চলতি জানুয়ারি মাসে বিশ্ব ইজতেমা না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আগামী ১১-১৩ এবং ১৮-২০ জানুয়ারি টঙ্গীতে তাবলিগের বিবদমান দুই পক্ষ আয়োজিত ইজতেমা বাতিল করা হয়েছে। আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ যাবেন। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত আসার পর ইজতেমা নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ সময় পর্যন্ত তাবলিগের জোড়সহ সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গতকাল বোরবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে তাবলিগের দুই গ্রুপের পৃথক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
গত ১ ডিসেম্বর টঙ্গীতে তাবলিগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষের পর দিল্লির নিজামুদ্দিনের মুরব্বি মাওলানা সাদ কান্দলভীর অনুসারী তাবলিগের অনুসারীরা আগামী ১১ জানুয়ারি টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজন করার উদ্যোগ নেয়। অন্য দিকে সাদবিরোধী আলেম ও তাবলিগের সাথীরা একই স্থানে ১৮ থেকে ২০ জানুয়ারি এবং ২৫ থেকে ২৭ জানুয়ারি দুই দফায় ইজতেমা আয়োজনের প্রস্তুতি নেয়। এতে আবারো সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দেয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাবলিগের দুই গ্রুপের সাথে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পৃথক সভা করেন।
কওমী আলেমরা মাওলানা সাদের অনুসারীদের সাথে একসাথে বসতে আপত্তি করায় পৃথক সভার আয়োজন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রথমে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মাওলানা সাদ অনুসারীদের সাথে বৈঠকে বসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠকে তাবলিগের কাকরাইল মারকাজের মুরব্বি সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম, মাওলানা মোশাররফ হোসেন, ইউনুস শিকদার, মাওলানা আশরাফ আলী ও টঙ্গীর ইজতেমা মাঠের জিম্মাদার ইঞ্জিনিয়ার মহিবুল্লাহ অংশ নেন।
তাদের সাথে বৈঠক শেষে বেফাকের শীর্ষ আলেম ও তাবলিগের মুরব্বিদের সাথে বৈঠকে মিলিত হন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এ বৈঠকে বেফাকের মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, কাকরাইল মারকাজের মুরব্বি মাওলানা যোবায়ের আহমেদ, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহফুজুল হক, আম্বরশাহ মসজিদের খতিব মাওলানা মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো- মাওলানা সাদের বিষয়ে দেওবন্দের সিদ্ধান্ত জানা, এ জন্য আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল দেওবন্দ সফর করবেন। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত আসার পর ইজতেমার তারিখ নির্ধারিত হবে। এ জন্য আগামী ১১ জানুয়ারি ও ১৮ জানুয়ারি দু’টি পক্ষের আয়োজিত পৃথক ইজতেমা বাতিল করা হয়। এ ছাড়া এ সময়ে উন্মুক্ত স্থানে জোড়সহ বড় কোনো সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ থাকবে। তবে মসজিদগুলোতে তাবলিগের কাজ করতে পারবেন দুই পক্ষই।
ভারতে যাওয়ার জন্য গঠিত ছয় সদস্যের কমিটিতে রয়েছেন, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শেখ আবদুল্লাহ, ধর্মসচিব আনিছুর রহমান, মাওলানা মাহমুদুল হাসান, হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ যোবায়ের, মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ ও সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম।
বৈঠকের বিষয়ে মাওলানা সাদ অনুসারী তাবলিগের মুরব্বি মাওলানা আশরাফ আলী নয়া দিগন্তকে বলেন, বৈঠকে ১১ ও ১৮ জানুয়ারির ইজতেমা বাতিল করা হয়েছে। ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ভারতের দেওবন্দ যাবেন। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত আসার পর পরবর্তী যেকোনো সময় ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। তবে জানুয়ারি মাসে ইজতেমা না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে বিশ্ব ইজতেমা বাস্তবায়ন ও ইজতেমায় সাদপন্থীদের হামলার বিচারের দাবিতে উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরে খেলার মাঠে সকাল ৯টায় একটি জরুরি মশওয়ারা সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও সেটিও বাতিল করা হয়েছে। এ বিষয়ে তাবলিগের সাথী জহির ইবনে মুসলিম নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও প্রশাসনের অনুমতি না পাওয়ায় পূর্বনির্ধারিত সম্মেলনটি বাতিল করা হয়েছে।