সৈয়দ আশরাফ ক্ষমতার রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন না: কাদের

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ    বাংলাদেশের রাজনীতিতে সৈয়দ আশরাফের শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, সৈয়দ আশরাফ ছিলেন নির্মোহ রাজনীতিবিদ, ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতিতে তিনি বিশ্বাস করতেন না।

রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের জানাজা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক।

ওবায়দুল কাদের বলেন, সৈয়দ আশরাফের মতো নির্মোহ সজ্জন রাজনীতিবিদ পাওয়া কঠিন। তিনি ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন না। রাজনীতির মাঠে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। তার মতো সংগঠকের চলে যাওয়া আওয়ামী লীগের জন্য এক বড় শূন্যতা।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সৈয়দ আশরাফের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর পর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সদস্য ও আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। জানাজা শেষে তারা সবাই সৈয়দ আশরাফের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন।

এর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জানাজার জন্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) হিমঘর থেকে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স সংসদ ভবন চত্বরে আনা হয়।

এখানে তার প্রথম জানাজা হয় সকাল সাড়ে ১০টায়। এর পর কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহে জানাজা শেষে আজই বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

বৃহস্পতিবার রাতে ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইন্তেকাল করেন সবার প্রিয় রাজনীতিবিদ সৈয়দ আশরাফ (ইন্না … রাজিউন)। তিনি ফুসফুস ক্যান্সারে ভুগছিলেন। শনিবার তার লাশ দেশে আনা হয়।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা সৈয়দ আশরাফের ভাই সাফায়েত-উল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে মরদেহ গ্রহণ করেন। সৈয়দ আশরাফের একমাত্র মেয়ে রীমা ইসলামও এ সময় সঙ্গে ছিলেন।

শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজধানীর হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লাশ অ্যাম্বুলেন্সে করে বেইলি রোডে সৈয়দ আশরাফের সরকারি বাসভবনে নেয়া হয়। সেখানে প্রিয় নেতাকে শেষবারের মতো দেখতে ভিড় করেন আত্মীয়স্বজন ও তার রাজনৈতিক সহকর্মীরা। সেখানে এক শোকবহ পরিবেশ সৃষ্টি হয়। কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে। সেখান থেকে রাতেই মরদেহ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের হিমঘরে নেয়া হয়।

গতকাল বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালে বিকাল থেকেই অপেক্ষা করছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, আবদুল মতিন খসরু, সাহারা খাতুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ডা. দীপু মনি, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, একেএম এনামুল হক শামীম, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, উপদফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় সদস্য এসএম কামাল হোসেন, মারুফা আক্তার পপি, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি একেএম রহমতুল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবু পঙ্কজ দেবনাথ প্রমুখ।

আজ সকাল সাড়ে ১০টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সৈয়দ আশরাফের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর পর হেলিকপ্টারে মরদেহ নিজ এলাকা কিশোরগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়। দুপুর ১২টায় ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর পর তৃতীয় জানাজা দুপুর ২টায় ময়মনসিংহের আঞ্জুমান ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। বাদ আসর বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন আদর্শবান-ত্যাগী-নিবেদিতপ্রাণ ও সর্বজনস্বীকৃত এই নেতা।

২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকেই সৈয়দ আশরাফ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছিলেন। অসুস্থতার কারণে তিনি গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর সংসদ থেকে ছুটি নেন। এ অবস্থায়ই একাদশ সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-১ আসনে নৌকা প্রতীকে বিপুল ভোটে জয়ী হন সৈয়দ আশরাফ।

দেশে ফিরে শপথ নিতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছ থেকে সময় চেয়ে নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তা আর হল না। অগণিত নেতাকর্মী আর শুভানুধ্যায়ীদের কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন সবার প্রিয়ভাজন সৈয়দ আশরাফ। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টায় থাইল্যান্ডের ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

Check Also

সাতক্ষীরায় পুত্রবধূর হাতে নির্যাতিত সেই স্কুলশিক্ষক মারা গেছেন

ক্রাইমবাতা রিপোট, সাতক্ষীরা:   ছেলে ও পুত্রবধূর হাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশতলা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।