ক্রাইমবার্তা রিপোর্টঃ বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের আগে বিরোধীদের দমনে ব্যাপক ধরপাকড় হয়েছে বলে এর সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
বৃহস্পতিবার সংস্থাটির ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট-২০১৯ প্রকাশিত হয়। এর বাংলাদেশ অংশ নিয়ে ‘বাংলাদেশ : ভায়োলেন্ট রিপ্রেশন অব অপজিশন’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- জবাবদিহিতার পরিবর্তে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা নিপীড়ন, নির্যাতন, গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যায় যুক্ত ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়- রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, সাংবাদিক, বেসরকারি সংস্থার লোকজন এবং শিক্ষার্থীরাও ওই সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ২০১৮ সালের ওই নির্বাচনে গুরুতর জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। নির্বাচনে বিরোধী দলের সদস্যদের ওপর হামলা, ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন এবং নির্বাচন কর্মকর্তাদের পক্ষপাতমূলক আচরণেরও অভিযোগ রয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া পরিচালক ব্রাড অ্যাডামস বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারে; কিন্তু তা করার জন্য সরকার মুক্তমতকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করেছে এবং বিরোধী দলের হাজার হাজার সমর্থকের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। মনে হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার জন্য নিজের নাগরিকদের অধিকারের অপব্যবহার করতে চেয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়- মাদকবিরোধী অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনী ১০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করে এবং হাজার হাজার লোককে গ্রেফতার করেছে। শিক্ষার্থী আন্দোলনে ছাত্রছাত্রীরা ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন এবং পুলিশ হেফাজতেও তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। নির্বাচনের আগে সরকার শত শত বিরোধী রাজনৈতিক সমর্থককে নাটকীয় অভিযোগে আটক করেছে। এছাড়া ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ব্যবহার করে সরকারের সমালোচকদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম ফটোগ্রাফার শহিদুল আলম।
কর্তৃপক্ষ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও জোরপূর্বক অন্তর্ধানের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনীর জবাবদিহিতা আদায়ে ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ এবং অ্যাসিড আক্রমণের ক্ষেত্রে নারীদের সুরক্ষার আইন সঠিকভাবে প্রয়োগ করতেও সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এদিকে গত বছর মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অব্যাহত স্রোত মানবিক ও সরকারি সাহায্য সংস্থাগুলোর ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেছে। শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে বিশেষ করে আশ্রয় ও শিক্ষায় কিছু অবকাঠামোগত উন্নতিতে কাজ করা হয়েছে। তবে রোহিঙ্গা সমস্যাটির মূল সমাধান তাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া, যদিও সেখানে তাদের জীবন ও স্বাধীনতা গুরুতর ঝুঁকিতে।
৬৭৪ পৃষ্ঠার এই ওয়ার্ল্ড রিপোর্টে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ১০০টিরও বেশি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছে। প্রতিবেদনের প্রারম্ভিক নিবন্ধে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নির্বাহী পরিচালক কেনেথ রথ বলেছেন, অনেক দেশে ঘৃণা ও অসহিষ্ণুতা বিস্তারকারী জনপ্রিয়তাবাদীরা একটি প্রতিরোধ গড়ে তুলছে।