জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ জানুয়ারি জেলা আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সভায় শহরের যানজট দূরীকরণ ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ফুটপাতের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, অবৈধ ব্যাটারি চালিত ভ্যান, ইঞ্জিনভ্যান, আলম সাধু, ইজিবাইক ও মহেন্দ্র অপসারনের জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এরই অংশ হিসেবে ১৯ জানুয়ারি থেকে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, পৌরসভা, সড়ক ও জনপথ বিভাগ যৌথভাবে সাতক্ষীরা পৌরসভার ৩৬ বর্গ কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশ, সড়ক ও জনপথ বিভাগের সকল রাস্তার ফুটপাতের অবৈধ স্থাপনা অপসারন শুরু করে। একইভাবে কয়েক’শ অবৈধ ব্যাটারি চালিত ভ্যান, ইঞ্জিনভ্যান, আলম সাধু, ইজিবাইক ও মহেন্দ্র আটক করা করা হয় ।
সড়কের উপর যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, গাড়ি থামানো, গাড়িতে অতিরিক্ত যাত্রী ও বাসের ছাদে যাত্রী বহন রোধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। এ অভিযান তিন মাস ধরে চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সদর শাখার সভাপতি অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু ও পৌর শাখার সাবেক সভাপতি মকবুল হোসেন জানান, সাতক্ষীরা শহরের পুরাতন সাতক্ষীরা, রাজারবাগান সরকারি কলেজ মোড়, ফুড অফিস মোড়, পোষ্ট অফিস মোড়, নারিকেলতলা মোড়, সদর হাসপাতাল মোড়, পাকাপুলের মোড়, পৌরদীঘির মোড়, দিবা নৈশ কলেজ মোড়, সঙ্গীতা মোড়, লাবনী মোড়, বাঙালের মোড়, বাস টার্মিনাল চত্বর, সার্কিট হাউজ মোড়, সিটি কলেজ মোড়, আমতলা মোড়, মিলবাজার কামাননগর মোড়সহ বিভিন্ন সড়কের দু’ ধারের অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়।
গত বুধবার সদর হাসপাতাল মোড়ে প্রকাশ্যে ধুমপান করা ও রাস্তার উপর গাড়ি রাখার অপরাধে এক ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল চালককে তিন’শ টাকা জরিমানা করা হয়। কয়েক’শ অবৈধ ব্যাটারি চালিত ভ্যান, ইঞ্জিনভ্যান, আলম সাধু, ইজিবাইক ও মহেন্দ্র আটক ও গ্রাম থেকে আসা ওইসব বাহনের উপর কড়াকড়ি আরোপ করা, নির্ধারিত স্থানের বাইরে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা বন্ধ করা, রাস্তার উপরে গাড়ি পার্কিং বন্ধ করে দেওয়ায় শহরের যানজট কমে যায়। কমতে থাকে পথদুর্ঘটনা।
এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ফিরে আসে স্বস্তির নিশ্বাস। তবে একাদশ সংসদীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সদর উপজেলার ভাড়–খালি গ্রামের মৃত মেহের আলী সরদারের ছেলে জামায়াত নেতা ২০১৬ সালের ৮ ফেব্র“য়ারি শহরের মুন্সিপাড়ার জামায়াত নেতা মাওলানা আফছার আলীর বাড়িতে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে সহকারি উপপরিদর্শক সেলিম রেজার দায়েরকৃত ১০ নং মামলায় ওই বছরের
৯ সেপ্টেম্বর গ্রেফতারকৃত নব্য আওয়ামী লীগার নুরুল হক শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদের পৌর সভাপতি সেজে পৌর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের নেমপ্লেট ও স্থানীয় সাংসদের ছবি ঝুলিয়ে দিয়ে গত বছরের নভেম্বর মাসে সদর হাসপতালের প্রধান ফটকের মুখে নির্মান করেন শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদের অফিস।
গত বুধবার সদর হাসপাতাল এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হলেও নুরুল হকের দাপটে ভাঙা হয়নি জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদের ওই অফিসটি। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা সড়ক, পাকাপুল থেকে বড়বাজার সড়ক, কামানগর সড়কের অবৈধ স্থাপনা অপসারন করা না হওয়ায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদর হাসপাতাল সংলগ্ন কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বুধবার সদর হাসপাতালের সামনের ফুটপাত থেকে অবৈধ স্থাপনা অপসারনের এক থেকে তিনদিন যেতে না যেতেই রোববার ভোর থেকে পৌর যুবলীগ, সাতক্ষীরা পৌর শাখার ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, ৯ নং ওয়ার্ড জাতীয় শ্রমিক লীগ, ট্যাক্সিক্যাব শ্রমিক লীগ, সাতক্ষীরা জেলা বাস মিনিবাস-কোচ ও মাইক্রোবাস মালিক সমিতির কাউন্টার এর সাইন বোর্ড টানিয়ে ফুটপাতে নতুন জবরদখলের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এসব জবরদখলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ৯ নং ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা শহরের পলাশপোলের আল আমিন, গোল্ড লিফ সিগারেট কোম্পানীর এজেন্টকে গলা কেটে হত্যা চেষ্টা মামলার আসামী পলাশ পোলের যুবলীগ নেতা মেহেদী হাসান, লিটন, একই মামলার আসামী তার ভাই আওয়ামী লীগ কর্মী ইমাম হোসেন, অ্যাম্বুলেন্স চালক যুবলীগ নেতা পরিচয়দানকারি পলাশপোলের শিমুল হোসেন ও সাজ্জাত হোসেন, ভাঙড়ী মালামাল বিক্রেতা আবু হাসানসহ তাদের একটি চক্র।
প্রকাশ্যে ঘর নির্মাণের পাশাপাশি তারা ওই ঘর মাসিক ভাড়ার বিনিময়ে কয়েকজনের কাছ থেকে ইতিমধ্যেই অগ্রিম টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
শহরের কয়েকজন সচেতন মানুষ জানান, এ অবস্থা শুধু সদর হাসপাতাল এলাকায় নয়। শহরের পোষ্ট অফিস মোড়, বিউটি হোটেল মোড় কলেজ মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে সাইন বোর্ড না টানিয়েই কৌশলে দলীয় অফিস বানানোর নাম করে জায়গা দখলে রাখার প্রক্রিয়া অব্যহত রয়েছে। অবিলম্বে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে ফুটপাথ আবারো জবর দখলকারিদের হাতে চলে যাবে। এতে নতুন করে সুবিধাভোগী তৈরি হবে।
সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মঞ্জুরুল করিম জানান, শহরের মধ্যকার সকল ফুটপাতে অবৈধ স্থাপনা অপসারন করার জন্য ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে নিয়ে তালিকা তৈরি করা হয়েছে। উচ্ছেদ করা ফুটপাতে নতুন করে নির্মাণ কাজ শুরু করলে তা যে কোন সময় ভেঙে দেওয়ার পাশপাশি দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জানতে চাইলে রোববার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইলতুৎ মিশ এ প্রতিবেদকে জানান, তিনি একটি জরুরী মিটিং এ রয়েছেন পরে কথা বলবেন।
রোববার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মনসুর আহম্মদ ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে মোবাইল ফোন দু’টি বন্ধ পাওয়া যায়।
জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান, ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে সব ধরণের আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
##