আব্দুস সবুর আল-আমিন, কপিলমুনি (খুলনা): বর্তমান সরকারের সদিচ্ছায় মাইকেল মধুসূদন দত্তসহ বিখ্যাত ব্যক্তির স্মৃতি বিজড়িত মৃত কপোতাক্ষ নদ প্রাণ ফিরে পেয়েছে। ফিরে এসেছে নদের স্বাভাবিক গতীর জোয়ার-ভাটা। প্রায় ৩শ কোটি টাকা ব্যয় নদ খনন করা হলেও গলার কাঁটা স্বরূপ নদের মাঝখানে অসমাপ্ত বিজের ভাঙ্গা পিলার অপসারণ করা হয়নি। একদিকে নৌপথ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে স্বাভাবিক জোয়ার-ভাটার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে নদের বক্ষে পলি পড়ে ভরাট হচ্ছে।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলে কপোতাক্ষ নদ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক-বাহক। হাজারও লক্ষ কোটি ঘটনার কালের সাক্ষী এ নদ। কপোতাক্ষ নদের দু’তীরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বাণিজ্যিক নগরী ও বসতী। নদকে ঘিরে সু-প্রচিন কাল থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবন জীবীকার নির্ভর করে আসছে। এক কালের ভয়াল কপোতাক্ষ নদের মৃত্যু উপকূলীয় মানুষের জীবন জীবীকার চালিকা শক্তি থমকে দাঁড়ায়। তাই নদকে বাঁচাতে শুরু করেন আন্দোলন সংগ্রাম।
বর্তমান সরকার এ অঞ্চলের মানুষের দুঃখ দুর্দশা লাগবে ২০১১ সালের নভেম্বর একনেকর সভায় ২৬১ কোটি ৫৪ লাখ ৮৩ হাজার টাকা নদ খননে বরাদ্ধ দেন। কপোতাক্ষ নদ খনন হলো, ফিরে পেলো নতুন জীবন। সত্যি হলো স্বপ্ন। আবার যখন জীবীকার চালিকা শক্তি স্বচল হতে শুরু হলো তখন নদ ভরাটের দুচিন্তা ভর করেছে।
খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি থেকে সাতক্ষীরা সদর হয়ে সরাসরি কলিকাতা যাওয়ার সড়ক নির্মাণে স্বপ্ন দেখেন প্রায় শত বছর পূর্বে আধুনিক বিনোদগঞ্জ বাজারের প্রতিষ্ঠাতা স্বর্গীয় রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু। সে মতো টাকাও সংগ্রহ করে ছিলেন তিনি। তৎকালীন কিছু প্রতিবন্ধকতায় সে সময়ও বাস্থবায়ন সম্ভম হয়নি ব্রিজ নির্মাণ। তবে তৎকালীন সময় ব্রিজ নির্মাণে টাকা কলিকাতার ব্যাংকে জমা রাখেন বলে তার জীবনী থেকে জানা যায়। স্বাধীনতার পরবর্তী সময় এলাকাবাসীর দীর্ঘ দীন ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করে কপিলমুনি কপোতাক্ষ নদের উপর ব্রিজ নির্মাণে।
তারই ফলশ্রুতিতে ২০০০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার সকল প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করে ব্রিজ নির্মাণ কাজে হাত দেয়। কাজ কিছু দিন চলার পর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম দুর্নীতির ফলে বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় ব্রিজের আংশিক কাজ সম্পূর্ণ হয়। পরবর্তীতে পলি পড়ে কপোতাক্ষ নদের মৃত্যু হয়। সে সাথে এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের আন্দোলন-সংগ্রাম ও স্বপ্নের মৃত্যু হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, তৎকালিন সময় কপিলমুনি-সাতক্ষীরার জেঠুয়া ব্রিজ নির্মাণ কাজে ব্যয় ধার্য করা হয় ১ কোটি ৯৩ লাখ ৪২ হাজার ৯০০শত ১৯ টাকা ৫৫ পয়সা। কাজের মান প্রশ্নে পরবর্তীতে তা বৃদ্ধি পায় ২কোটি ৩৬ লাখ টাকায়। নির্মাণের দায়িত্বপায় এন হক এসোসিয়েট নামক খুলনা-৬ সাবেক এমপি নূরুল হকের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কার্যক্রম শুরু করে ২০০০ সালের ১২ এপ্রিল।
এরপর ঐ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি ২০০৩ সালের ১২ নভেম্বর পর্যন্ত আংশিক কাজ করে আইএফআইসি ব্যাংক খুলনা শাখা হতে ১কোটি ৬৭লাখ ৭২২টাকা উত্তোলণ করে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তী পর্যায় বিষয়টি নিয়ে আদালত পর্যন্ত গড়ায়। খুলনা মহানগর হাকিম আদালতে দায়েরকৃত মামলা নং পি-৫৮/০৬ ধারা ৪০৬/৪২০/১০৯/৩৪। যার ফলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে মামলাসহ নানা জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতার কারনে ব্রিজ নির্মাণ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। ব্রিজটির বাকী কাজ সমাপ্ত করতে ইসলাম গ্রুপ নামের আরো একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পুনরায় উক্ত নির্মাণ কাজ শুরু করে।
সে সময় সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড কপোতাক্ষ নদের ¯্রােত বাঁধা পাবে মর্মে একটি চিঠি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়ায় ব্রিজ নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু নদের বক্ষে ১৮টি পিলার মাথা উচু দাঁড়িয়ে থাকে। ২০০৮ সালে সেনাবাহিনী নির্দেশে পিলারের উপরে অংশ ভেঙ্গে ফেলা হয়। পরবর্তীতে নদ খনন করা হলে মাটির নিচের অংশ আজও অপসারণ করা হয়নি। খননে জেগে উঠা পিলারগুলো একদিকে জোয়ার-ভাটা ও নৌযান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে অন্যদিকে নদের বক্ষে পলি পড়ে ভরাট হচ্ছে নদ।
স্থানীয়রা জানান-ভাঙ্গা পিলারে জোয়ার ভাটায় বাঁধা সৃষ্টি হয় নিয়মিত। যার কারণে নদেতে পলি জমা হচ্ছে। আর সে কারনে কপোতাক্ষ নদের আবারও মুত্যুর আশঙ্কা করেছেন তাঁরা। বিশেষজ্ঞদের অভিমত এখনই যদি ঐ পিলার সাম্প্রসারণ না করা হয়, তবে ২৬১ কোটি ৫৪ লাখ ৮৩ হাজার টাকা ভেস্থে যাবে আবারও পলি জমে। কপিলমুনি ইউনিয়ানের চেয়ারম্যান কওসার আলী জোয়াদ্দার বলেন আমরা নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছি বর্তমান সরকারের কারণে।
এলাকার মানুষের সংগ্রামের ফসল কপোতাক্ষ নদ খনন। তা যদি আবার ভরাট হয় ভাঙ্গা পিলারের কারনে, তবে তা হবে দুঃখ জনক। অচিরেই এ সমস্যার সমাধান চাই। একদিকে নির্মাণ কাজে কাল্পনিক অযোতিক যুক্তি, মিথ্যা তথ্য সরবরাহ, অনিয়ম দুর্নীতি এবং ক্ষতিগ্রস্থদের ন্যায় পাওনা না পাওয়া মামলায় ১৯ বছরেও সম্পূর্ণ হয়নি কপিলমুনি কপোতাক্ষ নদে ব্রিজ। অন্যদিকে নদের বক্ষে অসমাপ্ত ব্রিজের ১৮টি ভাঙ্গা পিলার এখন কপোতাক্ষ নদের গলার কাঁটা হয়েছে।
Check Also
বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়িয়ে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেবহাটায় মানববন্ধন
দেবহাটা প্রতিনিধি: স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুদের গ্রেফতার এবং বিএনপির …