ক্রাইমবার্তা রিপোট: আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনের দীর্ঘ ১০ বছরে শত নির্যাতন ও নিপীড়নের মধ্যেও নিরাপদে থাকা কওমী মাদ্রাসা বোর্ডের নেতা মুফতি ওয়াক্কাস একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক পাওয়ায় ক্ষোভের আগুনে পুড়ছে যশোর-৫ (মনিরামপুর) নির্বাচনী এলাকার মামলায় জর্জরিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত জামায়াত বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।
গত রোববার মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পর প্রতীক প্রাপ্তির বিষয়টি জানাজানি হয়ে যাওয়ায় উপজেলার সর্বত্র এই ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার হাটবাজার ও চায়ের দোকান হতে শুরু করে সর্বত্র আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে বিষয়টি। ধানের শীষের মনোনীত প্রার্থী নিয়ে সকলেই প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করছে।
মুফতি ওয়াক্কাসের প্রার্থীতা নিশ্চিত হলে বিএনপি জামায়াতের অত্যন্ত সম্ভবনাময় এই আসনটি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানা গেছে।
যশোরের মনিরামপুর উপজেলা কার্যত জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। বিগত আন্দোলন সংগ্রামে দলটির নেতাকর্মীরা সারাদেশে নজর কাড়ে। যে কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের টার্গেটে পরিণত হয় জামায়াতের নেতাকর্মীরা।
এখানকার এমন কোন জামায়াত নেতাকর্মী ও সমর্থক নেই যারা একাধিক মিথ্যা ও গায়েবি মামলার আসামী হয়নি। স্ত্রী, পরিবার-পরিজন নিয়ে বছরের পর বছর পালিয়ে বেড়াতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। পাঁচ শতাধিক মামলায় প্রায় ৫০ হাজার আসামী ঘরে থাকতে পারেন না। দলটির একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির নামে ৪৫ টি মামলা হয়েছে। অনেকে চাকুরিচ্যুত হয়েছেন। অনেকেই নিহত হয়েছেন কথিত ক্রসফায়ারে।
অপরদিকে, এবারের নির্বচানে ধানের শীষ প্রতীক পাওয়া মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস আওয়ামী দুঃশাসনের মধ্যেও ছিলেন সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং তিনি কোনো হামলা বা মামলার শিকার হননি। তিনি কাগজে কলমে চারদলীয় জোটের শরীকদলের নেতা হলেও কার্যত কওমী মাদ্রসা বোর্ডের সহ-সভাপতি।
আর এই কারণেই কখনই তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের বিপক্ষে ছিলেন না। বরং তাদের সহায়ক হিসেবে কাজ করেন। এমনকি গত নভেম্বর মাসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত কওমী মাদ্রসার শোকরানা মাহফিলে তিনি সমগ্র জেলা থেকে অংশগ্রহণের জন্য অনেকগুলো বাসে করে কওমী ছাত্রদের ঢাকায় নিয়ে গিয়েছিলেন।
এদিকে আওয়ামী লীগ পক্ষের লোক হওয়ায় বিগত ১০ বছরে কোন মামলা-হয়রানি তাকে স্পর্শ করেনি বরং পুলিশ পাহারায় তিনি অসংখ্য মাহফিল করেছেন। মামলায় জর্জরিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতাদের বাদ দিয়ে এমন একজন আওয়ামী সুবিধাভোগী ব্যক্তি হঠাৎ ধানের শীষ প্রতীক পেয়েছেন। এটা জামায়াত বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ ভোটাররা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না।
মনোনয়নপত্র বাছায়ের পর তার প্রতীক প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর সাধারণ মানুষও ক্ষোভের আগুনে পুড়ছেন। মনিরামপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাট বাজারে খোজ নিয়ে জানা গেছে, গত দুদিনে সেখানকার প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাসের ধানের শীষ প্রতীক পাওয়ার বিষয়টি।
মনিরামপুরে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াত ও শিবির খুবই শক্তিশালী সুসংগঠিত। বিগত উপজেলা নির্বাচনে সকল দলের প্রার্থী থাকার পরও জামায়াত মনোনীত প্রার্থী সুপ্রীমকোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী গাজী এনামুল হক সামান্য ভোটে পরাজিত হন। সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচনে গাজী এনামুলের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার। অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী পেয়েছিলেন মাত্র ১৫ হাজার ভোট।
এলাকার ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই আসনটিতে কার্যত জামায়াত বা বিএনপির প্রার্থীকে বাদ দিয়ে অন্য কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন হলে আসনটি নিশ্চিত বিএনপি জোটের হাত থেকে বেরিয়ে যেতে পারে।