একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভূয়সী প্রশংসা করলেন আলোচিত জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার

ক্রাইমর্বাতা রিপোট: দিনকয়েক আগেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর্দা নেমেছে। চতুর্থ দিনের দুপুর যখন গড়িয়ে যাচ্ছিল, তখন নির্বাচন ভবন থেকে ভেসে আসতে শুরু করে মাছভাজা, শীতের পিঠার মৌ মৌ গন্ধ। সাথে ছিল নানা ধরনের খাবারের আয়োজন নির্বাচন ভবনের ফুয়ারা চত্বরে। আর এতে অংশ নেন ইসি কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

ইসির ফোয়ারা চত্বর ঘুরে দেখা যায়, খাওয়া-দাওয়া তৈরি করার জন্য ছনের ছোট ঘর বানানো হয়। সেখানে হরেক রকম পিঠা, মাছ ভাজিসহ নানা প্রকার খাবার তৈরি করা হয় দুপুর থেকে। এর সামনেই করা হয় মঞ্চ। ইসি চত্বরের জলাশয় থেকে তোলা হয় মাছ। ভোজের আয়োজে যুক্ত হয় জলাশয়ের মাছেরপদ। খাবারের মধ্যে ছিল চিতই ভর্তা, নারিকেলি ভাপা, ঝালকুল পিঠা, সুতি জিলাপী, হোল ফিস (আস্ত মাছ) কাবাব, পানবিড়া (মসলা জাতীয় পান), পালিগুড় (পিঠার সঙ্গে খাওয়ার জন্য মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য) ও বক্সপ্রেসো। সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে অনুষ্ঠান শেষ হলে শুরু হয় খাওয়া-দাওয়া ও প্যাকেট বিতরণ।

ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা, কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ প্রমূখ। সিইসি, চার কমিশনারসহ ইসি সচিব তাদের বক্তব্যে ৩০ ডিসেম্বর দিনরাত পরিশ্রম করে নির্বাচনের মতো বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদনের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

যা বললেন মাহবুব তালুকদার
কমিশন বৈঠকে কয়েকবার নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) দিয়ে আলোচিত জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সদ্য সমাপ্ত একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। নির্বাচন কমিশনে কাজ করার সুযোগকে তিনি জীবনে গৌরব গাথা হিসেবেও আখ্যা দেন। নিজেকে ভাগ্যবান বলে অভিহিত করে তিনি বলেন, আগের নির্বাচন অংশীদারিত্বমূলক হয়নি। এই প্রথম একটা অংশীদারিত্বমূলক, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আমরা জাতিকে উপহার দিতে পেরেছি। আমি মনে করি, এ নির্বাচন বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে একটা ঐতিহ্য সৃষ্টি করবে। এ নির্বাচন ধরেই পরবর্তী ইতিহাসে যে নির্বাচনের ধারা সেটা পরবর্তী সময়ে হয়তো ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ থাকবে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইসির সান্ধ্যভোজ ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন। তবে তার বক্তব্যের শুরুতেই অনেকে কানাঘুষা করছিল কোনো অপ্রীতিকর কথা বলেন কিনা। কিন্তু না। শুরুতে তিনি বলেন, মনোরম পরিবেশে আপনাদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। আমি খুব ভাগ্যবান, নিজে নিজেই বললাম। তার কারণ হলো, আমি আমার জীবন প্রারম্ভে যখন সরকারের চাকরিতে আসি, তখন বঙ্গভবনে আমি পাঁচ বছর সময় কাটিয়েছিলাম। চারজন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আমার সরাসরি কাজ করার সুযোগ হয়েছে। সেটা ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত সময়ে। জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ চারজন নির্বাচন কমিশনারের সাথে আমার আবার কাজ করার সুযোগ হয়েছে। সম্ভবত পাঁচ বছরব্যাপী। সেজন্য আমি মনে করি, জীবনের প্রথম আমলা হিসেবে কাজ করা এবং জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এগুলো আমার জীবনে গৌরব গাঁথা হয়ে থাকবে।

মাহবুব তালুকদার বলেন, আপনারা জানেন, আমাদের নির্বাচনের কোনো ধারাবাহিকতা নেই কিংবা ছিল না। আমরা কখনও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করেছি, কখনও সেনা সমর্থিত সরকারের অধীনে করেছি। কখনও নির্বাচন করেছি দলীয় সরকারের অধীনে। কিন্তু তা অংশীদারিত্বমূলক হয়নি। এই প্রথম একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আমরা জাতিকে উপহার দিতে পেরেছি। আমি মনে করি এ নির্বাচন বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে একটা ঐতিহ্য সৃষ্টি করবে। এ নির্বাচন ধরেই পরবর্তী ইতিহাসে যে নির্বাচনের ধারা সেটা পরবর্তী সময়ে হয়তো ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ থাকবে। তিনি বলেন, নির্বাচন যে এতো বিশাল কর্মযজ্ঞ, এ বিষয়ে সত্যি আমার ধারণা ছিল না। কারণ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কাজ করার কোনো সুযোগ কিংবা নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কাজ করার কোনো সুযোগ আমার আমলা জীবনে কখনও হয়নি।

তিনি বলেন, এখানে এসে এই বিশাল কর্মকান্ড দেখে আমার জীবনের একটা বিশাল অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পেরেছি। কী নিরলস প্রচেষ্টায় আপনারা এই নির্বাচনটা সফলদায়ক করেছেন, সর্বাঙ্গীনভাবে সফল করেছেন, এটা আমি যদি প্রত্যক্ষভাবে না থাকতাম, তাহলে দেখতে পারতাম না। বুঝতে পারতাম না। বিশেষ করে আমি লক্ষ্য করেছি এই বিশাল কর্মযজ্ঞের যিনি কেন্দ্রবিন্দু, আমাদের নির্বাচন কমিশনের সচিব এবং তার সঙ্গে এখানে যারা পরবর্তী নির্বাচন সৈনিক ছিলেন, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, উপ-সচিব এবং অন্যান্য যারা ছিলেন, তারা কী নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই নির্বাচনকে সফল করেছেন। এ অভিজ্ঞাতাও আমার জন্য অনেক বিশাল এক অভিজ্ঞতা সঞ্চার হয়ে থাকবে।

মাহবুব তালুকদার বলেন, আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং যোদ্ধার মতই এই বিশাল কর্মযজ্ঞে সবাইকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার যাদের সাথে আমার প্রতিদিন দেখা হয় এবং এটা একটা আমি বলবো অপরিসীম অনুগ্রহ। আমি যাদের সঙ্গে দুই বছরের কাছাকাছি সময় অতিবাহিত করেছি, আরও তিন বছর অতিবাহিত করতে পারবো আশা করি, তাদের সঙ্গে আমার যে সম্পর্ক, এ সম্পর্ক এতো নিবিড়, এটি কর্মক্ষেত্রে কখনও হয়নি। হওয়া সম্ভব না। কর্মক্ষেত্রে এ সুদীর্ঘ সময়ে কখনও কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠার সুযোগ থাকে না। কিন্তু আমি মনে করি এটা আমরা পরম সৌভাগ্য যে তাদের সঙ্গে সঙ্গে অত্যন্ত আপনজনের মতো আমার একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। সেই সম্পর্ক কেবল নির্বাচন কমিশনাররা না প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাথেও আমার একটা অত্যন্ত মধুর সম্পর্ক রয়েছে। যেটার জন্য আমি আনন্দিত এবং গর্বিত।

Check Also

সাতক্ষীরায় পুত্রবধূর হাতে নির্যাতিত সেই স্কুলশিক্ষক মারা গেছেন

ক্রাইমবাতা রিপোট, সাতক্ষীরা:   ছেলে ও পুত্রবধূর হাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশতলা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।