এম, এ, আলীম (যশোর প্রতিনিধি): যশোর শহরের মুড়লি জোড়া মন্দির এলাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলিশের সামনেই ধানের শীষের সংসদ সদস্য প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের ওপর হামলা ও তাকে ছুরি মেরে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা। অবশ্য বিএনপি নেতাকর্মীরা তাকে ঘিরে রাখায় সৌভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। তবে তিনি রক্ষা পেলেও সন্ত্রাসীদের বেপরোয়া হামলায় নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুনীর আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু ও চারজন সাংবাদিকসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। সন্ত্রাসীরা সময় টেলিভিশনের সাংবাদিক জুয়েল মৃধার ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে ভেঙে ফেলেছে। প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক এসহান উদ দৌলা মিথুনকে মারধর ও তার ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়। সেখানে ধানের শীষের নির্বাচনী ক্যাম্প ও কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। সন্ত্রাসীরা অস্ত্র নিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্য প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, ধানের শীষের নেতাকর্মী ও সাংবাদিকদের ওপর সন্ত্রাসীদের দফায় দফায় হামলা চালিয়ে মারধর করলেও তাদের আটকে কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় হতবাক হয়েছেন মানুষ।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিকেলে শহরের মুড়লি জোড়া মন্দির কাব এলাকায় ধানের শীষের নির্বাচনী ক্যাম্প উদ্বোধনের কথা ছিলো সংসদ সদস্য প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের। এ জন্য নেতাকর্মীরা সেখানে জড়ো হতে শুরু করেন। বিকেল ৩ টা ৪০ মিনিটের দিকে ক্ষমতাসীন দলের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সেখানে আচমকা হামলা চালিয়ে নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর ও ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। নীলগঞ্জ এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী যুবতী (সিটি কলেজপাড়ায়) গণধর্ষণ মামলার অন্যতম আসামি টাক ইব্রাহিম ও বকচরের ট্যারা সুজনের নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকে করে আসা সন্ত্রাসীরা এই হামলা চালায়। তাদের সাথে ছিলো বকচর চৌধুরীপাড়ার টাক জাফর, জুম্মান, সাহেব, জুয়েল, অন্তু, রানা, সোহেল ও সুমন।
সন্ত্রাসীরা এ সময় সময় টেলিভিশনের সাংবাদিক জুয়েল মৃধা ও ক্যামেরাপার্সন আবুল কালাম আজাদকে বেধড়ক মারধর করে। তাদের কাছ থেকে ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে ভাঙচুর করা হয়। সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে হকিস্টিক, ক্রিকেটের উইকেট ও কাঠ দিয়ে উপস্থিত ধানের শীষের কর্মীদের বেধড়ক মারধর করে। তাদের হাতে এ সময় আহত হন যুবদলের আব্দুর রউফ ও ছাত্রদলের সাজিদ হোসেন মারুফসহ কয়েকজন। সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবের সময় ঘটনাস্থলে ফোর্স নিয়ে উপস্থিত ছিলেন কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশের এসআই শেখ হাবিবুর রহমান। তাদের সামনেই তাণ্ডব চলতে থাকে। কিন্তু আক্রান্তরা বারবার পুলিশের সাহায্য চাইলেও তারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সন্ত্রাসীদের তাণ্ডব দেখলেও এগিয়ে যাননি। সূত্র জানায়, সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবের পর এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আশপাশ এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে চরম আতঙ্ক দেখা যায়। খবর পেয়ে বিএনপির সংসদ সদস্য প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিত দ্রুত নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এ সময় সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্র উঁচিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা চালায়। তবে বিএনপি নেতাকর্মীরা তাকে ঘিরে রাখার কারণে সৌভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে রক্ষা পান। পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ দেখে বিএনপি প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিত মোবাইল ফোনে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশের ওসি অপূর্ব হাসানকে ঘটনাটি অবহিত করেন। এ খবর পেয়ে ওসি অপূর্ব হাসান দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতিতেই সন্ত্রাসীরা প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয়। তারা প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক এহসান উদ দৌলা মিথুনকে বেধড়ক মারধর করে। তার ক্যামেরাও ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়। দৈনিক লোকসমাজের ফটো সাংবাদিক এম আর মিলনকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। লাঠি দিয়ে তার মাথায় আঘাত করার কারণে তিনি গুরুতর আহত হয়েছেন। তার ক্যামেরাও ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালায় সন্ত্রাসীরা। সাবেক পৌর মেয়র ও নগর বিএনপির সভাপতি মারুফুল ইসলামকে ধাওয়া করে এবং সাধারণ সম্পাদক মুনীর আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চুকে লাঠি ও হকিস্টিক দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। বিএনপি নেতৃবৃন্দ জানান, সন্ত্রাসীদের হামলায় সাংবাদিকসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। সূত্র জানায়, ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা ধানের শীষের কর্মীদের বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। যুবদলের জুয়েলকে হত্যার চেষ্টা এবং তার কাছ থেকে দামি একটি মোবাইল ফোন সেট কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলে তারা। এছাড়া আরো কয়েকজনের কাছ থেকে মোবাইল ফোন সেট কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলা হয়েছে। ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি শাহাজানের বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে একই সন্ত্রাসীরা। এক পর্যায়ে বিভিন্ন স্থান থেকে খবর পেয়ে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এ সময় সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুলিশের সামনে দিয়ে চলে যায়। কিন্তু পুলিশ তাদের আটকের কোন পদক্ষেপই নেয়নি বলে জানান বি এন পির নেত্রী বৃন্দ।