টি ২০ খেলেই উইন্ডিজকে বাংলাদেশের জবাব

বৃহস্পতিবার মিরপুরে সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচে একাই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে গুঁড়িয়ে দিয়ে দারুণভাবেই খেদ মেটালেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। সাকিবের অবিস্মরণীয় অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩৬ রানে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতা ফেরাল স্বাগতিকরা।

আগের ম্যাচে বাংলাদেশের বোলারদের পিটিয়ে ছাতু বানিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা। কাল ব্যাটে-বলে ঝড় তুলে সাকিবরা দেখিয়ে দিলেন বাংলাদেশও টি ২০ খেলতে পারে।

ব্যাট হাতে ২৬ বলে অপরাজিত ৪২ রানের টর্নেডো ইনিংসের পর ক্যারিয়ারসেরা টি ২০ বোলিংয়ে মাত্র ২০ রানে পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব একাই গড়ে দিয়েছেন ব্যবধান। সাকিবময় ম্যাচে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে চার উইকেটে ২১১ রানের পাহার গড়েছিল বাংলাদেশ।

টি ২০তে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এবং মিরপুরে যে কোনো দল মিলিয়েই সর্বোচ্চ স্কোর। ৩৪ বলে ৬০ রানের বিস্ফোরক ইনিংসে শুরুতেই ম্যাচের সুর বেঁধে দিয়েছিলেন লিটন দাস। তার গড়ে দেয়া ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে টর্নেডো ব্যাটিংয়ে শেষ সাত ওভারে ৯১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ।

মাত্র ২১ বলে ৪৩ রানে অপরাজিত ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে সাকিবের স্পিন-বিষে নীল হয়ে ১৯.২ ওভারে ১৭৫ রানে গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম ১০ ওভার সমানতালে লড়াই করলেও রান রেট বাড়তে থাকায় নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে অনেক আগেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় ক্যারিবীয়রা। ওয়ানডে সিরিজ থেকে আগুনে ফর্মে থাকা উইন্ডিজ ওপেনার শাই হোপ কালও ঝড় তোলার আভাস দিয়ে ১৯ বলে ৩৬ রানে থামেন। ৩৪ বলে সর্বোচ্চ ৫০ রান করেন রভম্যান পাওয়েল। এছাড়া শেষদিকে ১৬ বলে ২৯ করেন কিমো পল। নিকোলাস পুরানকে ফিরিয়ে ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করা সাকিব পরে একে একে শিকার বানিয়েছেন হেটমায়ার, ড্যারেন ব্রাভো, কার্লোস ব্রাফেট ও অ্যালেনকে। টি ২০তে এই প্রথম পাঁচ উইকেট পেলেন সাকিব। এছাড়া মোস্তাফিজুর রহমান দুটি এবং আবু হায়দার, মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহ নিয়েছেন একটি করে উইকেট। আগামীকাল একই ভেন্যুতে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ। আরেকটি সিরিজ জয়ের মধ্য দিয়ে বছর শেষের হাতছানি বাংলাদেশের সামনে।বাংলাদেশ প্রথম উইকেট হারায় তামিম ইকবালের। শুরু থেকেই এ বাঁ-হাতি ওপেনার ছিলেন অস্বস্তিতে। শেষমেশ শেলডন কটরেলকে শর্ট মিডউইকেটে ক্যাচ দেন ১৬ বলে ১৫ রান করা তামিম। বোলার ছিলেন অ্যালেন। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ এরপরই লিটন দাসের মাঝে যেন তামিমকে আবিষ্কার করে। উদ্বোধনী জুটিকে হারিয়ে লিটন মারমুখী ব্যাটিংয়ে পারদর্শিতা দেখাতে কোনো কার্পণ্য করেননি। উইন্ডিজ অধিনায়ক কার্লোস ব্রাফেটকে মিড-অফ দিয়ে চার মেরে লিটন হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মাত্র ২৬ বলে। টি ২০ ক্যারিয়ারে লিটনের এটি দ্বিতীয় ফিফটি। এর আগে তিনি ৬১ রান করেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার লডারহিলে।

সিলেটে প্রথম টি ২০তে মাত্র পাঁচ রানে আউট হওয়া সৌম্য সরকার ২২ বলে ৩২ রান করে কটরেলের শিকারে পরিণত হন। এক্সট্রা কভার দিয়ে সীমানার বাইরে বল পাঠাতে চেয়েছিলেন সৌম্য। ব্রাফেটের অবিশ্বাস্য ক্যাচ সৌম্যকে থামিয়ে দেয়। ১২তম ওভারের প্রথম বলে কটরেল সৌম্যকে ফিরিয়ে দেয়ার পর একই ওভারের শেষ বলে লিটনকে বোল্ড করেন। ৩৪ বলে ৬০ রান করা লিটনের ঝড়ো ইনিংসের ইতি ঘটে ছয়টি চার ও চারটি ছয়ের মনোমুগ্ধকর মারে।

পরের ওভারের শেষ বলে মুশফিকুর রহিমকে ফেরান থমাস। ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ নেন অ্যালেন। প্রথম টি ২০তে তিন বলে পাঁচ রান করা মুশফিক এক রান করেন তিন বল খেলে। শেষ সাত ওভারে ৯১ রানের জুটি গড়ে অবিচ্ছিন্ন থাকেন সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ। এ দু’জনের ফিফটি ছুঁই ছুঁই ইনিংসে বাংলাদেশ টি ২০তে নিজেদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ ২১১/৪ করে। ক্ষুদে ফরম্যাটে ২১৫/৫ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। এ বছর ১০ মার্চ কলম্বোয় শ্রীলংকার বিপক্ষে। তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৯৩/৫ শ্রীলংকার বিপক্ষে এ বছর ১৫ ফেব্র“য়ারি। অর্থাৎ, টি ২০তে নিজেদের তিনটি বড় সংগ্রহই বাংলাদেশে পেয়েছে ২০১৮ সালে।

সাকিব মাত্র ২৬ বলে ৪২ (পাঁচটি চার ও একটি ছয়) এবং মাহমুদউল্লাহ ২১ বলে ৪৩ (সাতটি চার) রানে অপরাজিত থাকেন। কটরেল দুটি এবং থমাস ও অ্যালেন একটি করে উইকেট নেন।

Check Also

সাতক্ষীরায় পুত্রবধূর হাতে নির্যাতিত সেই স্কুলশিক্ষক মারা গেছেন

ক্রাইমবাতা রিপোট, সাতক্ষীরা:   ছেলে ও পুত্রবধূর হাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশতলা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।