আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষন করবে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের ১২টি টিম পাঠাবে। এছাড়া স্থানীয়ভাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষনের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিলের যোগান দেবে দেশটি।
অন্যদিকে ইউরোপীয় দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা নির্বাচন পর্যবেক্ষনে নিজেরাই মাঠে থাকবেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নির্বাচন পর্যবেক্ষক না পাঠালেও দুই জন বিশেষজ্ঞ সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন। তারা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সাথে কথা বলছেন। এছাড়া স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের মাধ্যমেও ইইউ নির্বাচন সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করবে।
ঢাকায় যুুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা উইলিয়াম মুয়েলার রয়টার্সকে বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার জোর দিয়ে বলেছে তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এমন সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। যুক্তরাষ্ট্র এক ডজন পর্যবেক্ষক টিম পাঠাচ্ছে। প্রতিটি টিমে দু’জন করে পর্যবেক্ষক থাকবেন। তারা দেশের বেশির ভাগ এলাকা পরিদর্শনে যাবেন। একই সাথে স্থানীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের জন্য আমরা অর্থ বরাদ্দ দেবো। তিনি বলেন, ব্যাংককভিত্তিক এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশন ৩০ জনের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষকের টিম পাঠাবে।
মুয়েলার বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শনের বিষয়েও কথা বলেন। তিনি মনে করেন, এমনটা ঘটলে ভোটার উপস্থিতি কমে যেতে পারে। তার ভাষায়, আমরা এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। আমরা আশা করি জাতীয় নির্বাচনে একই ঘটনা দেখতে হবে না।
জার্মান রাষ্ট্রদূত পিটার ফাহরেনজোল্জ বলেছেন, নির্বাচনের ওপর আমরা গভীরভাবে নজর রাখব। আমি নিজেই পরিদর্শনে যাব।
ভারতীয় হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠানো পরিকল্পনা তাদের নেই। তবে ঢাকার কাছ থেকে অনুরোধ পেলে দিল্লি তা বিবেচনায় নেবে।
নির্বাচন পর্যবেক্ষক মিশন না পাঠানোর ব্যাপারে ঢাকায় ইইউ’র রাষ্ট্রদূত রিনসে তিরিঙ্ক বলেছেন, একটি পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক মিশন পাঠানো বিশাল কর্মযজ্ঞ। এতে বেশ বড় সংখ্যক পর্যবেক্ষক থাকেন। কয়েক মাস ধরে মিশন প্রস্তুতি নেয়। বাজেট বিবেচনায় এটি খুবই ব্যয়বহুল। এ কারণে বাংলাদেশের এবারের নির্বাচনে পর্যবেক্ষক মিশন না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইইউ। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ভাল স্থানীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা রয়েছেন। আসন্ন নির্বাচন পর্যবেক্ষনে তারা সম্ভবত চমৎকার ভূমিকা রাখবেন। পর্যবেক্ষক মিশন না পাঠালেও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের ঘটনাপ্রবাহের ওপর গভীর নজর রাখবে ইইউ।
২০১৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ইইউ পর্যবেক্ষক পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এ জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলোর বর্জনের মুখে শেষ পর্যন্ত একতরফা নির্বাচন হওয়ায় ইইউ পর্যবেক্ষক দল পাঠানো থেকে বিরত থাকে। এর আগে ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আয়োজিত নির্বাচনেও ইইউ পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে বাজেট বরাদ্দ দিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলোর বর্জনের মুখে এবং সামরিক বাহিনীর পরোক্ষ হস্তক্ষেপে নির্বাচন ভেস্তে যায়। এই দুটি অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে ইইউ পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করেছে। সর্বশেষ ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠিয়েছিল ইইউ।
২০১৪ সালের নির্বাচনে কেবলমাত্র ভারত ও ভুটান থেকে পর্যবেক্ষক এসেছিল। ইইউকে অনুসরন করে যুক্তরাষ্ট্র, কমনওয়েলসহ অন্যান্যরা বাংলাদেশে পর্যবেক্ষক পাঠানো থেকে বিরত ছিল। বিশ্বব্যাপী এই একতরফা নির্বাচনের ব্যাপক সমালোচনা হলেও ভারত ও ভুটানের পর্যবেক্ষকরা ইতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন।