মনোনয়ন বাতিলের মিছিল যারা

ক্রাইমর্বাতা রিপোর্ট: একাদশ সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের রেকর্ড সংখ্যক মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যাই বেশি। এলডিপি প্রধান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ জানিয়েছেন, ঐক্যফ্রন্টের ৮০ জনের মতো প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। মনোনয়ন বাতিল হওয়াদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ অনেক হেভিওয়েট প্রার্থীও রয়েছেন। সারা দেশের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তথ্য যাচাই বাছাই করে নির্বাচন কমিশন   জানিয়েছেন ৭৮৬ জনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে নানা কারণে।

এর মধ্যে ঋণ ও বিল খেলাপি, দলীয় মনোনয়নে ত্রুটি, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান থেকে পদত্যাগ না করা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থন তালিকা সঠিকভাবে না দেয়া। সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাদের এসব প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল করলেও তারা প্রার্থিতা ফিরে পেতে নির্বাচন কমিশনে আপিলের সুযোগ পাবেন। ঢাকা, বগুড়া ও মানিকগঞ্জের তিনটি আসনে বিএনপি মনোনীত সব প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় এ তিন আসনে দলটির কোনো প্রার্থীই এখন নেই।

এ ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যে তিনটি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন আদালতের দ-ের কারণে তা বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, বিএনপির আমান উল্লাহ আমান, মীর মোহাম্মদ নাছির, এম মোর্শেদ খান, আফরোজা আব্বাসের মনোনয়ন বাতিল করেছেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা। এ ছাড়া দলটির মূল প্রার্থীদের মধ্যে প্রায় অর্ধশতাধিক নেতার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে বলে দলটির নেতারা দাবি করেছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া নেতাদের একটি বড় অংশের মনোনয়ন বাতিল করেছেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা। ঢাকা-১৭ আসনে সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। গণফোরামের প্রার্থী ড. রেজা কিবরিয়ার মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে ক্রেডিট কার্ডের ফি বকেয়ার অভিযোগে। ঘটনাটি ষড়যন্ত্রমূলক বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

এদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, সরকারের নীলনকশা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন দলের মূল প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করেছে। কমিশন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী এবারের নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক প্রার্থী মনোনয়ন বাতিল করা হলো। এর আগে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। ইসির নিবন্ধিত ৪০ দলের মধ্যে ২৫টি দলই ওই নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ২০টি দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষ থেকে সে সময় ১১০৭ জন মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন। বাছাইয়ের পর ৮৪৭ জনের মনোনয়ন বৈধ হয়। বাতিল হয় ২৬০ জনের। এরপর ১৩৮টি আপিল আবেদনের শুনানি শেষে ৪২ জনের আপিল মঞ্জুর করে ইসি। চূড়ান্তভাবে ৮৮৯জন প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে বৈধ হন। এর আগে ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম সংসদে সর্বমোট মনোনয়ন দাখিলের সংখ্যা ছিল ২৪৫৩টি। নোয়াখালী-১ আসন ছাড়া (১৪টি মনোনয়ন জমা) ২৯৯ আসনে জমা পড়া মনোনয়নপত্রের সংখ্যা ছিল ২৪৩৯টি। চূড়ান্তভাবে ৪৪২টি বাতিল ও ৪২৫টি মনোনয়ন প্রত্যাহার করার পর মোট বৈধ মনোনয়নের সংখ্যা ছিল  ১৫৭২টি। দল ও জোটগুলোর প্রতীক বরাদ্দের সময় দ্বৈত প্রার্থী কমে যাওয়ায় ২৯৯ আসনে চূড়ান্ত মনোনীত প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫৩৮।

গতকাল সন্ধ্যায় সারা দেশের তথ্য সংগ্রহ করে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, নির্বাচনে বৈধ প্রার্থী হয়েছেন ২ হাজার ২৭৯জন। নির্বাচনের জন্য মোট মনোনয়নপত্র দাখিল হয়েছিল ৩ হাজার ৬৫টি। ইসি সূত্রে জানা গেছে, ৩৫টি আসনে কোনো প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়নি। ২৬৫টি আসনে এক বা একাধিক প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। সর্বোচ্চ বাতিল হয়েছে কুড়িগ্রাম-৪ আসনে। এখানে ১৩টি মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। জমা পড়েছিল ২৩টি মনোনয়নপত্র।  যেসব আসনে ৬টির বেশি মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে সেগুলো হলোÑ ঢাকা-১৭ আসনে ২৭টির মধ্যে ১১টি, ফরিদপুর-৪ আসনে ১৪টির মধ্যে ১০টি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে ২৭টির মধ্যে ১১টি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে ১৬টির মধ্যে ১০টি, কুমিল্লা-৩ আসনে ২৭টির মধ্যে ১০টি বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া বগুড়া-৭ আসনে ১৪টির মধ্যে ৭টি, রাজশাহী-১ আসনে ১২টি মধ্যে ৮টি, যশোর-২ আসনে ১৫টির মধ্যে ৭টি, ময়মনসিংহ-৩ আসনে ১৭টির মধ্যে ১০টি, কিশোরগঞ্জ-২ আসনে ১০টির মধ্যে ৭টি, ঢাকা-৮ আসনে ২২টির মধ্যে ৭টি বাতিল হয়েছে। কারো মনোনয়নপত্র বাতিল হয়নি এমন আসনের মধ্যে আছে ঠাকুরগাঁও-২, দিনাজপুর-৫, জয়পুরহাট-২, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩, নওগাঁ-২, নাটোর-৩, পাবনা-২ ও ৪, কুষ্টিয়া-৩, বাগেরহাট-৩, খুলনা-১, ৩, ৪, ৫, সাতক্ষীরা-৩, পটুয়াখালী-৪, ভোলা-৩, বরিশাল-৪ ও ৫, পিরোজপুর-২, টাঙ্গাইল-২, ৫, জামালপুর-২, নেত্রকোনা-৩, ঢাকা-১২ ও ১৩, নরসিংদী-৪, গোপালগঞ্জ-২, মৌলভীবাজার-৪, কুমিল্লা-৭, চাঁদপুর-৩, ফেনী-২, নোয়াখালী-৫, লক্ষ্মীপুর-৩, কক্সবাজার-১।

যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে তারা রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আগামী ৩ থেকে ৫ই  ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে আপিল করতে পারবেন। নির্বাচন কমিশন শুনানি করে আপিল নিষ্পত্তি করবে ৬ থেকে ৮ই ডিসেম্বর। এ ছাড়া যাদের আবেদন বৈধ হয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা নির্বাচন কমিশনে প্রমাণসহ আপিল করতে পারবেন। নির্বাচন কমিশনে তার শুনানিতে আইনজীবীর বক্তব্য প্রদানেও সুযোগ দেবে। ৯ই ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। ১০ই ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ করবে নির্বাচন কমিশন। আগামী ৩০শে ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

Check Also

ঘোনা ইউনিয়নে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন

আবুল হোসেন সদর প্রতিনিধি : ঘোনা ইউনিয়নে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।