অনলাইন ডেস্ক ::
স্বাধীনতা পরবর্তী তালা-কলারোয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-১ আসনে বিগত ১০টি সংসদ নির্বাচনে ৪বার আওয়ামী লীগ, একবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি, দু’বার বিএনপি এবং জামাত, মুসলিম লীগ ও জাতীয় পাটি একবার করে নির্বাচনে জয় পায়। এরমধ্যে ১৯৮৬, ১৯৮৮, ১৯৯৬ এর ১৫ ফ্রেব্রুয়ারী এবং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন অধিকাংশ বিরোধী দল বর্জন করে। এই ৪টি নির্বাচনে ওয়ার্কার্স পাটি, বিএনপি, জাতীয় পাটি ও আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। নানা কারণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা-১ আসনের ভোটের সমীকরণ বেশ জটিল বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা।
মোটামুটি নিশ্চিত সাতক্ষীরা-১ আসনে মহাজোটের প্রার্থী হচ্ছেন ওয়ার্কার্স পাটির এড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ এমপি এবং ঐক্য ফ্রন্টের প্রার্থী হচ্ছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব। তবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ দিদার বখত দলীয় মনোনয়ন নিয়ে মাঠে রয়েছেন। সমঝোতা না হলে এ আসনে মহাজোটের পরিবর্তে ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে এড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে সৈয়দ দিদার বখত নির্বাচনের মাঠে থাকতে পারেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগ থেকে ৫জন বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সমঝোতা না হলে এদের মধ্য থেকেও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের মাঠে থেকে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে ভোটের সমীকরণ খুব সহজ হয়ে যেতে পারে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী সাবেক এমপি বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিবের পক্ষে।
ওয়ার্কার্স পাটির সাংগঠনিক ভিত্তি খুব মজবুত না হলেও গত ৫ বছর সংসদ সদস্য থাকার কারণে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একাংশের মধ্যে এড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের আর একাংশ এবার দলীয় যে কোন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে অটল রয়েছে। তাদের পক্ষে সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান, সাবেক এমপি বিএম নজরুল ইসলাম, জেলা কৃষক লীগের সভাপতি বিশ্বজিত সাধু, তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতা সরদার মুজিব মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এরমধ্যে গত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেও সরদার মুজিব বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এ আসনে জাসদের পক্ষে ওবায়দুস সুলতান বাবলু, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের এফএম আসাদুল হক, এনপিপির আব্দুর রশিদ, ন্যাপের হায়দার আলী শান্ত এবং ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের কমরেড আজিজুর রহমান মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এছাড়া সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিবের স্ত্রী শাহানারা পারভীনও বিকল্প প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। যদি কোন কারণে হাবিবুল ইসলাম হাবিব নির্বাচন করতে না পারেন তবে তার স্ত্রী শাহানারা পারভীন বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন সে ধরণের চিন্তা থেকে তাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। তবে এখন আর তেমন কোন শঙ্কা না থাকায় হাবিবুল ইসলাম হাবিবই এ আসনে বিএনপি জোটের একমাত্র প্রার্থী। সেক্ষেত্রে মহাজোটে একক প্রার্থী না হলে নির্বাচনী হিসাব বিএনপি জোটের পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে পর্যাবেক্ষক মহল মনে করেন।
১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন তালা-ডুমুরিয়া নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের সালাউদ্দিন ইউছুফ নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে মুসলিম লীগের খলিলুর রহমান ২৫ হাজার ৩৩৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের সৈয়দ কামাল বখত সাকি পেয়েছিলেন ২৫ হাজার ৭৯ ভোট। এছাড়া বিএনপির প্রদীপ মজুমদার পেয়েছিলেন ১৪ হাজার ৮৮০ ভোট।
বিএনপিসহ বেশকিছু দলের বর্জনের মুখে ১৯৮৬ সালের ৭ মে অনুষ্ঠিত তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের সৈয়দ কামাল বখত সাকি ৪৬ হাজার ২৬১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। জামাতের আব্দুর রাজ্জাক বিশ্বাস ৩৯ হাজার ৬২১ ভোট পান। জাতীয় পাটির সৈয়দ দিদার বখত ৩৪ হাজার ৬০৭ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন।
১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ অধিকাংশ দলের বর্জনের মুখে অনুষ্ঠিত চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পাটির সৈয়দ দিদার বখত এ আসনে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাসদ (রব) এর আব্দুস সালাম মোড়ল।
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তালা-কলারোয়ায় ৭২ হাজার ৬৯২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন জামাতের এড. আনসার আলী। আওয়ামী লীগের সৈয়দ কামাল বখত পেয়েছিলেন ৬৭ হাজার ৫৩ ভোট। বিএনপির আলতাফ হোসেন ৩৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং জাতীয় পাটির শেখ মতলুব হোসেন লিয়ন ৫ হাজার ৮৮৭ ভোট পান।
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী অধিকাংশ বিরোধী দলের বর্জনের মুখে অনুষ্ঠিত ষষ্ট জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩৫ হাজার ৯৮১ ভোট পেয়ে বিএনপির হাবিবুল ইসলাম হাবিব নির্বাচিত হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি বিদ্রোহী প্রার্থী বিএম আলতাফ হোসেন পান ১৬ হাজার ৬২৩ ভোট।
একই বছর ১২ জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সৈয়দ কামাল বখত ৭৬ হাজার ৭১৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। এ নির্বাচনে জামাতের এড. আনসার আলী ৫১ হাজার ৫৪ ভোট, জাতীয় পাটির সৈয়দ দিদার বখত ৫০ হাজার ৬৩০ ভোট, বিএনপির হাবিবুল ইসলাম হাবিব ৩৯ হাজার ৬১২ ভোট পান।
২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির হাবিবুল ইসলাম হাবিব ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৩০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ মুজিবুর রহমান ১ লাখ ১৪ হাজার ৫২৭ ভোট পান।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ মুজিবুর রহমান ১ লাখ ৬৮ হাজার ৫২৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। এ নির্বাচনে বিএনপির হাবিবুল ইসলাম হাবিব পান ১ লাখ ৪১ হাজার ৭৬৫ ভোট।
সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অধিকাংশ দলের বর্জনের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে ওয়ার্কার্স পাটির এড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ ৯২ হাজার ২০০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সরদার মুজিব পান ২৩ হাজার ৬১৩ ভোট।
Check Also
যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …