মানুষ ভোট উৎসবের অপেক্ষায়।
# সব বাধা উপেক্ষা করে ভোট বিপ্লবে অংশ নিন।
# সাহসি ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে জনগণ কখনও ভুল করেনি, এবার ভুল করবে না।
# নির্বাচনকেন্দ্রকে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের এজেন্ট শূন্য করার জন্য তাদের ধরপাকড় চলছে।
# ঐক্যফ্রন্টের ভরসা জনগণ।
স্টাফ রিপোর্টার : ভোটারদের কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। গতকাল শুক্রবার বিকেলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন একথা বলেন। তিনি বলেন, ভোটাররা যাতে ভোটকেন্দ্রে যেতে না পারে সেজন্য সরকার সবকিছুই করছে। সারাদেশে ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের ব্যাপকভাবে গ্রেফতার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্ট যাতে ভোটকেন্দ্রে এজেন্ট দিতে না পারে সেজন্য নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এমনকি আমাদের বেশকিছু প্রার্থীকে মারধর করা হয়েছে। প্রার্থীদের গ্রেফতার ও বাসায় বাসায় অভিযানের নামে হয়রানি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা দেশের মানুষকে অনুরোধ করছি সব বাধা উপেক্ষা করে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে সরকারের সব অত্যাচারকে তুচ্ছ প্র্রমাণ করে ভোট দিতে হবে। ড. কামাল হোসেনের পক্ষে সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন ঐক্যফ্রন্ট নেতা ও গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক।
সাংবাদিক সম্মেলনে কামাল হোসেন বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারাদেশে ঐক্যফ্রন্টের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী, নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মাঠে দাঁড়াতে দেয়া হচ্ছে না। ঐক্যফ্রন্টকে প্রচারণায় নানাভাবে বাধা দেয়া ও গণগ্রেফতারের বিষয়টি আজ সবার জানা। তার পরও ভোটাররা কিন্তু থেমে নেই। তারা নিজের মতো করে প্রস্তুতি নিয়ে যার যার এলাকায় ফিরে গেছেন ১০ বছর পর তাদের কাক্সিক্ষত ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার জন্য। তারা মূলত ভোট উৎসবের অপেক্ষায়। তাই যতই বাধা দেয়া হোক না কেন, এই ভোটারদের কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি রাজধানী ঢাকার রাস্তাঘাট প্রায় খালি হয়ে গেছে। সবাই স্বউদ্যোগে নিজ নিজ এলাকায় চলে গেছেন ভোট উৎসবে অংশ নেওয়ার জন্য।
তিনি বলেন, প্রার্থী-নেতা-কর্মী-সমর্থকদের উপর দমন-পীড়ন কিন্তু থেমে নেই। সহিংসতা চলছেই। চলমান সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। নির্বাচনের দিন ব্যাপক সহিংসতার আশঙ্কা করছেন স্বয়ং মার্কিন রাষ্ট্রদূত। উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিবও। তাদের পক্ষ থেকে বরাবরই বলা হচ্ছে, ভোটের নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য। কিন্তু ভীতিকর অবস্থার কাক্সিক্ষত উন্নতি বা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন জাতির উদ্দেশে আহ্বান জানিয়েছেন, সাহস করে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট বিপ্লবে অংশ নেওয়ার জন্য। তিনি বলেন, বারবার নির্বাচন কমিশনকে বলার পরও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আক্রমণাত্মক ভূমিকার বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয়নি। বরং দিনকে দিন বেড়েই চলেছে আক্রমণের ধরন। এদিকে ইন্টারনেটের গতি না কমানোর একাধিকবার আহ্বান জানানো সত্ত্বেও তা মানা হচ্ছে না। নির্বাচনের দিন আইনশৃখলা পরিস্থিতি ও নির্বাচনসংক্রান্ত সার্বিক খবরাখবর দ্রুত জানার স্বার্থে ফোর-জি সচল রাখার আহ্বান আবারও জানাচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
নির্বাচনের দিন অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনৈক কর্মকর্তাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নির্দেশ প্রমাণ করে সেদিন রক্তক্ষয়ী পরিবেশ সৃষ্টির অপচেষ্টা অথবা জনমনে ভীতি সঞ্চার করার জন্য এসব বলা হচ্ছে। এতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী-নেতা-কর্মী-সমর্থকরা মোটেও ভীত নন। ভোটাররাও ভয় পাবেন না। বরং তারা সবকিছুকে তুচ্ছ প্রমাণ করে ৩০ ডিসেম্বর ভোট বিপ্লব ঘটানোর মিছিলে শামিল হয়ে কাক্সিক্ষত বিজয়ে অবদান রাখবেন বলে ঐক্যফ্রন্টের দৃঢ় বিশ্বাস।
সারাদেশে হামলা মামলার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার দিন কারাগারে ছিল ৯০ হাজার বন্দী। অথচ গত বৃহস্পতিবার দাঁড়ায় ৯৭ হাজারে। বর্তমানে সেটা বেড়ে লক্ষাধিক। ইতিমধ্যে মামলা হয়েছে ৮৪৪টি, আহত হন ১৩ সহস্রাধিক, নিহত ৯ জন, হামলা হয়েছে ২ হাজার ৮৯৬টি। দিন দিন এ পরিসংখ্যান জ্যামিতিক হারে বাড়ছেই। বৃহস্পতিবার রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সারা দেশে চিরুনি অভিযান চালিয়ে ঐক্যফ্রন্টের নেতা-কর্মীদের যেখানেই পেয়েছে গণহারে গ্রেফতার করেছে। গণগ্রেফতারের মধ্য দিয়ে দেশের কারাগারগুলোকে ঐক্যফ্রন্ট নেতা-কর্মীদের দিয়ে ভরে ফেলা হচ্ছে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রায় দুই ডজন প্রার্থী কারাগারে, তারা হলেন- নরসিংদী-১ খায়রুল কবীর খোকন, কুমিল্লা-১০ মনিরুল হক চৌধুরী, গাজীপুর-৫ ফজলুল হক মিলন, ঝিনাইদহ-৩ অধ্যাপক মতিউর রহমান, টাঙ্গাইল-২ সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, চট্টগ্রাম-৯ ডা. শাহাদাত হোসেন, চট্টগ্রাম-৪ আসলাম চৌধুরী, গোপালগঞ্জ-৩ এস এম জিলানী, রাজশাহী-০৬ মো. আবু সাঈদ চাঁদ, মাগুরা-১ মো. আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম-১৫ আ ন ম শামসুল ইসলাম, কক্সবাজার-২ এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ, সাতক্ষীরা-২ মুহাম্মদ আবদুল খালেক, খুলনা-৬ আবুল কালাম আজাদ, ঠাকুরগাঁও-২ মাওলানা আবদুল হাকিম, সাতক্ষীরা-৪ গাজী নজরুল ইসলাম, কুচ্ছিা-১ রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা, যশোর-২ আবু সাঈদ মো. শাহাদাত।
আদালতের মাধ্যমে যাদের প্রার্থিতা বাতিল ও স্থগিত করা হয়েছে, সে আসন ও প্রার্থীরা হলেন : নরসিংদী-৩ মঞ্জুর এলাহী, নাটোর-৪ আব্দুল আজিজ, গাইবান্ধা-৪ ফারুক আলম, চাঁদপুর-৪ আলহাজ্ব আবদুল হান্নান, জামালপুর-১ রশিদুজ্জামান মিল্লাত, মানিকগঞ্জ-২ আফরোজা খান রিতা, সিলেট-২ তাহমিনা রুশদী লুনা, মানিকগঞ্জ-১ এম এ জিন্নাহ, নাটোর-১ মঞ্জুরুল ইসলাম, নওগাঁ-১ ডা. খালেক, রাজশাহী-৫ নাদিম মোস্তফা, বগুড়া-৩ মুহিত তালুকদার, কক্সবাজার-২ আলমগীর মাহফুজ উল্লাহ, ময়মনসিংহ-১ আলী আসগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ ইঞ্জিনিয়ার মুসলিম উদ্দিন, দিনাজপুর-৩ মো. জাহাঙ্গীর আলম, জয়পুরহাট-১ ফজলুর রহমান, বগুড়া-৭ মোরশেদ মিল্টন, রাজশাহী-৬ আবু সাঈদ চান, ঝিনাইদহ-২ আবদুল মজিদ, জামালপুর-৪ শামিম তালুকদার, ঢাকা-১ খন্দকার আবু আশফাক, ঢাকা-২০ তমিজ উদ্দিনসহ আরো অনেক আসন ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী শূন্য। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের যৌক্তিক দাবি সত্ত্বেও এসব আসনে পুনঃতফসিল ঘোষণা করা হচ্ছে না।
কামাল হোসেনের পক্ষে দেয়া বক্তব্যে আফ্রিক আরও বলেন, এতকিছুর পরও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে থাকার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার হেন কোনো চেষ্টা নেই, যা করা হচ্ছে না। দেশব্যাপী চলছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী-নেতা-কর্মী-সমর্থকদের উপর একতরফা বর্বর হামলা, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, প্রচারে বাধা, দলীয় অফিস ও নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা-ভাংচুর অব্যাহত। ধানের শীষের কর্মী-সমর্থকদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা চলছেই। তফসিল ঘোষণার পর দেশের বিভিন্ন জেলায় ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ সহস্রাধিক ঐক্যফ্রন্ট নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে। এভাবে ঢালাও আটকের মধ্য দিয়ে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত ধানের শীষ প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্টদের টার্গেট করে গ্রেফতার চালানো হচ্ছে। মূলত নির্বাচন কেন্দ্রে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীর এজেন্টশূন্য রাখার অপরিণামদর্শী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গ্রেফতার অভিযানের অন্যতম লক্ষ্য। ধরপাকড়ের নামে ক্ষমতাসীনদের নীলনকশা বাস্তবায়নের এমন অশুভ কার্মকা- থেকে সংশ্লিষ্ট সব মহলকে অবিলম্বে সরে আসার আহ্বান জানাচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
কামাল বলেন, বৃহস্পতিবার রাত থেকে চিরুনি অভিযানে নেমেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এ অভিযানের মাধ্যমে তারা ঐক্যফ্রন্ট নেতা-কর্মী-সমর্থকদের টার্গেট করে আটক করছে। যেখানে যাকে পেয়েছে তাকেই আটক করে নিয়ে গেছে। এভাবে দমন-পীড়ন ও গণগ্রেফতার চালিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে রাখা যাবে না। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ৩০ ডিসেম্বর ভোটারদের নিরাপদে ভোট দেওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করে দেবে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তাদের কাছে সে প্রত্যাশাই করছে।
দেশের এ সংবিধান প্রণেতা বলেন, ঐক্যফ্রন্টের ভরসা দেশের জনগণ তথা সর্বস্তরের ভোটার। যারা অতীতে কখনো সময়ের সাহসী ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেননি, তারা এবারও ভুল করবেন না। সব ধরনের ভয়-ভীতিকে তুচ্ছজ্ঞান করে ঐক্যবদ্ধভাবে বীরের মতো ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হবেন তারা। এই দেশের সংগ্রামী জনতা ৩০ ডিসেম্বরের ভোটযুদ্ধে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে চলমান আগ্রাসন মোকাবিলাপূর্বক তাদের মূল্যবান ভোট প্রয়োগ করবেন গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য, দেশের মালিক জনগণ- সে মালিকানা ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে, আমাদের স্বাধীনতাকে অর্থবহ করার দৃঢ়প্রত্যয়ে। প্রিয় দেশবাসী ও ভোটাদের প্রতি আবারও আমার আকুল আবেদন, ৩০ ডিসেম্বর ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দ্বিধাহীন চিত্তে আপনার মূল্যবান ভোট প্রয়োগ করে দেশের স্বাধীনতা এবং আপনাদের মালিকানা নিশ্চিত করবেন। দেশবাসীর প্রতি এটাই আমার প্রত্যাশা।
Check Also
সাতক্ষীরায় পুত্রবধূর হাতে নির্যাতিত সেই স্কুলশিক্ষক মারা গেছেন
ক্রাইমবাতা রিপোট, সাতক্ষীরা: ছেলে ও পুত্রবধূর হাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশতলা …