ভেনেজুয়েলার রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মধ্যে ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়ে গেছে। রাশিয়ার ডেপুটি পররাষ্ট্র মন্ত্রী সের্গেই রায়াবকভ ভেনেজুয়েলায় কোন ধরণের সামরিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এরকম কোন পদক্ষেপ নিলে সেটা বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। বিবিসি এই সংবাদ প্রকাশ করে।
তিনি একই সঙ্গে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর প্রতি মস্কোর সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছেন।
রাশিয়া বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে।
উল্লেখ্য যুক্তরাষ্ট্র এবং আরও কয়েকটি লাতিন আমেরিকান দেশ ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতা হুয়ান গুয়াইদোকেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
বুধবার রাজধানী কারাকাসে সরকারবিরোধী এক বিক্ষোভের সময় বিরোধী নেতা হুয়ান গুয়াইদো বর্তমান প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে অবৈধ উল্লেখ করে নিজেকে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এরপরই ওয়াশিংটনের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন মি. মাদুরো।
মার্কিন কূটনীতিকদের দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এনিয়ে দক্ষিণ আমেরিকার আঞ্চলিক রাজনীতিতে উত্তেজনার সৃষ্টি হযেছে।
বিরোধী নেতা হুয়ান গুয়াইদোকে সমর্থন দেওয়ার জন্যে যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার সামরিক বাহিনীর প্রতি আহবান জানালেও এই বাহিনী এখনও পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর প্রতিই অনুগত রয়েছে।
২০১৩ সালে ইউগো চাভেজের মৃত্যুর পর ক্ষমতা গ্রহণ করেন মি. মাদুরো এবং গত মে মাসে অনুষ্ঠিত বিতর্কিত নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
বিরোধীরা ওই নির্বাচন বয়কট করে তাতে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এনেছিল।
ভেনেজুয়েলায় এই রাজনৈতিক অস্থিরতা এমন এক সময়ে ঘটছে যখন দেশটির অর্থনীতি পুরোপুরি বিপর্যস্ত, জ্বালানী সঙ্কটসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অভাবের কারণে ইতোমধ্যে কয়েক লাখ মানুষ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
প্রেসিডেন্ট মাদুরো এজন্যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করেছেন।
বিরোধীদের নিয়ন্ত্রিত ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির প্রধান মি. গুয়াইদোর সমর্থনে বুধবার রাজপথে নেমে আসে হাজার হাজার মানুষ।
এসময় তিনি ডান হাত উপরের দিকে তুলে শপথ নেওয়ার মতো করে নিজেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেন।
সরকারের নির্দেশ অমান্য করার জন্যে তিনি সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিও আহবান জানান। দেশটির বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা বলছে, গত দুদিনের বিক্ষোভের সময় ১৪ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মি. মাদুরোরর শাসনকে অবৈধ হিসেবে ঘোষণা করে মি. গুয়াইদোকে স্বীকৃতি দেন। তিনি বলেন, সামরিক হস্তক্ষেপের কথা তিনি বিবেচনা করছেন না তবে যেকোন কিছুই হতে পারে।
ব্রাজিলসহ দক্ষিণ আমেরিকার সাতটি দেশ মি. গুয়াইদোকে ভেনেজুয়েলার বৈধ প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সমর্থন দিয়েছে কানাডাও।
তবে নতুন করে নির্বাচন আয়োজনের কথা বলেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। অন্যদিকে, রাশিয়া যেসব দেশ ক্ষমতার পালাবদল চায়, তাদের সমালোচনা করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপ সেখানে বিপর্যয় ডেকে আনবে।
মেক্সিকো, বলিভিয়া এবং কিউবা প্রেসিডেন্ট মাদুরোকে সমর্থন দিয়েছে। তুর্কী প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এরদোয়ান টুইট করে লিখেছেন, “আমার ভাই মাদুরো, সোজা হয়ে দাঁড়ান। আমরা আপনার পাশেই আছি।”
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের একজন মুখপাত্র শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে সঙ্কট সমাধানের আহবান জানিয়েছেন।
কিন্তু এরপর কি হতে পারে?
বিবিসির সংবাদতারা বলছেন, এর বেশিরভাগই নির্ভর করছে সামরিক বাহিনীর ওপর। জেনারেলরা বর্তমান সরকারকে সমর্থন করছেন কিন্তু দেশের ভেতরে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা আর বাইরে থাকা আসা চাপের পরেও গোটা বাহিনী বর্তমান প্রেসিডেন্টের প্রতি কতোটা অনুগত থাকতে পারবে সেটাই প্রশ্ন!