দুদকের ঘুষ গ্রহণ মামলা রিভিউতেও পার পেলেন না নাজমুল হুদা দম্পতি

ক্রাইমর্বাতা রিপোট: ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে ঘুষ গ্রহণ মামলার তদন্ত আটকানোর আর কোনো পথ রইল না সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী নাজমুল হুদা ও তার স্ত্রী অ্যাডভোকেট সিগমা হুদার। ৬ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ শুনানি শেষে এ সংক্রান্ত আবেদন খারিজ করে দেন।

অতিসম্প্রতি ওই দম্পতির রিভিউ আবেদন খারিজের আদেশের কপি অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দুদক চেয়ারম্যান ও নিম্ন আদালতে পাঠানো হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এ মামলায় দীর্ঘদিন ধরে জামিন ছাড়াই বহাল তবিয়তে আছেন এই দম্পতি।

আদালত এরই মধ্যে নাজমুল হুদা দম্পতির ‘জামিন বহাল না’ থাকার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের নজরেও এনেছেন। অবহিত করা হয়েছে দুদককেও।

দুদকের একটি সূত্র যুগান্তরকে বলেছে, তদন্তাধীন এ মামলায় নামজুল হুদা দম্পতি যদি জামিন না নেন, তাহলে তদন্ত কর্মকর্তা চাইলে যে কোনো সময় তাদের গ্রেফতার করতে পারেন।

জানতে চাইলে দুদকের মহাপরিচালক (লিগ্যাল) মো. মঈদুল ইসলাম বলেন, আইনে তদন্তাধীন মামলায় আসামি গ্রেফতারের ক্ষমতা দুদক কর্মকর্তাদের দেয়া আছে। কোনো আসামি জামিন না নিয়ে থাকলে তদন্তের স্বার্থে ওই আসামিকে তদন্ত কর্মকর্তা যে কোনো সময় গ্রেফতার করতে পারবেন।

কথা হয় দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীরের সঙ্গে। তিনি  বলেন, আপিল বিভাগ নাজমুল হুদা দম্পতির রিভিউ আবেদন দুটি খারিজ করে দিয়েছেন। ফলে ঘুষ গ্রহণের ওই মামলাটি তদন্তে আর কোনো বাধা নেই। এ মামলায় আসামিদের জামিন নিতে হবে। জামিন ছাড়া কোনো আসামির বহাল তবিয়তে থাকার সুযোগ নেই।

এর আগে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণের অপর এক মামলায় শেষ পর্যন্ত নাজমুল হুদার চার বছরের সাজা বহাল রাখেন হাইকোর্ট। ওই মামলায় ৬ জানুয়ারি তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে ঘুষ গ্রহণ মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, যমুনা সেতুর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মার্গানেট ওয়ান লিমিটেডকে নিযুক্ত করা হয়। যোগাযোগমন্ত্রী থাকার সময় নাজমুল হুদা ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মাসে ৫০ হাজার টাকা উৎকোচ দাবি করেন।

দাবিকৃত টাকা তার স্ত্রীর মালিকানায় পরিচালিত ‘খবরের অন্তরালে’ পত্রিকার হিসাবে জমা দেয়ার জন্য বলেন। টাকা দেয়া না হলে ওই প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারি নিয়োগ বাতিল করে কালো তালিকাভুক্ত করার হুমকি দেয়া হয়। অবশেষে নিরুপায় হয়ে ব্যাপক ব্যবসায়িক ক্ষতি বিবেচনা করে মাসিক ২৫ হাজার টাকা উৎকোচ প্রদানের প্রস্তাব করলে নাজমুদ হুদা দম্পতি তাতে রাজি হন।

পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মর্গানেট ওয়ান লিমিটেডের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালকের কাছ থেকে ২০০৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০০৬ সালের ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে চেকের মাধ্যমে ৬ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন। ২০০৮ সালের ১৮ জুন রাজধানীর মতিঝিল থানায় মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ বেলাল হোসেন।

চাঞ্চল্যকর এ মামলায় ২০০৮ সালের ২২ জুলাই পাঁচজন সাক্ষী আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তারা হলেন- সৈয়দ আমেদ ফারুক, রুস্তম আলী হাওলাদার, এসএম আবদুল মান্নান, মো. আনোয়ারুল হক ও মো. মোবারক হোসেন।

জামিন ছাড়াই বহাল তবিয়তে দীর্ঘদিন : মামলার নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আসামি নাজমুল হুদা এ মামলায় ২০০৯ সালের ২৮ জানুয়ারি তিন মাসের জামিন লাভ করেন। পরে ওই বছর ২২ এপ্রিল জামিন আদেশ এক বছরের জন্য বাড়ানো হয়।

২০১৪ সালের ৭ জুলাই হাইকোর্ট বিভাগ অপর এক আদেশে মামলার কার্যক্রম রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত করেন এবং ২০১৬ সালে ২৩ মার্চ অপর এক আদেশে তা কোয়াশ করা হয়। ২০১৭ সালের ৭ জুন হাইকোর্ট বিভাগ কোয়াশ আদেশ সেটএসাইট করেন।

অপর আসামি অ্যাডভোকেট সিগমা হুদাকে ২০০৮ সালের আগস্টে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ দুই মাসের জামিন দেন। পরে ২০১৪ সালের ৭ জুলাই মামলার কার্যক্রম রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের ক্রিমিনাল মিস পিটিশন ফর লিভ টু আপিল নম্বর ৮৬/২০১৭ সংক্রান্তে ২০১৭ সালের ৭ জুন এক আদেশে হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত কোয়াশ আদেশ সেটএসাইট করা হয়।

অর্থাৎ আসামি ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার জামিন সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ২০০৯ সালের ২২ এপ্রিল এক আদেশে এক বছর বর্ধিত হলেও এর পর জামিন বর্ধিত করার আর কোনো আদেশ হয়নি এবং অপর আসামি অ্যাডভোকেট সিগমা হুদার জামিনও বহাল নেই।

শেষ পর্যন্ত ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা দম্পতি সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে ক্রিমিনাল রিভিউ পিটিশন দায়ের করেন। ৬ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগে তা খারিজ হয়ে যায়। ওই খারিজ আদেশের কপি নিম্ন আদালতে পাঠানো হয়। ১৯ জানুয়ারি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল নিম্ন আদালতে।

কিন্তু দুদক এদিন তা দাখিল করেনি। এজন্য ঢাকা মহানগর হাকিম সত্যব্রদ শিকদার ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী দিন ধার্য করেন।যুগান্তর

Check Also

গাড়িচাপায় বুয়েট শিক্ষার্থী মাসুদের মৃত্যু ‘হত্যাকাণ্ড’

প্রাইভেটকার চাপায় বুয়েট শিক্ষার্থী মুহতাসিম মাসুদের মৃত্যুকে ‘হত্যাকাণ্ড’ বর্ণনা করে দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তিসহ ৬ দফা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।