ক্রাইমবার্তা রিপোট: সাতক্ষীরা: রাত পোহালেই ভোট। দেশের ৬টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। এর মধ্যে সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসন রয়েছে। সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনে ইভিএম নিয়ে ভোটারদের মধ্যে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত সাতক্ষীরা সদর আসন। এ আসনে ১৩৭ টি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। আজ সকাল থেকে কেন্দ্র গুলোতে ভোট প্রদানের সরাঞ্জম সরবরাহ করা হচ্ছে। সদর উপজেলা থেক র্পযায় ক্রমে এসব সরাঞ্জন পাঠানো হচ্ছে ভোট কেন্দ্র গুলোতে।
ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট প্রদানের প্রতীকী মহড়াও সম্পন্ন হয়েছে। ইভিএমে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্তে এ আসনে ভোটারদের মধ্যে এক ধরণের সংশয় সৃষ্টি হয়েছিল। ইতোমধ্যে সে সংশয় দূর হয়েছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে। ভোটাররাও এখন ভোটের জন্য প্রস্তুত। ২৭ ডিসেম্বর এ আসনের প্রতিটি কেন্দ্রে একযোগে অনুশীলনমূলক ভোটিং কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার ছাড়াও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ অংশ নেয়। ইভিএমে ব্যাপক প্রচারণা ও প্রদর্শনের ফলে সাতক্ষীরা সদর আসনে বিরাজ করছে ভোটের উৎসব।
গত ২৫ ডিসেম্বরের পর থেকে সকল প্রার্থীর পক্ষে প্রচার প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে। এতে করে ভোটারদের প্রার্থীদের নিয়ে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা। কে পরবেন জয়ের মালা? ভোটারদের চুল চেরা বিশ্লেষণ চলছে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে অফিস আদালত পর্যন্ত। তবে গ্রেপ্তার আতঙ্কে আছেন অনেকেই। ফলে তারা মুখে কুলুপ মেরে রেখেছেন।
এই আসনে আওয়ামী লীগের মীর মোস্তাক আহমেদ রবিকে নৌকা, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (জামায়াত নেতা) মুহাম্মাদ আব্দুল খালেককে ধানের শীষ, জাতীয় পার্টির শেখ মাতলুব হোসেন লিয়নকে লাঙ্গল, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) নিত্যানন্দ সরকারকে মই, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুফতী রবিউল ইসলামকে হাত পাখা ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মো. জুলফিকার রহমান আম প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।
বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনীনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই আসনে চারবার জামায়াত জয় লাভ করেছে। ভোটারদের আলোচনায় উঠে এসেছে স্বাধীনতা পরবর্তী ভোটের হিসাব। ২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী লাঙল প্রতীক নিয়ে জয় লাভ করে। ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনে আ.লীগ জয় লাভ করে।
ভোটারদের দেয়া তথ্যমতে, ১৯৭৩ পরবর্তী প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ কোন নির্বাচনে সাতক্ষীরা সদর আসন থেকে আওয়ামী লীগের কোন প্রার্থী বিজয়ী হতে না পারলেও এবার জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। কোন কোন নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীর চেয়ে অনেক কম ভোট পেয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। কিন্তু জাতীয় পার্টির ক্ষেত্রে ঘটেছে তার ব্যতিক্রম। আওয়ামী লীগের চেয়ে অনেক বেশি ভোট পেয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী। ফলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা সদর আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জয়ের আশায় ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে এ আসনে প্রচারণা চালাচ্ছেন শেখ মাতলুব হোসেন লিয়ন।
অপরদিকে স্বাধীনতা পরবর্তী সাতক্ষীরা সদর আসনটি অধিকাংশ সময় দখলে রেখেছিল জামাত। এবার জামাতের খোলস পাল্টে বিএনপির হয়ে ধানের শীষ নিয়ে কারাগারে আটক থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন জেলা জামাতের সাবেক আমীর মুহাদ্দীস আব্দুল খালেক। তার বিরুদ্ধে রয়েছে ৩৮টি মামলা। প্রচারে পিছিয়ে থাকলেও তার ভোট রয়েছে ঘাপটি মেরে। বিশেষ করে জামাতের নারী ভোটাররা রয়েছে সক্রিয়। এ আসনে নারী ভোটারদের নিয়ে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী তারা। জামাতের অভিযোগ তারা প্রচার প্রচারণা চালাতে পারেনি। তারা পোস্টার পর্যন্ত লাগাতে পারেনি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা সদর আসনে মোট ভোটার তিন লক্ষ ৫৬ হাজার ২৬৮ জন। আওয়ামী লীগের একটি সূত্রের মতে এরমধ্যে ৮৫ হাজার থেকে ৯০ হাজার ভোট রয়েছে আওয়ামী লীগের।
জেলা জামাতের প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান বলেন, সাতক্ষীরার সব কয়টি আসনে একসময় জামাতের প্রার্থীরা এমপি ছিলেন। বিশেষ করে সাতক্ষীরা-২ (সদর) জামাতের প্রার্থী চারবার জয়ী হয়েছেন। ১৯৮৬ সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনে কাজী শামছুর রহমান নির্বাচিত হন। পরে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ ও সালের নির্বাচনেও জামাতের প্রার্থী হিসেবে তিনি সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসন থেকে নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে একমাত্র সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনে কাজী শামছুর রহমান নির্বাচিত হন। ২০০১ সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনে যুদ্ধাপরাধী মাওলানা আব্দুল খালেক নির্বাচিত হন।
তিনি আরও বলেন, জামাতের প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ায় এই এলাকায় অনেক উন্নয়ন হয়েছে। গত ১০ বছরে এই এলাকার অনেক মানুষ পুলিশের নির্যাতনের শিকার হয়েছে ও মানুষ নিহত হয়েছে। সেজন্য এলাকার মানুষ এবারও ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেবেন। ইভিএমে এক্যফ্রন্টের প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীক জয় হবে বলে আশা করেন তিনি।
জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক হারুন উর রশীদ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে ক্ষমতায় আসলে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। সাতক্ষীরায় মেডিকেল কলেজ, বাইপাস সড়ক, বিভিন্ন রাস্তাঘাটা নির্মাণ হয়েছে। এই সরকারে আমলে যে উন্নয়ন হয়েছে স্বাধীনতার ৪০ বছরেও এতো উন্নয়ন হয়নি। এছাড়া জামাত, শিবির ও বিএনপি ২০১৩ সালের পর এই এলাকায় ব্যাপক তান্ডব চালিয়ে অনেক ১৮ জন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষকে হত্যা করে তারা নিজেরা এখন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সে কারণে জনগণ তাদের সাথে নেই। তাদের ভোট দেবে না। জনগণ তাদের বয়কট করে তাদের বের হতে দিচ্ছে না।