ক্রাইমবার্তা ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচনে ব্যালট পেপার ছাপানোর কথা বলছেন, সেটি তো আপনাদের কাজ। আপনাদের সেই ক্ষমতা আছে, আপনারাই সেটা করবেন। ব্যালট আপনারাই ছাপাবেন, আর সে কথা আগাম বলে দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।’
বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসন কার্যালয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, নিজেরাই আগাম ব্যালট পেপার ছাপানোর কথা বলছেন। এটাই প্রধানমন্ত্রীর ভালো গুণ, তিনি যা করবেন, তা আগে বলে দেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যে আশার আলো দেখা দিয়েছিল, সেটি জনগণ তিনটি নির্বাচনে গ্রহণ করেছিল। কিন্তু ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বুঝতে পারল, জনগণের ভালোবাসার আস্থা তারা ধরে রাখতে পারবে না। তখনই একটি রায়ের মাধ্যমে সেটি বাতিল করে দিল।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এরই মধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। আমরা সব সময় মনে করেছি, এ নির্বাচনের মাধ্যমে জাতি তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে। একটি দিন তারা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য।
প্রতিনিয়ত সরকার নতুন নতুন চক্রান্ত করছে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগে থেকেই এ নিবাচন নিয়ে যে মতামত প্রকাশ করেছি, সব একে একে ফুটে উঠেছে।
তিনি বলেন, আমরা গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। যতই ধানের শীষের জোয়ার উঠছে, ততই সরকার নতুন নতুন চক্রান্ত করছে। আমাদের অনেক প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করেছে। এ ক্ষেত্রে সরকার ব্যবহার করছে আদালতকে। কিন্তু এর পরও আমরা দমে যাইনি।
তিনি বলেন, অথচ আদালতের রায়ে মতামত ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিধান রাখা যেতে পারে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সেটি পাশ কাটিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে দিল। এমনকি দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যেতে পারে বলে আদালত যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছিলেন, সেটিও পাশ কাটিয়ে গেছে সরকার।
বিএনপির এই নেতা বলেন, সরকার তার মতো করে সবকিছু নিজের মতো করে গুছিয়ে নিয়ে খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে বলে গেছেন, তোমরা জাতীয় ঐক্য গঠন করবে, সব রাজনৈতিক দল-মত-ধর্ম-বর্ণের মানুষদের নিয়ে। এবং তোমরা নির্বাচনে অংশ নেবে। আমরা তার কথা পালন করেছি, জাতীয় ঐক্য গঠন করেছি, নির্বাচনে অংশ নিয়েছি।
৩০ ডিসেম্বর সবাইকে ধানের শীষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এ নির্বাচন এরই মাঝে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হবে, আমরা কি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে থাকব নাকি একনায়কের দেশে থাকবে। আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার, কথা বলার অধিকার থাকবে কি থাকবে না, তা এ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণিত হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর সরকার গায়েবি মামলা দেওয়া শুরু করে। এখন আবার মামলা দিচ্ছে নতুন করে। এমনকি আমরা যখন সংলাপে গেলাম, তখন প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন, তফসিল ঘোষণার পর আর কাউকে গ্রেফতার করা হবে না। কিন্তু তিনি তার কথা রাখেননি।
তিনি বলেন, আমাদের ওপর এত নির্যাতনের পরও বলতে পারেন, আমরা কীভাবে টিকে আছি? আমরা টিকে আছি শুধু মানুষের ভালোবাসায়, মানুষের সমর্থনে। আমরা যেখানে যাচ্ছি, সেখানেই মানুষ ছুটে আসছেন। আমরা মানুষের ভালোবাসার এ শক্তির ওপর টিকে আছি।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের শেষ নেই। এর মাঝে আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াব, জানি না। আমরা আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। আর নির্বাচন কমিশনের কথা তো আগেই বলেছি, নির্বাচন কমিশন ঠুঁটো জগন্নাথ। তাদের কোনো ক্ষমতা নেই। দুই দিন আগেও আমরা গিয়েছি, তারা কোনো কথার উত্তর দেয়নি, শুধু চুপ করে ছিলেন।
আমরা জনগণকে জাগিয়ে তুলতে চেষ্টা করছি উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা চেষ্টা করছি জনগণকে জাগিয়ে তুলতে। কারণ এ রাষ্ট্র তাদের, তাদের সব অন্যায়-অবিচার-অত্যাচারের বিরুদ্ধে জেগে উঠতে হবে।
তিনি বলেন, নিজেদের অধিকার আদায় করতে হবে। আমার বিশ্বাস, এ লড়াইয়ে আমরা জয়ী হব। কারণ, মানুষের কথা, তাদের চোখে যে বিশ্বাস দেখেছি তাতে আমাদের বিজয় আসবে।