ক্রাইমবার্তা রিপোট: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ বলেছেন, র্যাবের মহাপরিচালক দুবাই থেকে আসা টাকার মনগড়া কুৎসামূলক কাহিনি রচনা করেছেন।
তিনি বলেন, মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য আওয়ামী নেতারা এই বানোয়াট কাহিনি নিজেরা প্রচার না করে র্যাবের মহাপরিচালকের মুখ দিয়ে বলাচ্ছেন।
বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, একজন প্রার্থী কি জানেন না যে, নির্বাচনে রঙিন পোস্টার ব্যবহার করা যায় না। তা হলে ওই রঙিন পোস্টার র্যাবেরই বানানো। বান্ডিল বান্ডিল টাকা-এগুলো রাষ্ট্রেরই টাকা। নাটক করার জন্যই সরকার এ টাকাগুলো র্যাবের কাছে সরবরাহ করেছে কল্পকাহিনি তৈরির জন্য। আপনি যাদের গ্রেফতার দেখিয়েছেন, আসলে তাদের কয়দিন আগে তুলে নিয়েছিলেন? সেটি মানুষ জানতে চায়।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনের বিষয়ে রিজভী আরও বলেন, র্যাবের অভিযান ও মহাপরিচালকের ব্রিফিংয়ে প্রমাণিত হয় যে, শরীয়তপুর-৩ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী মিয়া নুরউদ্দিন অপুর ওপর হামলা ছিল সরকারের পূর্বপরিকল্পিত। এই সহিংস ও ন্যক্কারজনক ঘটনা ঢাকতেই সরকার সুপরিকল্পিতভাবে কোটি কোটি টাকার নাটকটি মঞ্চস্থ করেছে।
বিএনপির এ নেতা বলেন, সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন বাহিনীকে শত শত কোটি টাকা দিয়ে এ রকম কল্পকাহিনি বানিয়ে বাজারজাত করার জন্য বায়োস্কোপ তৈরি করে রেখেছে, যার সঙ্গে সত্যের কোনো লেশমাত্র নেই। নির্বাচনী মাঠ একতরফা করতে বিভিন্ন বাহিনীকে ব্যবহার করা হচ্ছে, র্যাবকেও ব্যবহার করছে এ রকম কল্পকাহিনি রচনার জন্য।
রিজভী বলেন, বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যার কাহিনি যেমন মানুষ বিশ্বাস করে না, তেমনি মানুষ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো কর্মকাণ্ডই বিশ্বাস করে না।
তিনি বলেন, আবারও নির্বাচনের প্রাক্কালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বানানো গল্প ফাঁদতে ব্যবহার করা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। অবশ্যই ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন ঘিরে নানামুখী চক্রান্তজালের এটি একটি অংশ। তবে কলঙ্কলেপনের জন্য অবিশ্বাসযোগ্য মিথ্যা অপপ্রচার জনগণের সঙ্গে মশকরা করারই শামিল।
তিনি গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি পত্রিকার উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, ‘দুবাই থেকে আসা কালো টাকা ভোটের মাঠে’ নামক একটি উদ্ভট ও অভিনব প্রতিবেদন। সেখানে এক অংশে বলা হয়েছে-‘গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিলের সিটিসেল ভবনের ২২ তলায় এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মহাপরিচালক বলেন, ‘সোমবার রাত থেকে অভিযান চালিয়ে ৮ কোটি টাকা নগদ ও ১০ কোটি টাকার চেক উদ্ধার করা হয়েছে। দুই মাসে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়েছে। কালো টাকার মাধ্যমে নির্বাচনকে প্রভাবিত করাই ছিল উদ্দেশ্য, …আইনশৃঙ্খলার অবনতি, …নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। আমরা সিটি সেন্টারে একটি রাজনৈতিক দলের কাগজপত্র পেয়েছি। তিনি হলেন শরীয়তপুর-৩ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী মিয়া নুরউদ্দিন আহমেদ অপু। তাকে কয়েক কোটি টাকা পাঠানোর কারণেই সহিংসতা হয়েছে। টাকা এসেছে দুবাই থেকে হুন্ডির মাধ্যমে’ ইত্যাদি।
প্রকাশিত সংবাদে আরও বলা হয়-‘এর আগে আওয়ামী নেতারাও বলেছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে লন্ডনে বসে চক্রান্ত করেছেন, আর এ জন্য তাকে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়েছে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা-আইএসআই। দুবাই থেকে আসা কালো টাকা ভোটের মাঠে। হুণ্ডির মাধ্যমে এই অর্থের বড় অংশ এসেছে দুবাই থেকে। র্যাব বলছে-কালো টাকার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাবেক এক এপিএস, নাম তার নুরউদ্দিন অপু।’
এই সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে রিজভী বলেন, সংবাদপত্রে প্রকাশিত ঘটনায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নাম ও র্যাবের অভিযানে ধানের শীষের প্রার্থী মিয়া নুরউদ্দিন অপুকে জড়িয়ে যে কাল্পনিক কাহিনি রচিত হয়েছে তা বুঝতে আর কারও বাকি নেই।
তিনি বলেন, আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মঈনউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন-তারেক রহমান নাকি বিদ্যুৎ খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন। অথচ জানা গেল ৫ বছরে বিদ্যুৎ খাতে বাজেটই ছিল ১৩ হাজার কোটি টাকা।
নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমালোচনা করে ছাত্রদলের সাবেক এই নেতা বলেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকে পুলিশ-বিজিবি ও র্যাবের নির্বাচনী মাঠজুড়ে নৌকা মার্কাকে জেতানোর জন্য এক বেপরোয়াভাব দেখা যাচ্ছে। থানার ওসির নৌকা মার্কার মঞ্চে প্রকাশ্য বক্তব্য।
২০১৪ সালের নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই সময় ডিএমপির প্রধান হয়ে কীভাবে সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন। আন্দোলনকারীদের কী নিষ্ঠুর কায়দায় দমনের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ৮০০ কোটি টাকা লুট হয়ে গেল। ব্যাংকের ভোল্টের স্বর্ণ তামা হয়ে গেল। লাখ লাখ টন কয়লা গিলে ফেলা হল। সাগর-রুনি হত্যার তদন্ত তো র্যাবই করেছে। আজও কেন এই লুট হওয়া টাকা, কয়লা, সোনা উদ্ধার হয়নি, আজও কেন সাগর-রুনির হত্যাকারীরা ধরতে পারেনি র্যাব? ডিজি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবেন কি? যারা লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার করে বিদেশে সেকেন্ড হোম ও বেগম পল্লী বানাচ্ছে তারা ধরাছোঁয়ার বাহিরে কেন? আর প্রতিনিয়ত হামলা-মামলায় ক্ষতবিক্ষত বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের বীরত্ব দেখাচ্ছেন র্যাবের কিছু