ক্রাইমবার্তা রিপোট: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরার তিনটি আসনে ২৩ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামী জোটগত ভাবে তিনটি আসনে লড়বে। জামায়াতের এক কেন্দ্রীয় নেতা জানান,তারা সাতক্ষীরা জেলা থেকে ৩টি আসনে জোটগত ভাবে নির্বাচন করবে। বিএনপির সঙ্গে নীতিগত ভাবে তারা আলোচনা করে জামায়াতের এ আসন তিনটি নিশ্চিত করেছেন।
এর মধ্যে সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনে সাবেক সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমীর কেন্দ্রীয় নেতা মুহাদ্দীস আব্দুল খালেক, সাতক্ষীরা-৩ আসনে জামায়াতের বর্তমান জেলা আমীর হাফেজ রবিউল বাশার ও সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর) আসনে সাবেক এমপি মুক্তিযুদ্ধা গাজী নজরুল ইসলাম। গতকাল জেলা ব্যাপি এটাই ছিল আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে। তবে কাল আনুষ্ঠানিক ভাবে বিএনপি আসন বন্টনের তালিকা ঘোষণা করতে পারে। অন্যদিকে তালা কলারোয়া ১ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব ২৩ দলীয় জোটের পক্ষে নির্বাচন করবেন বলে দলীয় সূত্র জানায়।
জেলাতে জামায়াতের রয়েছে শক্তিশালী রাজনৈতিক অবস্থান। নিবন্ধন বাতিল হওয়াতে এবার তারা জোটের প্রতিক বা স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন বলে জামায়াত নেতারা জানান। সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমীর হাফেজ রবিউল বাশার জানান, জেলার সবকটি আসনে জামায়াতের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। বিগত নির্বাচন গুলোতে তারা জনগণের বিপুল সমর্থন পেয়েছে। তাই আগামি নির্বাচনেও তারা জনগণের বিপুল সমর্থন পবে।
২০০১ সালের নির্বাচনে জেলার তিনটি আসনে জামায়াত প্রার্থীরা বিজয়ী হন। অবশ্য ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জামায়াত কোনো আসনে জিততে পারেনি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনবিরোধী আন্দোলনে জামায়াত সাতক্ষীরার চারটি আসনে কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বর্তমান ক্ষমতাসীনরা দলটির ৫ হাজার নেতাকর্মীদের নামে মামলা করেছে বলে সূত্র জানায়। এসব রাজনৈতিক মামলায় আটক করা হয় প্রায় ২০ হাজার নেতাকর্মীকে। দলটি বলছে সংখ্যা আরো বেশি। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অফিস গুলোতে পুলিশ তালা দিয়ে রাখে। এত কিছুর পরও বিগত ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে সাতক্ষীরা জামায়াত সড়কে গাছ কেটে প্রতিরোধ ও সড়ক বিচ্ছিন্ন করার মত কর্মসূচি দিয়ে দেশবাসির নজরে আসে।দলটির দাবী এতে তাদের জনসমর্থন বাড়ে । পরবর্তিতে উপজেলা ও ইউনিয়নপরিষদ নির্বাচনে জামায়াত বিপুল ভোট পাই। উপজেলা চেয়ারম্যান,ভাইসচেয়ারম্যান সহ গুরুত্বপূর্ণ পদে জামায়াতের প্রার্থীরা জয়ী হন। তাই সাতক্ষীরার চারটি আসনের জয়-পরাজয়েই জামায়াতের উপর অনেকটা নির্ভরশীল।
গত কয়েক বছর ধরে জেলাতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের দলীয় কোন্দল প্রকাশ্যে রূপ নেই। আ’লীগের দলীয় কোন্দল মেটাতে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাতক্ষীরাতে সফরও করেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। রয়েছ চরম দলীয় কোন্দল। রয়েছে দলের ত্যাগী নেতাদের মুল্যায়ন না হওয়ার অভিযোগ।
এদিকে বিগত দশম জাতীয় সংসদ (২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী) নির্বাচনে সাতক্ষীরার চারটি আসনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের তিনজনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন, সরকারি বিদ্যালয়ে নাইটগার্ড নিয়োগ এবং বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষক, কর্মচারী নিয়োগে ঘুষ-দুর্নীতি, কাবিখা ও কাবিটা এবং সোলার প্যানেল বাণিজ্যেও ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে।
আওয়ামী লীগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, জেলার চারজন এমপি’র মধ্যে তিন জনের আমালনামা খুবই খারাপ। তারা এলাকায় চরমভাবে বিতর্কিত ।
২০০৮ সালের নির্বাচনে সাতক্ষীরা-২ আসনে জামায়াতে ইসলামীর আবদুল খালেক মন্ডল ১,১৪,৫১৭, সাতক্ষীরা-৩ আসনে রিয়াসত আলী বিশ্বাস ১,৩৩,৮০২, সাতক্ষীরা-৪ গাজী নজরুল ভোট পান। সিমীত ভোটে পরাজিত হন দলটির প্রাথীরা। ১৯৭৯ সালের (জিয়াউর রহমানের আমলে) জাতীয় নির্বাচনে সাতক্ষীরার তিনটি আসনে মুসলিম লীগের প্রার্থী জয়লাভ করেন।
১৯৮৬ সালের নির্বাচনে সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনে জামায়াতের এড. শেখ আনসার আলী এবং সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনে কাজী শামছুর রহমান নির্বাচিত হন। পরে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনেও জামায়াতের প্রাথী হিসেবে তিনি সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসন থেকে নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে সাতক্ষীরার পাঁচটি আসনের মধ্যে চারটি আসনেই জামায়াতের প্রার্থী জয়লাভ করেন। ১৯৯৬ সালে একমাত্র সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনে কাজী শামছুর রহমান নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে আবার সাতক্ষীরা ২, ৩ ও ৫ এই তিনটি আসন পায় জামায়াত। ২০১৩ সালের ইউপি নির্বাচনে জেলার সাতটি উপজেলার ৭৮টি ইউনিয়নের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৬টি, বিএনপি ৩০টি, জামায়াত ২৭টি এবং জাতীয় পার্টি পাঁচটিতে নির্বাচিত হয়। ২০১৩ সালের সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে আওয়ামী লীগের একজন এবং বিএনপি-জামায়াতের ১৩ জন চেয়ারম্যান ছিল। তালায় ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে দুটিতে আওয়ামী লীগ, বাকি ১০টিতে জামায়াত-বিএনপির সমর্থকেরা চেয়ারম্যান। কলারোয়ার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে আওয়ামী লীগের তিনটি, বাকি নয়টিতে জামায়াত-বিএনপির সমর্থকেরা চেয়ারম্যান। দেবহাটায় পাঁচটির মধ্যে আওয়ামী লীগের দুজন ও জামায়াতের তিনজন চেয়ারম্যান। কালীগঞ্জে ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে জামায়াত-বিএনপির নয়জন এবং আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির তিনজন চেয়ারম্যান। শ্যামনগর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ১০ জন জামায়াত-বিএনপি ও দুজন আওয়ামী লীগের সমর্থক চেয়ারম্যান রয়েছেন। আশাশুনিতে ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে আটটিতে আওয়ামী লীগ এবং বাকি চারটিতে জামায়াত-বিএনপির চেয়ারম্যান।
এবার
জামায়াতের একজন কেন্দ্রীয় নেতা নিশ্চিত করেছেন, বিএনপি এখন পর্যন্ত ২৫ আসন ছাড়তে রাজি হয়েছে। জামায়াত আরও কয়েকটি আসনে ছাড় পেতে চেষ্টা করছে। তার দাবি, শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩০ আসন পেতে পারে।
নিবন্ধন হারানো জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় নেতা জানিয়েছেন, স্বতন্ত্র নয় আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবেন দলটির প্রার্থীরা। এ বিষয়ে ঘোষণা আসবে আজকালের মধ্যে।
জামায়াতের নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার জানিয়েছেন, তারা ৫৩ আসনের তালিকা বিএনপিকে দিয়েছেন। ২৮ নভেম্বর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তারা মনোনয়নপত্র দাখিল করবেন। ধানের শীষে মনোনয়নপত্র দাখিল করা হবে কিনা তা বলতে রাজি হননি তিনি।
গতবারের ৩৩টির ২৭টিতে এবারও জোটের মনোনয়ন চায় জামায়াত। গতবারের উন্মুক্ত পাঁচ আসনের তিনটিতে জামায়াত দ্বিতীয় হয়েছিল। বিএনপির অবস্থান ছিল তৃতীয়। এগুলোতেও এবার জোটের মনোনয়ন চায় জামায়াত। নতুন করে রাজশাহী-১, বগুড়া-৪, ঢাকা-১৫, সাতক্ষীরা-১ ও চট্টগ্রাম-১৬ আসনে জোটের মনোনয়ন চায়।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেলা প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান জানান, জেলাতে নির্বাচনি পরিবেশ নেই। পুলিশ এখনো বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রেখেছে। যখন সরকার দলীয় লোকেরা সভা সমাবেশসহ যাবতীয় কর্মসূচি নির্বিঘেœ পালন করে যাচ্ছে। তখন বিএনপি জামায়াত তাদের দলীয় অফিস খুলতে পারছে না। এমন কি পুলিশ প্রতিদিন বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের ভয়ভীতিসহ অর্থবাণিজ্য করে চলেছে। নির্বাচন কমিশন সব দলের জন্য নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টির কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এমনটাই আশা করছেন জামায়াতের এ নেতা। আবু সাইদ বিশ্বাসঃসাতক্ষীরা