ক্রাইমর্বাতা রিপোর্ট: পাঁচ ঘন্টা রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিসের সামনে দাড়িয়ে থেকেও মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি জামায়াতের প্রার্থী অধ্যাপক গোলাম রব্বানি। তিনি রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনে ২০ দলীয় জোট সমর্থিত ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়পত্র জমা দিতে গিয়েছিলেন।
গোলাম রব্বানির আইনজীবী অ্যাডভোকেট বায়েজিদ ওসমানি বলেন, বুধবার মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিনে রংপুরের ডিসি (রিটানিং কর্মকর্তা) এনামুল হাবীব তার দরজার সামনে ৫ ঘন্টা দাড় করিয়ে রেখে কোন কারণ উল্লেখ না করেই মনোনয়নপত্র গ্রহণে অপরাগতা প্রকাশ করেন।
ঘটনাটিকে নজীরবিহীন এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে প্রধান অন্তরায় দাবি করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন তার আইনজীবী।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য ২০ দলীয় জোট থেকে মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর মিঠাপুকুর উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন অধ্যাপক গোলাম রব্বানী। তিনি জামায়াতে ইসলামী রংপুর জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক।
বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় ডিসি অফিসের সামনে দাড়িয়ে অ্যাডভোকেট বায়েজিত ওসমানি বলেন, বুধবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে গোলাম রাব্বানীর পক্ষে মনোনয়নপত্র নিয়ে আমিসহ কয়েকজন জুনিয়র আইনজীবী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ডিসি এনামুল হাবীবের কাছে যাই। এই মনোনয়নপত্রে ২০ দলীয় জোটের বিএনপি প্রার্থী হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্বাক্ষর রয়েছে। আমরা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিতে চাইলে তিনি গ্রহণ করেননি। এসময় আমরা দরজার পাশে দাড়িয়ে থাকি। আমাদের সামনে অন্যরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে চলে যেতে থাকেন।
এই আইনজীবী আরও জানান, এ ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই রংপুর জেলা পুলিশের বি-সার্কেলসহ মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তা এবং ডিএসবি ও ডিবির লোকজন আমাকে ঘিরে রেখে জেরা করতে থাকেন-কেন প্রার্থী আসলো না। প্রস্তাবক, সমর্থনকারী কেন আসলো না। এছাড়াও তারা অধ্যাপক গোলাম রব্বানীর মনোনয়ন কাগজপত্র দেখেত থাকেন। আমি পুলিশের কর্মকর্তাদের জানাই, অধ্যাপক গোলাম রব্বানী উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সাড়ে চার বছরেই বিভিন্ন রাজনৈতিক মিথ্যা মামলায় জেলে ছিলেন। সর্বশেষ মামলায় জামিন নিয়ে বের হয়ে আসেন। এরই মধ্যে তাকে আবারও একটি গায়েবী মামলা দেয়া হয়। ওই মামলায়ও তিনি গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট থেকে জামিন প্রাপ্ত হন। সেই জামিনের তারিখ রয়েছে আগামী বছরের ১৫ জানুয়ারী। নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী প্রার্থী, প্রস্তাবক, সমর্থনকারী ছাড়াও তার পক্ষে মনোনয়ন পত্র দাখিল করার বিধান আছে। এ বিষয়ে নথিপত্র বি সার্কেল কে দেয়ার পর তিনি বলেন মনোনয়ন দাখিল করতে আপনার কোন অসুবিধা নেই।
এই আইনজীবী আরও জানান, পুলিশের কর্মকর্তা একথা বলার পর আমি মনোনয়ন দাখিল করতে গেলে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আবারও আমাকে রিটার্নিং কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে বলেন। অনেক অনুরোধের পর রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে যাওয়ার অনুমতি পাই। সেখানে গিয়ে আমি আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে মনোনয়ন পত্রটি নেয়ার অনুরোধ জানাই। এসময় সেখানে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, এডিসি, মেট্রেপলিটন কোতয়ালী জোনের এসি, কোতয়ালী থানার ওসিসহ পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এরই মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাকে ডিসির ছোট রুমে গিয়ে ঢাকায় কথা বলতে বলেন। তিনি ওই ছোট রুমে যাওয়ার পর রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সকল কর্মকর্তা সেখানে যান। অনেকক্ষণ পর তার ফিরে এসে রিটার্নিং কর্মকর্তা আমাকে বলেন আমরা তার মনোনয়ন গ্রহণ করতে পারবো না। উপর থেকে না বলা হয়েছে।
আইনজীবী বায়েজিদ ওসমানি আরও জানান, এসময় আমি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে বলি আপনি এখন নির্বাচন কমিশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা। আপনি আইন অনুযায়ী এটা নিতে বাধ্য। কেন নিবেন না সেটাও বলতে বাধ্য। কিন্তু তিনি কোন কারণ ব্যাখ্যা না দিয়েই মনোনয়ন ফরম নিতে অপারগতা প্রকাশ করে আমাকে বিদায় দেন।
এই আইনজীবী বলেন, আসছে নির্বাচন যে একটি পাতানো নির্বাচন হবে সেটাই প্রমাণ করলেন এই রিটার্নিং কর্মকর্তা। তিনি সরকারের ইচ্ছারই প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তিনি মনোনয়ন জমা না নিয়ে আইন ভঙ্গ করেছেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। পাশাপাশি এ বিষয়ে আমরা জোট, ঐক্যফ্রন্টকে অবহিত করে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিবো। তিনি বলেন, ওই আসনে আওয়ামীলীগের এইচএন আশিকুর রহমান প্রার্থী। অধ্যাপক গোলাম রব্বানীর পক্ষে মাঠে ভোটের জোয়ার দেখে সরকার ভয়ে ভীত হয়ে গোলাম রব্বানীর মনোনয়ন গ্রহন না করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেয়ার কারনেই তার মনোনয়ন গ্রহন করা হয় নি।
তিনি আরও জানান, এর আগে মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অধ্যাপক গোলাম রব্বানীর পক্ষে রাকিবুল ইসলাম নামের এক ব্যাক্তি মনোনয়ন পত্র জমা দিতে গেলে তাকে পুরোনো মামলায় গ্রেফতার জেল হাজতে পাঠায় পুলিশ।
প্রসঙ্গত: অধ্যাপক গোলাম রব্বানী হাজার ভোটে ২০১৪ সালে ১ লাখ ২৮ হাজার ভোটে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এ ব্যপারে রিটার্নিং কর্মকর্তা রংপুর ডিসি এনামুল হাবীব সাংবাদিকদের সাথে কোন কথা বলতে রাজি হন নি।