সাতক্ষীরায় ধানের শীর্ষের ২ প্রার্থী কারাগারে: একজন এলাকা ছাড়া: মাঠ দখল নৌকার: ভোটাররা তাকিয়ে আছে সেনাবাহিনীর দিকে

ক্রাইমবার্তা রিপোট: সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় কঠিন চাপের মুখে বিএনপি জামায়াত মনোনিত ধানের শীষের প্রাথী ও ভোটারা। নির্বাচনি মাঠে কোন ভাবে দাড়াতে দিচ্ছে তা তাদের। এমনকি ধানের শীর্ষের প্রাথীদেরও গ্রেফতার করা হচ্ছে। ধানের শীষের প্রার্থীদের অভিযোগ জেলাতে গণগ্রেফতার করা হচ্ছে। ধানের শীষের নির্বাচনি এজেন্টেরদের গণহারে গ্রেফতারেরপাশা পাশি বাড়ি থাকতে দিচ্ছে না পুলিশ ও সরকার দলীয় লোকজন । জেলা চলছে নির্বাচনি আমেজ নেই বলে ভোটারদের দাবী। কয়েক জন ভোটারের সাথে কথা হয়। একজন বয়বৃদ্ধ ভোটার শহরে আব্বাস। ৯০ বছর বয়সে তিনি এমন ভোট আর দেখিনি। যে ভোটে বিরোধী পক্ষকে সভা সমাবেশ করতে দেয়া হয়না। এমনকি তিনি কোথাও ধানের শীষের পোষ্টার ও দেখতে পাচ্ছে না।
একন নৌকার সমর্থক আবু বক্করে সাথে কথা হয় । তিনি জানান, নির্বাচনি আমেজ নেই। মনে হচ্ছে নির্বাচনি মাঠে তারা ছাড়া আর কেউ নেই। তিনিও নির্বাচনি আমেজ দেখতে পাচ্ছে না।

আসান্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরার ৪টি আসনের মধ্যে ২০ দলীয় জোটে জামায়াত মনোনিত দুই জন প্রার্থী বর্তমানে কারাগারে। তারা হলেন, সাতক্ষীরা সদর-২ আসনে জামায়াতের মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক ও শ্যামনগর -৪ আসনে মুক্তি যুদ্ধা গাজী নজরুল ইসলাম । অন্যদিকে সাতক্ষীরা-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী হাবিবুল ইসলাম হাবিকে নির্বাচনি মাঠ থেকে দূরে রাখতে তার উপর সরকার বাহিনি হামলা চালিয়ে উল্টা তাকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছে। এতে তিনিও এলাকা ছাড়া। সাতক্ষীরা ৩- আশাশুনিতে বিএনপি প্রার্থী ডা.শহিদুল হকের নির্বাচনি অফিস থেকে ৫০ জন নেতাকর্মীকে আটক করায় তিনি নেতা কর্মী শূন্য হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।
ঈুলিশ বিভিন্ন স্থানে ধানের শীর্ষের ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে নিষেধ করছে। হুমকী-ধামকি অব্যাহত রেখেছে বলে বিএপিজামায়াতের অভিযোগ।
এমন অবস্থায় পুলিশ,বিজিবি,র‌্যাবসহ সরকার দলীয় লোজ জনের উপর আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। ভোটরা অবাধ,সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট অনুষ্ঠানের জন্য সেনাবাহিনীর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। কয়েকজন ভোটারা জানান,এখনো সেনাবাহিনীর প্রতি মানুষের আস্থা আছে। তারা নির্বাচনি কার্যক্রমে সহযোগীতা করলে মানুষ ভোট কেন্দ্রে যেয়ে ভোট দিবে।

এদিকে সাতক্ষীরা জেলাতে ফুরফুরে মেজাজে মাঠ দখল ও প্রচার-প্রচারনায় তুঙ্গে আওয়ামীলীগ। চারটি আসনেই আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীরা ইতিমধ্যে মান- অভিমান ভুলে এক সাথে মাঠে নেমেছেন। সমান তালে চালিয়ে যাচ্ছে গনসংযোগ, পথসভা আর মাইকিং। তাদের পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে শহর, গ্রাম, হাট-বাজার, রাস্তাঘাট । আর প্রতিটি আসনে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থীদের প্রতিক বরদ্ধ হওয়ার পরে পেষ্টার মাইকিং শুরু করলে সরকার দলীয় ক্যাডার পোষ্টার ছিড়ে ফেলে মাইংকিন করলে মারপিট করে ভাংচুরকরে প্রাচার গাড়ী । এমনকি সাতক্ষীরার সদর থানার পুলিশ ও ডিবি পুলিশ বিভিন্ন স্থানে পোষ্টার ছিড়েছে বলে নাম প্রকাশের শর্তে এলাকাবাসী জানিয়েছে। মহাজোটের শরীক দল জাতীয় পাটি ও বিকল্পধারা মাঠে টিকে থাকতে হিমসিম খাচ্ছেন । ইতি মধ্যে অভিযোগ করেছেন আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীরা তাদের প্রচার মাইক ভাংচুর করেছে, ব্যানার পোষ্টার ছিড়ে দিচ্ছে । মারপিট করেছে তাদের নেতা কর্মীদের । যার ফলে মাঠে টিকে আছে লড়াই করে। ইতোমধ্যে ২০ দলীয়ে জোটের প্রার্থীরা জেলা রির্টানিং অফিসার কে বারবার অভিয়োগ দিয়ে ও প্রতিকার পাইনি বলে জানিয়েছেন এক প্রার্থী ।
সাতক্ষীরা-(তালা-কলারোয়া)১ আসনে নৌকার প্রতীকের প্রাথী ওয়ার্কাস পাটির কেন্দ্রীয় নেতা এড মোস্তফা লৎফুল্লাহ, জাতীয় পাটির সৈয়দ দিদার বখত, ও বিএনপির প্রার্থী কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব। নৌকা প্রতীক নিয়ে এড মোস্তফা লৎফুল্লাহ জোরে সোরে প্রচার-প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছে । সর্বত্র রয়েছে তাদের ব্যানার পোষ্টার । ঠিকঠাক মত চলছে মাইকিং, গনসংযোগ আর পথ সভা। হাবিবুল ইসলাম হাবিব নির্বাচনী প্রচার কালে গত শুক্রবার কলারোয়া উপজেলার সদরের হাইস্কুল মাঠে পৌছালে সরকার দলীয় ক্যাডাররা তাদের উপর ব্যপক মারপিট করে । এসময় ২০ দলীয় জোটের ১০/১২ কর্মী আহত হয়। পুলিশ বাড়ী থেকে বিএনপি নেতা মুনসুর আলিকে তুলে এনে ২০ দলীয় জোট প্রার্থী হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৪৬ বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেন । এ মামলায় ১৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর পর নির্বাচনী মাঠে কিছুটা চুপসে যায় ২০ দলীয় জোটের কমী সামর্থকরা । এর পর থেকে গ্রেফতার এড়াতে ২০ দলীয় জোট প্রার্থী আতœগোপন করেন । জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে সৈয়দ দিদার বখত প্রচার-প্রচারনা করতে হিমসিম খাচ্ছেন। ব্যানার পোষ্টার ছিড়ে দিচ্ছে, প্রচার মাইক ভাংচুর করছে। তবে মাঠে দখলে নিতে চেষ্টা করছেন তারা। সাতক্ষীরা-(সদর)২ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি। দলের নেতা কর্মীরা ্ঐক্য বদ্ধভাবে কাজ করছে তার জন্য। সারা সাতক্ষীরা জুড়ে আছে ব্যানার পোষ্টার। করছে গনসংযোগও পথসভা । ছুটছেন একপ্রান্ত থেকে অপার প্রান্ত পর্যন্ত । এই আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী শেখ মাতলুব হোসেন লিয়ন প্রেসক্লাবে এসে বলেন, নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে মাইকিং করা হচ্ছে, বের করা হচ্ছে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা। এই আসনের ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক৩৮ টি মামলায় রয়েছেন কারাগারে। সব মামলায় জামিন হলেও একেরপর মামলা দিয়ে তাকে জেল থেকে বের হতে দিচ্ছেনা বলে তার স্ত্রী রিজিয়া খাতুন সংবাদ সম্মেলন করেছেন । জোট প্রার্থী মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক এর স্ত্রী রিজিয়া খাতুন সংবাদ সম্মেলন করলে সেই রাতেই পুলিশ তার বাড়ীতে গিয়ে হামলা ও হুমকী দিয়ে আসে। তবে প্রতিক বরদ্ধ হলে প্রথম দিকে এই আসনে কিছু কিছু স্থানে ধানের শীষের পোষ্টারও ছিল পরে পুলিশ ও সরকার দলীয় ক্যাডারা ছিড়ে ফেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
সাতক্ষীরা-(আশাশুনি -দেবহাটা ) ৩ আসনে মহাজোটের প্রার্থী সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডা. আফম রুহুল হক। অপার দিকে ২০ দর্লীয় প্রার্থী বিএনপির ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন ডা. শহিদুল আলম। নৌকার প্রার্থী সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডা. আফম রুহুল হক নেতা কর্মীদের সাথে নিয়ে মাঠে আছেন। তার সাথে কাজ করছেন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আ.লীগের নেতারা। নিজ দলীয় নেতা কর্মীরা মান অভিমান ভূলে সবাই এক সাথে কাজ করছেন। এলাকায় তার উন্নয়নের কথা তুলে ধরে আবার ও নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন তারা । আওয়ামী লীগ দলীয় কয়েকজন চেয়ারম্যান ও পুলিশ এসব তৎপরতা চালাচ্ছেন।
অপার দিকে বিএনপি দলীয় প্রার্থী কেন্দ্রিয় ড্যাব নেতা ডা. শহিদুল আলম নির্বাচনী প্রচারে বাধাগ্রস্থ হচ্ছেন। গত মঙ্গলবার রাতে তার নির্বাচনী কার্যলয় অগত নেতা কর্মীদের নিয়ে পলিং এজেন্ট নিয়োগ ও নির্বাচনী প্রচারে ব্যপারে আলোচনা চলছিল । এসময় কালীগঞ্জ ও দেবহাটা থানার পুলিশ সেখানে গিয়ে ঘেরাও করে আশাশুনি উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও দেবহাটা বিএনপির সভাপতি সহ ৫০ নেতাকর্মীকে আটক করে । তাদেরকে আশাশুনি উপজেলার একটি নাশকতার মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেল হাজতে পাঠায়। এ দিকে তার দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। প্রচার মাইক ভেঙ্গে চুরে দেওয়া হচ্ছে। ডা. শহিদুল আলম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন। পুলিশ বাড়ি বাড়ি যেয়ে বিএনপি কর্মীদের খোঁজ নিয়ে আতংক সৃষ্টি করছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সাতক্ষীরা (শ্যামনগর-কালিগঞ্জ) ৪ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী এস এম জগলুল হায়দার, ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী সাবেক সাংসদ গাজী নজরুল, জাতীয় পাটির ছাত্তার মোড়ল, বিকল্পধারার এইচ,এম গোলাম রেজা । নৌকা প্রতীক নিয়ে এস এম জগলুল হায়দার নেতা কর্মীদের সাথে নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন । ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী গাজী নজরুল রয়েছে কারাগারে। মাঠে তার নেতা কর্মীরা দাড়াতে পারছে না। পুলিশ বাড়ীতে বাড়ীতে হুমকী ধামকী গ্রেফতার করছে ।এই আসনে মহাজোটের শরিক বিকল্পধারার কুলা প্রতিকের প্রার্থী এইচ এম গোলাম রেজা। নির্বাচনী প্রচারে বাঁধা, প্রচারগাড়ি, ভাংচুর ও নেতাকর্মীদের উপর হামলার প্রতিবাদে তিনি সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এছাড়া পোস্টার ছেড়া ও নির্বাচনী প্রচার মাইক খুলে নিয়ে হুমকি দিচ্ছে জগলুল হায়দার ও তার লোকজন। ২০ দলীয় জোট প্রার্থী সাবেক সাংসদ গাজী নজরুল ইসলামের স্ত্রী মাকসুদা বেগম ইতোমধ্যে তার বাড়ীতে এক সংবাদ সন্মেলনে বলেন , সরকারী দলের নেতা কর্মীদের অত্যাচার , মারপিট , হুমকীতে আছেই সেই সাথে পুলিশ দ্বিমুখী আচরন কে নির্বাচনী কার্যক্রম ব্যহত করছে । একই সাথে তিনি তার স্বামী অবিলম্বে মুক্তির দাবী করেন।
জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শেখ আজহার হোসেন বলেন, সাতক্ষীরার চারটি আসনের মধ্যে সাতক্ষীরা-১, সাতক্ষীরা-২ ও সাতক্ষীরা-৪ আসনে জাতীয় পার্টি দলীয় প্রার্থী দিয়েছে। এসব আসনে মহাজোটের একক প্রার্থী নেই। সাতক্ষীরা-১ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সৈয়দ দিদার বখতের প্রচার মাইক ভেঙে দেওয়া হয়েছে। সাতক্ষীরা-৪ আসনেও জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাত্তার মোড়লের প্রচার মাইক ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও জাতীয় পার্টির প্রচারে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেন তিনি।
ভোটারদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, ভোট যদি সুষ্ঠ হয় তবে জনগন তার পছন্দের প্রার্থীকে বেচে নেবে । সে ক্ষেত্রে ভোটের ফলাফল হবে সঠিক। একাধিক ভোটার জানায় পরিস্থিতি দেখে শুনে ভোট দেবেন তারা ।

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।