জামিনপ্রার্থীদের ভিড় হাইকোর্টে:৯৮ হাজার মিথ্যা মামলায় আসামী ২৫ লাখ নেতাকর্মী

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ   হাইকোর্টে জামিন নিতে এসেছেন হাঁড়িপাতিল ফেরিওয়ালা নয়নউদ্দিন (৭৫)। ২০ জানুয়ারি সকালে হাইকোর্টের এনেক্স ভবনের সামনে বসে এই বৃদ্ধকে পান বাটতে দেখা যায়। হামান দিস্তায় পান বেটে খাচ্ছিলেন। সঙ্গে পুরনো একটি ব্যাগে কিছু পলিথিনসহ দু-একটি কাপড়। পরনে একটি পুরনো পাঞ্জাবি ও সাদা লুঙ্গি। আপন মনে পান বানাচ্ছেন তিনি। কারো দিকে খুব বেশি তাকাচ্ছেনও না। কাছে গিয়ে পরিচয় জানতে চাইলে বলেন, নাম নয়ন উদ্দিন। বাড়ি পাবনার বেড়ায়। এলাকায় বাড়ি বাড়ি ফেরি করে হাঁড়িপাতিল বিক্রি করেন। এ দিয়েই চলে সংসার। বললেন তিনি কোনো দল করেন না। দল না করলেও এই বৃদ্ধ হাইকোর্টে এসেছেন বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলায় জামিন নিতে। এই মামলায় আসামি হওয়ার আগে কোনো দিন হাইকোর্টে আসেননি নয়ন। জামিন নিতে এলেও আইনজীবী কে তা জানেন না তিনি। বলেন, স্থানীয় পৌর বিএনপির সভাপতি জামিন করিয়ে দিবেন বলে তার সঙ্গে এসেছেন। বিএনপি করেন কি না এই প্রশ্নে বৃদ্ধের জবাব, কোনো দল করি না বাবা। ধানের শীষে ভোট দেই। এ জন্য নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নেতারা বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে মামলা দিয়েছে। এক ছেলে আছে। সে মোটর মেকানিকের কাজ করে। তাকে নির্বাচনের আগে বলেছিল বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে। সে চলে যাওয়ায় মামলা দেয়নি। কিন্তু আমাকে কোনো কিছু বলেনি। তবুও মামলা দিয়েছে। নয়ন বলেন, মামলা হওয়ার পর থেকে পুলিশ বাড়ি গিয়ে হানা দেয়। তাই এতদিন পালিয়ে ছিলেন। ভোটও দিতে পারেননি এবার। আর নির্বাচনের পর এসেছেন জামিন নিতে।

যশোরের বাঘারপাড়া থানার বন্দবিলা ইউনিয়নের দক্ষিণ বধারাকান্দী জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন মো: মিজানুর রহমান হাইকোর্টে জামিন নিতে এসেছেন। গতকাল মঙ্গলবার হাইকোর্টের এনেক্স ভবনের সাথে গাছতলায় দেখা হয় তার সাথে। যশোরের অভয়নগর ও বাঘারপাড়া উপজেলা থেকে আসা কয়েক শ’ মানুষের সঙ্গে তিনিও জামিন নিতে এসেছেন। মিজানুর রহমান জানান, নির্বাচনের আগে গত ২৩ ডিসেম্বর যশোরের খাজুরা বাজারে ককটেল বিস্ফোরণের একটি মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমার বাড়ি ওই এলাকা থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে। আমি মসজিদে আজান দেয়া ও নামাজ পাড়ানোর কাজে ব্যস্ত থাকি। ওই ঘটনা সম্পর্কে আমার কিছু জানা নেই।
হাইকোর্টের এনেক্স ভবন এবং আগাম জামিন প্রদানকারী সংশ্লিষ্ট কোর্টের আশপাশে গতকাল দেখা যায় দেশের বিভিন্ন জেলা ও থানা থেকে হাজার হাজার লোক নির্বাচনের আগে দায়ের করা নাশকতার মামলায় জামিন নিতে এসেছেন। নির্বাচনের আগে দায়ের করা নাশকতার মামলায় কোনো কোনো এলাকায় শত শত বিএনপি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় তারা জামিন নিতে এসেছেন।

গত সোমবার বিকেল ৪টায় সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের দক্ষিণ পাশে কারপার্কিংয়ের কাছে পাবনার সাঁথিয়া থেকে আসা লুঙ্গি পরা কয়েকজন লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে মো: আবদুল কুদ্দুস (৪০) জানান, গত ২৪ ডিসেম্বর সাঁথিয়া থানায় দায়ের করা মামলায় জামিন নিতে তিনিসহ ৪০ জন এসেছেন। তিনি জানান, সাঁথিয়ার কাশিনাথপুর আমবাজারে নৌকা পোড়ানোর অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ওই ঘটনা সম্পর্কে তার কিছু জানা নেই। গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে হাইকোর্টে এসেছেন জামিন নিতে। হাইকোর্ট থেকে জামিনও পেয়েছেন। এখন এলাকায় ফিরে যাবেন।

হাইকোর্টের এনেক্স ভবনের সামনে গতকাল দেখা হয়, ভালুকা থানার রাজৈর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জানান, নির্বাচনের আগে গত ২৬ ডিসেম্বর তাদের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা করা হয়। তিনিসহ ভালুকা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফখরুদ্দিন আহমদ বাচ্চুসহ শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীকে এ মামলার আসামি করা হয়। ভালুকা থেকে আসা ছফিরুদ্দিন (৬৫) জানান, গত ২৬ ডিসেম্বর ভালুকা বাজারে গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে ১৩১ জন বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ওই মামলায় তিনি ৮৭তম আসামি। তিনি বলেন, ভালুকা বাজার থেকে তার বাড়ি ৭ কিলোমিটার দূরে। বাস পোড়ানো সম্পর্কে তার কিছুই জানা নেই।

শেরপুর থেকে হাইকোর্টে জামিন নিতে আসেন শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মী। গতকাল হাইকোর্টের সামনে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলা বিএনপির সভাপতি নুরুল আমীনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, নির্বাচনের আগে গত ১৬, ১৭, ২১ ও ২৫ ডিসেম্বর শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় জামিন নিতে হাইকোর্টে এসেছেন।

গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় হাইকোর্টের সামনে গাছতলায় জামিন নিতে আসা শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মী নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়র টি এস আইয়ুব। তিনি সংসদ নির্বাচনে যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর) বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। টি এস আইয়ুব জানান, বাঘারপাড়া ও অভয়নগর থানায় নির্বাচনের আগে ও পরে দায়ের করা ৯টি মামলায় ৩৫০ জন বিএনপি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। গত ২৩, ২৪, ২৬, ২৭ ডিসেম্বর ও ৬ জানুয়ারি এসব মামলা করা হয়। তাদের আগাম জামিন নেয়ার জন্য হাইকোর্টে এসেছেন। এর মধ্যে ৩টি মামলায় জামিন হয়েছে। বাকি মামলায় জামিনের জন্য অপেক্ষা করছেন। তিনি বলেন, মামলার কারণে নেতাকর্মীরা গ্রেফতার আতঙ্কে আছেন। এলাকায় থাকতে পারছেন না। তিনি আভিযোগ করেন, নির্বাচনের দিন তার পোলিং এজেন্ট শামসুর রহমানকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

দেশের বিভিন্ন জেলা ও থানা থেকে জামিন নিতে আসা বেশির ভাগ বিএনপি নেতাকর্মীর জামিন আবেদন করা হয় সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি জয়নুল আবেদীন, বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালসহ বিএনপি সমর্থক বেশ কয়েকজন আইনজীবীর চেম্বার থেকে। জয়নুল আবেদীন বলেন, সারা দেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ জামিন নিতে আসছেন। আমি আমার বেশ কয়েকজন জুনিয়রকে জামিন আবেদন ফাইল করার দায়িত্ব দিয়েছি। তারা এগুলো দেখছেন। হাইকোর্ট এনেক্স ভবনের ৫, ১২, ১৭, ১৮, ১৯, ২২ ও ৩২ নম্বর আদালতে আগাম জামিন আবেদনের শুনানি গ্রহণ করছে বলে আইনজীবীরা জানান।

এ বিষয়ে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, গত সোমবার ও গতকাল তিনি চার শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীর জামিন করিয়েছেন। ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, ঢাকা, নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুর জেলার বিভিন্ন থানা থেকে এসব বিএনপি নেতাকর্মী জামিন নিতে এসেছেন। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এসব মামলা করা হয়েছে। এটা নজিরবিহীন। একতরফা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচন করার জন্য গত ১১ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা করা হয়। প্রায় প্রতিটি থানায় ১০ থেকে ১৫টি নাশকতার মামলা করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনজীবী সগীর হোসেন লিওন বলেন, সোম ও মঙ্গলবার তিনি দুই শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীর জামিন করিয়েছেন। এছাড়া নির্বাচনের পর থেকে এ পর্যন্ত আট শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীর আগাম জামিন করিয়েছেন। এর মধ্যে ঠাকুরগাঁও, পিরোজপুর, নারায়ণগঞ্জ, শেরপুর, যশোর ও মাদারীপুরের বেশি নেতাকর্মী রয়েছেন বলে তিনি জানান। এ বিষয়ে আইনজীবী মাসুদ রানা বলেন, সোম ও মঙ্গলবার তিনি প্রায় ৬০ জন বিএনপি নেতাকর্মীর আগাম জামিন করিয়েছেন।

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ হাইকোর্টে জামিন নিতে আসা প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, বাংলাদেশে বিএনপি করে, ছাত্রদল বা যুবদল করে এমন কোনো নেতাকর্মী ও সমর্থক নেই যাদের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা নেই। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ও পরে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হয়েক হাজার মামলা করা হয়েছে। নি¤œ আদালতে মানুষ জামিন পাচ্ছে না, এ জন্য হাইকোর্টে আসছেন। মামলার কারণে মানুষ নিজেদের কাজকর্ম করতে পারছেন না। ৮২ বা ৮৩ বছরের বৃদ্ধের বিরুদ্ধেও নাশকতার মামলা করা হয়েছে। সরকার যদি আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতো তা হলে এরকম মামলা দিয়ে দেশের মানুষকে হয়রানি করত না। এটা দুঃখজনক। এটা দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এতে মানুষের মৌলিক অধিকার ক্ষুণœ হচ্ছে। দেশের মানুষ শান্তি চায়। এসব মামলা দিয়ে পরিবেশ অশান্ত করা হচ্ছে। আদালতও এসব মামলা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। এটা বিচার বিভাগের জন্য শুভ নয়।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান প্রবীণ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, বর্তমান অনির্বাচিত সরকারের আমলে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মামলা, নির্যাতন সীমাহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে। সারা দেশে হাজার হাজার নেতাকর্মী মামলায় জর্জরিত এবং আতঙ্কে রয়েছে। পুলিশের এজাহারে অজ্ঞাত আসামি উল্লেখ থাকায় তারা গ্রেফতার ও পুলিশের নির্যাতনের ভয়ে ঘরছাড়া। এমন কি রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের স্ত্রী-কন্যাদেরকেও আসামি করার ভয় দেখিয়ে আতঙ্কিত করা হচ্ছে। গ্রেফতার ও হয়রানি হতে মুক্তি পাওয়ার জন্য অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরও মাসের পর মাস তাদেরকে আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। এমনকি ২০১৩ সালের মামলায়ও আজ পর্যন্ত চার্জশিট হয়নি, বিচার হয়নি। কিন্তু আসামিদের জামিনে যাওয়ার পরও নিয়মিত হাজিরা দিতে হচ্ছে। ফলে একদিকে সময় ক্ষেপণ, অন্যদিকে অর্থ ব্যয় হচ্ছে।

খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, হাজার মানুষের ভিড় সরকার প্রশাসন ও সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে ভোট ডাকাতি করে আবার ক্ষমতায় এসেছে। নির্বাচনের আগে ও পরে স্থানীয়ভাবে যাতে প্রতিবাদ না হয় তার জন্য শত শত লোককে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। সেই কারণে দেখা যাচ্ছে প্রতিদিন শত শত নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়ে পুলিশের নির্যাতন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আগাম জামিন নিতে হাইকোর্টের বারান্দায় দিনের পর দিন অবস্থান করছেন। এ অবস্থা এবং তাদের মনের ক্ষোভ দেখে বিরোধী দলের নেতৃত্বের প্রতি অনেকেরই নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ পাচ্ছে। তাই আমি মনে করি, আমাদের নেতাদের অবশ্যই সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। আইনি প্রক্রিয়ায় এসব নেতাকর্মীকে মামলা থেকে মুক্তি দেয়া দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। তাই প্রশাসনিক আদেশে এসব রাজনৈতিক মামলা যাতে প্রত্যাহার হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে।

খন্দকার মাহবুব হোসেন আরো বলেন, বহু নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলা ও হয়রানির মধ্যে ফেলে বিরোধী দলের গণতন্ত্র কায়েম, ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার আন্দোলন কোনো অবস্থায়ই সক্রিয় হবে না বলে আমি মনে করি। তাই এই নির্যাতিত নেতাকর্মীদের মামলার জাল থেকে মুক্ত করতে সক্রিয় ভূমিকা রাখা এখন সময়ের দাবি।
এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

 

৯৮ হাজার মিথ্যা মামলায় আসামী ২৫ লাখ নেতাকর্মী

ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা : বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কোন মেরুদণ্ড নেই। তাদের অধীনের কোন সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারেন না। এই নির্বাচন কমিশন একটি ঠুট জগন্নাথে পরিণত হয়েছে। আর নির্বাচনের নামে তামাশা করেছে আওয়ামী লীগ, জনগণের কাছে তাদের জবাব দিতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১২ টায় ঠাকুরগাঁওয়ে নির্বাচনোত্তর এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
শহরের মির্জা রুহুল আমিন পৌর মিলনায়তনে আয়োজিত এ মতবিনিময় সভা প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল আরো বলেন, এ নির্বাচনে বিএনপি পরাজিত হয়নি, ঐক্যফ্রন্ট পরাজিত হয়নি, পরাজিত হয়েছে গণতন্ত্র, পরাজিত হয়েছে দেশের মানুষ, পরাজিত ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের সকল গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এই আওয়ামী লীগ আর সেই আওয়ামী লীগ নেই। ১৯৭১ সালে যে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার স্বপক্ষে লড়াই করেছে, তারাই আজ দেশের মানুষের ভোটের স্বাধীনতাকে হত্যা করেছে। ভোটের আগের রাতেই ভোট ডাকাতি হয়েছে। আ.লীগের নেতাকর্মীরা পোস্টার ব্যানার ছিড়েছে, গাড়ী ভাংচুর করেছে মামলা দিয়েছে আমাদের নেতাকর্মীদের নামে। এসব কেন করেছে, কারণ তারা জানে জনগণ আওয়ামীগের সাথে নেই। তারা জানে নির্বাচন সুষ্ঠু হলে কোন ভাবেই তাদের পক্ষে ক্ষমতায় আসা সম্ভব নয়, তাই তারা এসব অপকর্ম করেছে, মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছে।
মির্জা ফখরুল আরো বলেন, আমরা এক ভয়াবহ অন্ধকারের মধ্যে পড়ে গেছি, এই বাংলাদেশকে আমরা চিনিনা, এই বাংলাদেশ তো আমরা চাই না। এখন আর কোথাও বিশ্বস নেই, বিচার নেই, দেশের মানুষ যাবে কোথায়? আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার জন্য প্রশাসনকে ঘুষ দিয়েছে, টাকা দিয়েছে, খাম দিয়েছে, বিরিয়ানী পিকনিক খাইয়েছে। কারণ জনগণের প্রতি তাদের আস্থা নেই। আওয়ামী লীগের লজ্জাও নেই শরমও নেই।
৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন আমাদের নেতাকর্মীরা কোথাও কোন আইন ভঙ্গ করেনি, অথচ এ দিন শুধু ঠাকুরগাঁওয়েই আমাদের নেতাকর্মীদের নামে ২১ টি মিথ্যা মামলা  দেয়া হয়েছে। সারা দেশে ৯৮ হাজার মিথ্যা মামলায় ২৫ লাখ নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়েছে।  এভাবে দেশ চলতে পারে না, এই সরকারের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানান মির্জা ফখরুল। জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমানের সভাপতিত্বে ও বিএনপি নেতা মামুনুর রশিদ এর সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির জেলা সহ-সভাপতি গোলাম সারোয়ার রঞ্জু, সুলতানুল ফেরদৌস নম্র, অর্থ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শরিফ, যুগাম-সম্পাদক আনসারুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক জাফুরুল্লাহ,মহিলা দলের সভানেত্রী ফোরাতুন্নাহার প্যারিস, সদর উপজেলা সম্পাদক আ. হামিদ, প্যের সম্পাদক তারেক আদনান, যুবদল নেতা জাহিদ, ছাত্রদল নেতা সুমন প্রমুখ। এ সময় বিএনপি ও অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

Check Also

সাতক্ষীরায় পুত্রবধূর হাতে নির্যাতিত সেই স্কুলশিক্ষক মারা গেছেন

ক্রাইমবাতা রিপোট, সাতক্ষীরা:   ছেলে ও পুত্রবধূর হাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশতলা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।