাংবাদিক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে ড. এম সাখাওয়াত হোসেন মোটা দাগে কয়েকটি বিষয় উত্থাপন করেন। বলেন, আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং বিশ^াসযোগ্য হবে, নাকি ২০১৪ সালের মতোই ‘ত্রুটিযুক্ত এবং ব্যর্থ’ হবে, এটাই এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। বিদ্যমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় নির্বাচনটি অংশগ্রহণমূলক হলেও সেটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। প্রাক্তন ওই নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচন কমিশন মাঝে মধ্যে এমন সব কথা বলছে যা তারা নিজেদের বিতর্কিত করে ফেলছে। মনে রাখতে হবে বিশ্ব তাকিয়ে রয়েছে এই নির্বাচনের দিকে। সরকারের অধীনে এর আগে নির্বাচন হলেও এবারই প্রথম দলীয় সরকারের অধীনে সব দল অংশ নিচ্ছে। ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনকে ফ্রি ও ফেয়ার করা ইসির জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তিনি বলেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে কমিশনকে সরকারই সব রকম সহযেগিতা করতে হবে। অবশ্য বিদায়ী বক্তব্যে ড. সাখাওয়াত দেশে ‘প্রকৃত নির্বাচন’ই হবে আশা করে বলেন, এর ব্যত্যয় ঘটলে জাতীয়ভাবে ‘বিপর্যয়’ হবে।

আলোচনায় অংশ নেয়া আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ৩০শে ডিসেম্বরের ভোট হবে কি না? তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। অবশ্য তিনি এজন্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেন এবং এলডিপি চেয়ারম্যান অলি আহমেদের সাম্প্রতিক বক্তব্যকে দায়ী করেন। বলেন, তারা যেভাবে ভোট নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন, তাতে আমাদের মধ্যে আশঙ্কার জš§ দিচ্ছে। তাদের বক্তব্যকে তো আমরা ফেলনা মনে করি না। সরকার বা তার দল প্রকৃত নির্বাচনই চায় দাবি করে হানিফ বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি স্বাধীন। যারা কমিশনে আছেন তারা যদি কারও আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করেন তবে সে দায় তাদের, সরকার কিংবা কোনো রাজনৈতিক দলের নয়। সেমিনারে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনকে ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেন। মিন্টু বলেন, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন পরবর্তী সহিংতার জন্য ঢালাওভাবে বিএনপিকে দায়ী করা হয়। অথচ তার অভিজ্ঞতা হচ্ছে তিনি সে সময় ঘরের বাইরেই বের হননি। কিন্তু তার বিরুদ্ধেও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে ২২টি মামলা দেয়া হয়েছে। ওই সহিংসতার নেপথ্যে কারণ খুঁজতে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানান তিনি। মিন্টু অভিযোগ করেন, বর্তমানে যে অবস্থা চলছে, বিশেষ করে রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতায় সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব।

সরকার ও ইসির কঠোর সমালোচনা ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামের: গোলটেবিল আলোচনায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে অংশ নেয়া সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল ইসলাম আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কঠোর সমালোচনা করেন। এক সময় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকা প্রবীণ ওই আইনজীবী বলেন, পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে সব ধরনের প্রশাসন রাজনৈতিক দলের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের এখানে আইনের শাসন অনুপস্থিত। এক্সিকিউটিভ পাওয়ার পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে এবং এর কোনো একাউন্টিবিলিটি বা দায়বদ্ধতা নেই। নির্বাচনের এই সময়েও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, কোর্টে এখনও গেলে আপনারা পাবেন হাজারেরও বেশি লোক জামিন নিতে অপেক্ষায় আছে। এখন মানুষ নির্বাচন করবে, নাকি বেইল নেবে, নাকি জেলে যাবে? এখন মানুষকে ঘরছাড়া করে ফেলা হচ্ছে। ‘হয়রানিমূলক’ মামলা ও ধরপাকড়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তফসিল ঘোষণার আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপেও ‘গায়েবি’ মামলা বন্ধের দাবি ওঠে ছিল। দলীয় ব্যক্তিদের নির্বাচনের দায়িত্ব না দেয়ার দাবির পাশাপাশি ভোটগ্রহণে ইভিএমের ব্যবহার নিয়েও আপত্তি করছে বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্ট। কিন্তু এটি সরকার ও ইসি আমলে নেয়নি।

এই দুই প্রসঙ্গেও কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম। তার ভাষায়- ‘পত্রিকায় দেখেছি সিইসি কালকে নাকি পুলিশকে বলেছে, আপনার সম্ভাব্য প্রিজাইডিং অফিসারদের তথ্য সংগ্রহ করার জন্য তাদের বাড়িতে বাড়িতে কেন যাচ্ছেন, যা করবেন চুপচাপ করবেন। তাহলে কারা প্রিজাইডিং অফিসার হবে এবং হবে না সেটাও ওখানে সিদ্ধান্ত হচ্ছে? তিনি বলেন, ‘ইভিএম কি জিনিস আমি তো বুঝি না। ইভিএম কোম্পানিটা কোথাকার সেটাও জানি না। এটা কি এমআরআই মেশিনের মতো কোনো মেশিন নাকি? আমি এর সম্পর্কে কিছুই জানি না। ইভিএমের ডেমো করা হচ্ছে, এটা বিরাট প্রমোশন, আমি কোম্পানিটার নাম জানতে চাই।’ সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য আমীর-উল ইসলাম কয়েক দশক আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকলেও তিনি এই নির্বাচনকে দেখছেন ‘মুক্তির পথ’ হিসেবে। সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে সাধারণ মানুষ কোনো রকম পুলিশি হয়রানিতে পড়বে না, সেই ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি কি না? নিলে কেন তারা কোনো জামিন পাচ্ছে না, সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টে বেইল নিতে আসছে। পরিস্থিতি এখন এ রকম। ইতিহাস বলে, নির্বাচন হচ্ছে মুক্তির পথ।

এই নির্বাচন জনগণকে উপভোগ করতে দিতে হবে।’ আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলাম বলেন, নির্বাচন ঘিরে যা ঘটছে তা নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া আছে। যেমন সুপ্রিম কোর্টের সামনে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ আসছে জামিনের জন্য। তাদের বেশিরভাগই রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং অনেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চান। কিন্তু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও তাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি বাদ দিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আসতে হচ্ছে জামিনের জন্য। যেসব মামলা হচ্ছে, সেগুলো কী ধরনের মামলা তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। কোন দল নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, আর কোন দলের নেতাকর্মীরা আদালতের বারান্দায় ঘুরছেন, এটা স্বাভাবিক পরিস্থিতি নয়। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।

নির্বাচন কমিশনের সাহস দেখাতে অসুবিধা কোথায়: মইনুল ইসলাম
বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক লে. জেনারেল (অব.) মইনুল ইসলাম তার বক্তৃতায় বলেন, আমি যদি মনে করি হারি নাই। মরে গেলেও আমি হারিনি। আমরা হারতে পারি না। একাত্তরে আমরা আমাদের অধিকার আদায় করেছি, কেউ এটা আমাদের দিয়ে দেয়নি, প্রেজেন্ট করেনি। এবারও আমাদেরটা আমাদের আদায় করতে হবে। নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে বলা হয়েছে তাদের সবই আছে। তাদের পাওয়ার এমন যে এটা বাঘের মত। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে- বাঘটা কী খাঁচার, না বনের। খাঁচার বাঘ হলে ভিন্ন কথা। নির্বাচন কমিশন যদি বনের বাঘের মত হয় তাহলে তাদের সাহস দেখাতে অসুবিধা কোথায়? ভোট সুষ্ঠু করার জন্য যদি ৬৪ জেলার ডিসি বদলাতে হয়, প্রয়োজন মনে করলে তারা বদলি করবেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বিড়ালের গলায় ঘন্টাটা বাঁধবে কে? ভোটের পরে কি হবে? এই চিন্তায় তারা যদি ভয় পান, তাহলে একজন প্রিসাইডিং অফিসার কী সাহস করবে? তারা তো নিগৃহীত হওয়ার ভয়ে থাকবে। কমিশন সাহস না করলে তারা সহসী হবে না। এটা অসম্ভব।

ইভিএম নিয়ে আপত্তি: অনুষ্ঠানে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম. হাফিজ উদ্দিন বলেন, ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে নির্বাচন কমিশনের হঠাৎ সিদ্ধান্ত, বিপুল ব্যয় এবং অনমনীয় অবস্থান প্রশ্নের উদ্রেক করে। নির্বাচন কমিশন যদি প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকা- করে তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়। যেটা নির্বাচন কমিশনের বলার কথা, সেটা আগেই সরকার কিংবা সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক বলে দিচ্ছেন। এগুলো মানুষের মনে প্রশ্নের জš§ দেয়। ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা ভয়াবহ সংকটে আছি। সংকটের কারণেই অনেক দিন পর সবগুলো দল নির্বাচনে অংশ নিলেও সেই নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। যেহেতু দলীয় সরকার এবং সংসদ বহাল রয়েছে, সে কারণে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সমতল ক্ষেত্র তৈরি হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। আরও সন্দেহ ভোটগ্রহণ ঠিকমতো হলেও ভোট গণনা সঠিকভাবে হবে কি না। তিনি বলেন, এত সন্দেহের সৃষ্টি হতো না যদি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এত বিভেদ, অনাস্থা, অবিশ্বাসের সম্পর্ক না থাকত। তিনি বলেন, ইভিএম ব্যবহারে নির্বাচন কমিশনের অবস্থান সন্দেহ আরও বাড়িয়েছে। অনুষ্ঠানে শ ম রেজাউল করিম প্রতি পাঁচ বছর পর শুধু নির্বাচন নিয়ে না ভেবে রাজনীতিতে স্থায়ী গুণগত পরিবর্তনের বিষয়টি ভাবার তাগিদ দেন।

বিএনপি নেতা জহির উদ্দিন স্বপন তার নিজের নির্বাচনী এলাকায় যাওয়া ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ উল্লেখ করে বলেন, স্বাধীনতার এত বছর পরও নির্বাচনের নিয়ে শঙ্কা তৈরি হওয়াটা রাজনীতিবিদদেরই ব্যর্থতা। স্থপতি মোবাশে^র হোসেন বলেন, যে রাজনীতিবিদরা তাদের সন্তানকে বিদেশে পাঠিয়ে লেখাপড়া করান এবং বিদেশের নাগরিক হতে উদ্বুদ্ধ করেন তাদের এদেশে এমপি-মন্ত্রী হওয়া কতটা নৈতিক এবং উচিত তা বিবেচনা করা জরুরি। যারা বিদেশের নাগরিকত্বকে প্রাধান্য দেন, যতই দেশ নিয়ে কথা বলুক, তারা দেশের উন্নয়ন করতে পারেন না। কারণ, তাদের সত্যিকারের টান দেশের জন্য নেই। মনিরা খান বলেন, বিগত সময়ে যত নির্বাচন কমিশন হয়েছে তার মধ্যে দু-একটা ছাড়া বাকি সবকটিই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে করা যায় না উল্লেখ করে বলেন, তিন স্তরে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে হয়। বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে পর্যবেক্ষণ ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ইভিএম কেনার জন্য চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে, অথচ চারশ’ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকায় ২০টি ইউলুপ নির্মাণ করা হলে যানজট অধিকাংশই নিরসন সম্ভব। মানুষ আজ যানজটে অতিষ্ঠ।

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।