ক্রাইমবার্তা রিপোর্টঃ প্রকল্পের পর প্রকল্প চলছে বছরের পর বছর, কিন্তু জলাবদ্ধতা নিরসন হচ্ছে না বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম শহরের। নগরবাসী জলদুর্ভোগের কবল থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না। শুধু চট্টগ্রাম শহরের এই জলাবদ্ধতা নিরসনে ১০ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান তিন প্রকল্পের কোনো উত্তরণই হচ্ছে না। আবারো খাল খনন, ভূমি অধিগ্রহণ, রিটেইনিং ওয়াল ও ফ্লাড ওয়াল নির্মাণের জন্য এক হাজার ৬২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন নতুন প্রকল্পের প্রস্তাবনা দিয়েছে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
এডিপি ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, দুর্বল পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার কারণে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে অল্প বৃষ্টিতেই বেশির ভাগ এলাকায় হাঁটু থেকে কোমর অবধি পানি জমে চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি করে। এই দুর্ভোগ লাঘবের জন্য আবারো এক হাজার ৬২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পের নাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলমগ্নতা, জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কর্ণফুলী নদীর ডান তীরে রিটেইনিং ওয়াল ও ফ্লাড ওয়াল নির্মাণের মাধ্যমে জোয়ার-বন্যা থেকে চট্টগ্রাম শহররক্ষা এবং রেগুলেটর নির্মাণ ও পাম্প হাউজ স্থাপনের মাধ্যমে শহর এলাকায় লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ রোধ এবং বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশন করা যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এডিপি ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সিডিএর তথ্যানুযায়ী, জলাবদ্ধতা নিরসনে বর্তমানে তিনটি প্রকল্প চলমান আছে। সেগুলো হলো, ২০১৭ সালে নেয়া দুই হাজার ৬১৬.৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্প, এক হাজার ৯৯৪.৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম সিটির চাক্তাই খাল থেকে কালুরঘাট ব্রিজ পর্যন্ত ১২টি পাম্প হাউজসহ রেগুলেটর বা স্লুইস গেট নির্মাণ, বাঁধ- কাম-রাস্তা ও প্রটেকশন কাজ, পাঁচ হাজার ৬১৬.৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্প।
চট্টগ্রাম শহরের পূর্ব দিকে কর্ণফুলী নদী এবং উত্তর দিকে হালদা নদী অবস্থিত। কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী মূল শিল্প এলাকা মূলত সমুদ্রবন্দর, পাহাড়তলীর রেলওয়ে এলাকা, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর, কালুরঘাট ভারী শিল্প এলাকা নিয়ে গঠিত। কর্ণফুলী ও হালদা নদী দু’টি চট্টগ্রাম মহানগরীর পানি নিষ্কাশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ২৩টি প্রাইমারি খালের প্রবাহ কর্ণফুলীতে, ৩টি খালের প্রবাহ হালদা নদীতে এবং ১৪টি খালের প্রবাহ বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগরীর পানি নিষ্কাশন সমস্যার মূল কারণ হলো বৃষ্টির পানি ও কর্ণফুলী নদীর জোয়ার ভাটা। কর্ণফুলী ও হালদা নদীর ডানতীরে কোনো বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ না থাকায় উঁচু জোয়ারের প্রভাবে কর্ণফুলী নদীর পানি নগরীতে প্রবেশ করে।
এ ছাড়া সামুদ্রিক ঝড়, সাইক্লোন ও জলোচ্ছ্বাসের প্রভাবে পানির উচ্চতা হঠাৎ ও দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। বেশির ভাগ খালের পানি ধারণক্ষমতা কম, গৃহস্থালি ও শিল্প-কারখানা থেকে নির্গত বর্জ্য এবং পর্যাপ্ত নিষ্কাশনসুবিধা না থাকায় ভরা জোয়ার ও ভারী বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
এ সমস্যা সমাধানের জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র পানিসম্পদমন্ত্রীর কাছে ডিও (আধা সরকারি পত্র) চিঠি পাঠান। সে জন্য বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম ওয়াসা একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে। সে পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হচ্ছে।
পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্র জানায়, এই প্রকল্পের ব্যয় প্রথমে ২ হাজার ৫৯৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়। পরে বিভিন্ন খাতে ব্যয়ের পরিমাণ নিয়ে আপত্তির কারণে খরচ কমিয়ে আনা হয়। পিইসি সভা থেকে বলা হয়েছিল, ভূমি অধিগ্রহণের ব্যাপারে আরো যাচাই করা উচিত।
পাশাপাশি প্রথম বছরেই যদি অধিগ্রহণ করা না যায় তাহলে পরে জটিলতায় পড়তে হবে। এ ছাড়া রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের ক্ষেত্রে নকশা, পরিমাণ, দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা ডিপিপিতে উল্লেখ করে এর ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ করতে হবে। ড্রেজিং, ফ্লাড ওয়াল নির্মাণের প্রতি মিটার ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে আনা উচিত। সার্বিক পর্যালোচনা করে পিইসি সভা প্রকল্প ব্যয় ৯৭৪ কোটি ১ লাখ টাকা কমিয়ে এক হাজার ৬২০ কোটি ৭৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা করার সুপারিশ করেছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।