ক্রাইমর্বাতা ডেস্করিপোট: নিজেদের কাজকে সফল দাবি করে বৃহস্পতিবার কর্মীদের ‘ধন্যবাদ’ জানাতে নির্বাচন কমিশন যে বার-বি-কিউ উৎসবের আয়োজন করেছিলেন তাতে আদিম বর্বরতার ছাপ দেখছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, ‘আদিম মানুষেরা পশু শিকার করার পর যেমন উৎসব করত, তেমনি গণতন্ত্রকে বলি দিয়ে তারা সেই উৎসব করেছে।’ রিজভীর ভাষায়, কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন ‘নির্লজ্জ’ বলেই এ কাজটি তারা করতে পেরেছে।
শুক্রবার নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিবের এমন প্রতিক্রিয়া আসে। ৩০ ডিসেম্বরের ওই নির্বাচনে ২৯৮টি আসনের মধ্যে ২৮৮টিই গেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিকদের হাতে। অন্যদিকে বিএনপি ও তাদের শরিকরা পেয়েছে সাতটি আসন, যা তাদের ইতিহাসে সর্বনিম্ন।
ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ তোলা বিএনপি নির্বাচন কমিশনের কাছে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানিয়েও সাড়া পায়নি।
রিজভী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এমনকি আদালতকে ব্যবহার করে সরকার একতরফাভাবে জনগণবিরোধী অগণতান্ত্রিকভাবে মহা ভোট ডাকাতি, মহা ভোট জালিয়াতির নির্বাচন করেছে। এই ভোটের একটা পার্ট হচ্ছে নির্বাচন কমিশন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারগণ।’
নির্বাচন নিয়ে টানা কয়েক মাসের ব্যস্ততার পর বৃহস্পতিবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এক ‘ধন্যবাদ জ্ঞাপন’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন। পিঠা উৎসবের পাশাপাশি বড়শী দিয়ে মাছ ধরে ‘বার-বি-কিউ’ করে খাওয়া হয় ওই অনুষ্ঠানে।
ভোটের চার দিন পর ইসি ভবন প্রাঙ্গণে ফোয়ারা চত্বরে ওই অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা, কমিশনারগণ, কমিশনের সচিবসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ছিল স্বস্তির ভাব। তবে এ নিয়ে বিএনপি নেতা রিজভীর কথায় প্রকাশ পেয়েছে প্রবল অসন্তোষ।
‘আদিম বন্য মানুষরা, তারা শিকার করে আগুন জ্বালিয়ে উৎসব করে। এটা তো হচ্ছে আদিম পশু প্রবৃত্তি… এই পিঠা উৎসব। ডাকাতরা ডাকাতির মাল যেখানে ভাগ-বাটোয়ারা করে, সেখানে উৎসবই করে’।
‘সেটা কোনো পাহাড়ের গুহায় অথবা বনের মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে…. একটা আদিম এবং পাশবিক উল্লাস সেখানে দেখি। নির্বাচন কমিশনও সেটাই করছে’।
নির্বাচনের ফলাফল বর্জনের ঘোষণার পর বিএনপি ইতোমধ্যে জানিয়েছে, তাদের দলের নির্বাচিতরা শপথও নেবেন না। সারা দেশ থেকে প্রার্থীদের ঢাকায় ডেকে কারচুপির অভিযোগের ‘তথ্য-প্রমাণ’ জড়ো করে নির্বচন কমিশনে স্মারকলিপি দিয়ে এসেছে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী অভিযোগ করেন, কারাগারে থাকা তাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে আত্মীয়-স্বজন বা ব্যক্তিগত চিকিৎসককেও দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না।
‘ভোটার শূন্য নির্বাচনে বিদেশি মদদপুষ্ট অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদী শক্তি গণতন্ত্রকে দাফন করতে বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটকিয়ে রেখে জুলুমের পর জুলুম চালিয়ে যাচ্ছে। বিনা চিকিৎসায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তাকে রাখা হয়েছে। কারাবিধি অনুযায়ী নিকটজনদের সাক্ষাতের সুযোগ দিতেও নানা ফন্দি-ফিকির করে বিলম্ব করা হচ্ছে।’
রিজভী দাবি করেন, গত ২০-২১ দিনে আত্মীয়-স্বজনদের খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। দলের সিনিয়র নেতা বা ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা গত চার মাসেও বিএনপি চেয়ারপারসনকে দেখতে যাওয়ার অনুমতি পাননি।
অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, আবেদ রাজা, সুরঞ্জন ঘোষ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।