ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি বাই ৩ ফুট ৫ ইঞ্চি একটি কক্ষ। ভেতরে আড়াই ফুট বাই ৪ ফুট আট ইঞ্চি একটি খাট। রয়েছে কয়েকশ’ বইয়ের স্তূপকৃত একটি টেবিলও। খাটের চারপাশেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য বই। পেছনে একটি হ্যাংগারে ঝুলছে কিছু কাপড়-চোপড়। পরিবার পরিজন ছেড়ে বিলাসিতাহীন এমন একটি কক্ষে প্রায় এক বছর ধরে দিনাতিপাত করছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বিএনপির চরম দুঃসময়ে যখন কথা বলার কোনো নেতার দেখা মেলে না তখনও নানা ইস্যুতে সরব থাকেন তিনি।
স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রাখা এই সাবেক ছাত্রনেতার স্বেচ্ছায় অবরুদ্ধ থাকা নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে সমালোচনা থাকলেও সব কিছুকে উপেক্ষা করে গত বছরের ২৮শে জানুয়ারি থেকে বিএনপির পল্টন কার্যালয়ের তৃতীয় তলার একই জায়গায় দিন কাটাচ্ছেন তিনি।
সারাদিনের কাজের মধ্যে মাঝে মাঝে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন, ফাঁকে ফাঁকে কার্যালয়ের ভেতরেই হাঁটাহাঁটি করেন। নেতাকর্মীরা এলে সাক্ষাৎ দেন। বাকি সময় বই পড়েই কাটান তিনি। এই এক বছরে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কয়েকবার ঝটিকা মিছিলও করেছেন রিজভী। দলীয় সমাবেশের কর্মসূচিতে কার্যালয়ের মূল ফটকের সামনে বের হয়েছিলেন দু’-একবার। এ ছাড়া, কেন্দ্রঘোষিত কালো পতাকা মিছিল চলাকালে কার্যালয়ের তিন তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে পতাকা উড়িয়েছিলেন একবার। দলটির দপ্তর সম্পাদক হিসেবে অঘোষিত মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করা এই সাবেক ছাত্রনেতা দুইটি ঈদও কাটিয়েছেন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভেতরেই। খাওয়া দাওয়ার খুব একটা চাহিদা না থাকায় কার্যালয়ের স্টাফদের জন্য যে রান্না হয় তা থেকেই সেরে নেন। তবে প্রায় নিয়মিতই পরিবারের সদস্য ও নেতাকর্মীরাও খাবার নিয়ে আসেন তার জন্য। দীর্ঘদিন ধরে স্বেচ্ছায় অবরুদ্ধ সময়ে স্ত্রী আঞ্জুমান আরা আইভী ও পরিবারের অন্য সদস্যদের খুবই মিস করেন বলে মানবজমিনকে জানান তিনি।
ঘর-বাড়ি, পরিবার-পরিজন ছেড়ে দলীয় কার্যালয়ে এসে পড়ে থাকা রিজভীর জীবন যেমনি কাটুক স্বেচ্ছায় অফিসবন্দি এই নেতা সহকর্মী-শুভাকাক্সিক্ষ হিসেবে এমন কয়েকজনকে পেয়েছেন, যারা সব সময় ছায়ার মতো তার পাশে থাকেন। তার সবরকম প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করেন। এরাই মূলত, রিজভীর নিঃসঙ্গ অফিস যাপনের সঙ্গী। বাসা থেকে রান্না করা খাবার এনেও খাওয়ান তাকে। নেতাদের মধ্যে কার্যালয়ে অধিকাংশ সময় রিজভী আহমেদের সঙ্গে থাকেন বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ ও নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম। তবে তারা সবাই ২৪ ঘণ্টা কার্যালয়ে থাকেন না।
রাতে কেউ বাসায় যান আবার কেউ মাঝে মাঝে কার্যালয়েই থেকে যান। রিজভী আহমেদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাকসুর ভিপি থাকাকালীন সৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে রাজশাহী রেলস্টেশনে গুলিবিদ্ধ হন। তখন থেকেই খাবারসহ নানান শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া ৩৫ দিন রিমান্ডে থাকার ঘটনাও ঘটেছে এই নেতার জীবনে। ছিলেন ছাত্রদলের নির্বাচিত সভাপতি। বগুড়ায় জন্ম নেয়া এই নেতা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে পড়াশোনা শেষে টানা ২১ বছর ঢাকায় বসবাস করছেন। গত বছরের ৮ই ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার ১১ দিন আগে থেকে পরিবারের সঙ্গ ছাড়া নয়াপল্টন দলের কার্যালয়েই দিন কাটাচ্ছেন তিনি। দৈনন্দিন কাজকর্মের বিষয়ে রিজভী আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, খুব ভোরেই ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা করি। পরে তিন তলার সংবাদ সম্মেলন কক্ষে অনেকক্ষণ হাঁটাহাঁটি করি। কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে সকালের নাশতা করি। রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত দিনের সময় পার হয় দলীয় কর্মকাণ্ডে।
এ ছাড়াও বড় একটি সময় পার হয় উপন্যাস আর রাজনৈতিক বই পড়ে। মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, দেশনেত্রী কারাগারে যাওয়ার পর ১৫-২০টা মামলায় আমাকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি রয়েছে। এর আগে ৭০টির বেশি মামলা ছিল আমার নামে। তিনি বলেন, আমি কার্যালয়ে অবস্থান করছি দেশনেত্রীর মুক্তির আন্দোলন হিসেবে। যেহেতু অনেকগুলো মামলা আছে তাই এখানে বসেই কথা বলছি। হাত এগিয়ে পুলিশের কাছে ধরা দিচ্ছি না। তার পরও কার্যালয়ের সামনে পুলিশের উপস্থিতি কম দেখলে সময় সুযোগ বুঝে মাঝে মাঝে মিছিলে বের হচ্ছি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারামুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত কার্যালয়েই থাকতে চাই।