ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ ঘটনার মূল হোতা আবু সালেকের স্থলে প্রায় তিন বছর কারাবন্দি ছিলেন জাহালম।
২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকটির মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট শাখা থেকে তোলা হয়েছিল এসব অর্থ।
পাঁচ বছর আগে সালেককে তলব করে দুদক চিঠি দিলে সেই চিঠি পৌঁছে জাহালমের টাঙ্গাইলের বাড়ির ঠিকানায়।
এরপর নরসিংদীর ঘোড়াশালের বাংলাদেশ জুট মিলের শ্রমিক জাহালমের জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার।
দুদকে গিয়ে নিজের পরিচয় দিয়েও কপাল ফেরেনি জাহালমের।
সোনালী ব্যাংকে তার কোনো অ্যাকাউন্ট না থাকলেও দুদকে উপস্থিত বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তারা অনুসন্ধানকালে জাহালমকেই ‘আবু সালেক’ হিসেবে শনাক্ত করেন।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঘোড়াশাল থেকে জাহালমকে গ্রেফতার করে দুদক।
অথচ এসব টাকা আত্মসাতের মূল হোতা রয়ে যান অন্তরালে।
গণমাধ্যমে এ ঘটনা এলে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে। টনক নড়ে দুদকের। এরপর বিনা দোষে কারাভোগী জাহালম পরিবারের কাছে ফিরে যান।
শুরু হয় আসামী আবু সালেকের খোঁজ।
জানা গেছে, আবু সালেকের খোঁজ এখনবধি না পাওয়া গেলেও তার বিপুল সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে।
এই ৯ বছরে সোনালী ব্যাংকের ওই অর্থে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় অনেক সম্পত্তি গড়েছেন সালেক।
কয়েক বছর আগে বোদায় স্যামসাং-এর শো-রুম দিয়ে বসেছিলেন সালেক। তবে গত ৮ মাস আগে সেটি বন্ধ করে দেন তিনি।
এরপর বোদা পৌরসভার প্রামাণিকপাড়ায় প্রায় ২০ শতক জমির ওপর একটি একতলা বিশাল বাড়ি তৈরি করেন সালেক।
তবে সে বাড়িটি এখন লোকশুন্য। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সেই বাড়ির গেটে তালা ঝুলছে।
জানা গেছে, সিপাহিপাড়ায় ২০ শতক জমির ওপর ভাড়ায় ‘ঢাকা বেকারি’ নামের রুটি-বিস্কুটের কারখানা দিয়েছিলেন সালেক।
তবে চুক্তিপত্রে প্রতারণার অভিযোগে সেই ব্যবসাও জমে ওঠেনি তার।
কারখানা জমির মালিক শাহীন আলম জানান, কারখানা করতে খরচ হয়েছে সাড়ে ৮ লাখ টাকা।
চুক্তিপত্রে জামানত হিসেবে সে টাকার কথা লেখার কথা থাকলেও আবু সালেক দেড় লাখ টাকার বেশি লেখেননি বলে অভিযোগ করেন শাহীন আলম।
বোদা উপজেলার স্থানীয়রা বলছেন, এতোদিন এলাকায় তাকে প্রকাশ্যে দেখা গেলেও গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর তাকে আর দেখা যাচ্ছে না।
তবে বেশ কয়েকজন স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি সালেককে হেলমেট মাথায় মোটরসাইকেলযোগে ঘুরতে দেখা গেছে।
তবে এখন সেটাও দেখা যাচ্ছে না।
সালেকের স্বজনদের বক্তব্য, এক বছর ধরে সালেক বাড়িতে যাচ্ছেন না। তার সঙ্গে যোগাযোগও নেই তাদের।
সালেক ভারত পালিয়ে গেছেন বলে ধারণা তাদের।
সালেকের ভগ্নিপতি খাদেমুল ইসলাম বলেন, গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি সালেকের সঙ্গে আমার শেষ দেখা হয়েছিল। এরপর তার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।
হঠাৎ করে আবু সালেক সম্পত্তির মালিক হলেন কী করে সেই প্রশ্নে খাদেমুল ইসলাম জানান, তারা জানতেন ঢাকায় সালেকের শেয়ার ব্যবসা, দুধের ব্যবসা এবং গার্মেন্টের যন্ত্রাংশ সাপ্লাইয়ের ব্যবসা আছে।