নির্বাচনে ম্যাজিষ্ট্রেসি পাওয়ারও দেয়া হচ্ছে না সেনাবাহিনীকে

ক্রাইমবার্তা রিপোট:  আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে। তবে কবে থেকে সেনা মোতায়েন করা হবে এবং তারা মাঠে কতদিন থাকবে তা উল্লেখ করেনি নির্বাচন কমিশন।

এছাড়া নির্বাচনের পরেও সেনাবাহিনী থাকবে কিনা বা তারা নির্বাচনে কিভাবে কাজ করবে, তারা কি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে, নাকি টহলের দায়িত্বেও থাকবে- এসব বিষয়েও এখন পর্যন্ত বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।

এর আগে নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিষ্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়ার যে দাবি করেছিল জাতীয় ঐক্যফন্ট, তখন নির্বাচন কমিশন স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছিল, সেনাবাহিনীকে ম্যাজিষ্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

এছাড়া নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কত সেনাসদস্য মোতায়েন করা হবে, একটি উপজেলা, জেলা বা মহানগরে কতজন থাকবেন, তা এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি।

তফসিল ঘোষণার সময় জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেছিলেন, নির্বাচনে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা দিতে ‘এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় সেনা মোতায়েন করা হবে।

আগামী ১৫ ডিসেম্বরের পর থেকে সেনাবাহিনী মাঠে থাকবে বলেও জানান সিইসি।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম জানান, ‘সেনা মোতায়েনের ব্যাপারে সব দায়িত্ব কমিশন প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে দিয়েছে। তিনিই দিনক্ষণ ঠিক করবেন ও যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবেন। আর এ নিয়ে তিনিই আপডেট জানাবেন।’

রফিকুল ইসলাম আরও জানান, তারা টহল দেবে না অথবা তাদের ম্যাজিষ্ট্রেসি পাওয়ারও দেয়া হচ্ছে না।

সেনা মোতায়েনের ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন-এর প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিএনপি বা আরও কিছু বিরোধী রাজনৈতিক দল যেভাবে সেনাবাহিনীকে নির্বাচনের সময় ম্যাজিষ্ট্রেসি পাওয়ার দেয়ার দাবি করছে, তা সংবিধান ও আইন সমর্থন করে না। তবে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে তারা ক্যাম্পে বসে থাকলেও কোনো সুফল পাওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেন ড. বদিউল আলম।

তিনি বলেন, তাদের যদি স্বাধীনভাবে টহলের ক্ষমতা দেয়া হয়, তাহলে সেটা অনেক কাজে দেবে। তাদের মুভমেন্টের কারণে অপরাধী ও সমাজবিরোধীরা ভয়ে থাকত।

এটা সংবিধান ও আইনবিরোধী উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘সেনাবাহিনী কাজ করবে নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী। এখন যদি পোলিং, প্রিসাইডিং বা রিটার্নিং অফিসাররা নিরপেক্ষ না হন, তাহলে কী হবে? তাদের নিরপেক্ষতার ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করছে।’

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা ১৫ ডিসেম্বরের পর থেকে সেনা মোতায়েনের যে কথা বলেছেন, তা আমাদের দাবি পূরণ করবে না।

তিনি বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার যা বলেছেন, সেনাবাহিনী বিভিন্ন এলাকায় ক্যাম্প করে অবস্থান করবে। নির্বাচন কমিশন চাইলে তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করবে। তারা টহল দেবে না অথবা তাদের ম্যাজিষ্ট্রেসি পাওয়ারও দেয়া হচ্ছে না।’

নির্বাচন কমিশন দলীয় কমিশনে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে আমীর খসরু আরও বলেন, ‘পোলিং, প্রিসাইডিং বা রিটার্নিং অফিসাররা যদি সেনাবাহিনীকে সহায়তার জন্য কোনো পরিস্থিতিতে ডাকেন, তবে তারা কাজ করবেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশনই তো তাদের দলীয় কমিশনে পরিণত হয়েছে। পোলিং, প্রিসাইডিং বা রিটার্নিং অফিসার তো তাদেরই লোক। তাহলে এই সেনা মোতায়েন করে কি কোনো কাজ হবে?’

সেনাবাহিনীর মুভমেন্টের কারণে অপরাধী ও সমাজবিরোধীরা ভয়ে থাকত বলেও উল্লেখ করেন বিএনপির এই নেতা।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘সিভিল প্রশাসনকে সহায়তার যে বিধান, তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে বিএনপি যা চাইছে, সেনাবাহিনীকে ম্যাজিষ্ট্রেসি পাওয়ার দিতে হবে, তা সংবিধান বা আইনে নেই। এটা সংবিধান ও আইনবিরোধী। পৃথিবীর কোনো দেশে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিষ্ট্রেসি পাওয়ার দেয়া হয় না। বিএনপি সব সময়ই সংবিধানবিরোধী অবস্থান নেয়। তারা সংবিধান মানতে চায় না।’

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে ২০০১ এবং ২০০৮ সালের নির্বাচন ছাড়া আর সব নির্বাচনেই সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত ছিল।

Check Also

তাবলীগ জামায়াতের সাদপন্থীদের নিষিদ্ধের দাবিতে সাতক্ষীরায় বিক্ষোভ-সমাবেশ

মুহাম্মদ হাফিজ, সাতক্ষীরা : তাবলীগ জামাতে সাদপন্থীদের বর্বোরিচত হামলার প্রতিবাদ ও সাতক্ষীরা জেলা আ.লীগের সহসভাপতি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।