ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ স্ত্রী কমলা দাস। তার ভ্যানচালক স্বামীর নাম সুবির দাস। ৪ বছর আগে তার স্বামী সুবিরের ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়। এটি কি আত্মহত্যা নাকি কোনো পরিকল্পিত হত্যাকান্ড- সে সম্পর্কে ছিল না কোনো ধারণা। এমনকি কোনো কূল-কিনারাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে এই পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন হল সিআইডি পুলিশের হাত ধরে। অন্য ৩ সহযোগীর সাথে মিলে স্বামী সুবিরকে পরিকল্পিতভাবে শ্বাসরোধ করে হত্যার সময় সুবিরের পা চেপে ধরে রেখে মৃত্যু নিশ্চিত করে স্ত্রী কমলা।
জানা যায়, হত্যাকান্ডের ৪ বছর পর রাজবাড়ী জেলা সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক শেখ মোঃ আক্তারুজ্জামান বৃহস্পতিবার নিহত ভ্যানচালক সুবির দাসের স্ত্রী কমলা দাসকে গ্রেফতার করে। পরে রাজবাড়ী আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে কমলা। এসময় স্বামীকে হত্যায় অন্য ৩ অভিযুক্ত হিসেবে বিল্লাল, আলাল ও আজিজুলের নাম বলে সে।
জবানবন্দীতে কমলা জানায়, রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের ঠাঁকুর নওপাড়া গ্রামের ভ্যানচালক সুবির দাসকে (৪০) হত্যার সময় স্ত্রী কমলা দাস পা চেপে ধরে রাখে, বিল্লাল হাত চেপে ধরে রাখে, আলাল বুকের উপর উঠে বসে আর আজিজুল শ্বাসরোধ করে সুবিরের মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর গাছের সাথে রশি দিয়ে সুবিরের লাশ ঝুলিয়ে রাখে তারা। নিহত সুবির দাস উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের ঠাঁকুর নওপাড়া গ্রামের সুধির দাসের ছেলে।
স্বীকারোক্তিতে কমলা দাস বলেন, প্রসেনজিৎ দাস, চিরজিৎ দাস ও কন্যা লাবনী দাস নামে তার ৩ সন্তান রয়েছে। তাদেরকে বাড়িতে রেখে ২০১৩ সালে কাজের সন্ধানে লিবিয়া যান তিনি। সেখানে থাকা অবস্থায় স্বামী সুবিরের সাথে তার (কমলা) ভুল বোঝাবুঝি হয়। তিনি (কমলা) লিবিয়ায় খারাপ কোনো কাজ করছেন বলে স্বামী সুবির ভুল বোঝেন। একবছর পর ২০১৪ সালের জানুয়ারী মাসে স্ত্রী কমলাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনে সুবির।
কমলা দাস আরো বলেন, দেশে আসার পর সুবির তাকে ভুল বুঝতে থাকে ও অবিশ্বাস করতে থাকে। ‘বিদেশে তুই অবৈধ কাজ করেছিস, তাই এখানে অবৈধ কাজ করে টাকা এনে দেয়ার’ জন্য চাপ দেয় সুবির। স্বামীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে একপর্যায়ে অবৈধ কাজে নামতে বাধ্য হই। বিদেশে যাওয়ার সময় বিল্লাল, আলাল ও আজিজুলদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিল তার স্বামী।
তারা বাড়িতে আসতে থাকে এবং তার স্বামী তাকে তাদের সাথে অবৈধ কাজ করতে বাধ্য করে। এই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে একপর্যায়ে নিজের স্বামীকে হত্যার জন্য আজিজুল, আলাল ও বিল্লালের সাথে পরিকল্পনা করে কমলা। পরিকল্পনা মতো ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর রাত ১২টার দিকে টাকা নেয়ার কথা বলে সে তার স্বামীকে বাড়ির পাশের একটি মেহগনি বাগানে নিয়ে যায়। সেখানে পরিকল্পনা মাফিক আজিজুল, আলাল, বিল্লাল ও স্ত্রী কমলা মিলে তার স্বামীকে হত্যা করে সুবিরের লাশ গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখে। এরপর বাড়িতে ফিরে নিহতের ভাই প্রবীরকে জানায় যে, তার ভাইকে পাওয়া যাচ্ছে না। পরদিন বাড়ির পাশের মেহগনি বাগান থেকে সুবিরের লাশ উদ্ধার করা হয়।
এ ব্যাপারে নিহত সুবিরের ভাই প্রবীর কুমার দাস বাদী হয়ে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর বালিয়াকান্দি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর একাধিক তদন্ত কর্মকর্তার হাত বদলের পর এসআই জাকির হোসেন ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল আদালতে চার্জশীট প্রদান করেন। চার্জশীটে মামলার বাদী প্রবীর কুমার দাস নারাজী দিলে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব সিআইডির ওপর অর্পণ করে আদালত। এ মামলার অন্য আসামীরা পলাতক রয়েছে।