ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ : ভারতে নাগরিকত্ব বিষয়ক সংশোধিত বিলের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ভারতে নাগরিকত্ব বিল কি নির্বাচনী তৎপরতা? এ বিলের অভিপ্রায় কি সে সম্পর্কে তিনি বুঝতে পারেন না বলে জানিয়েছেন। মঙ্গলবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবু ধাবিতে গালফ নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে এ কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন বিনসাল আবদুল কাদের ও সমিহা জামান। এরই মধ্যে ভারতের পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষ এই বিলটি পাস করেছে। তবে উচ্চকক্ষে গিয়ে তা বাতিল হয়ে গেছে। এ নিয়ে জানতে চাওয়া হয় শেখ হাসিনার কাছে। তিনি উত্তরে বলেন, কেন এই বিল, আমি বুঝতে পারি না।
মুখে হাসি নিয়ে তিনি বলেন, এটা কি রাজনৈতিক উদ্দেশে?
বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের কারণে বাংলাদেশকে দায়ী করে এই বিল আনা হয়েছে বলে তিনি কখনো মনে করেন না বলে জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি এ বিষয়ে বলেন, আমি তেমনটা মনে করি না। বাংলাদেশে এমন কোনো ঘটনা (ধর্মীয় নির্যাতন) নেই। কিছু ঘটনা ঘটেছে। তবে আমরা সে বিষয়ে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিয়েছি।
সাক্ষাৎকারটি প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সন্ত্রাস একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এটা শুধু বাংলাদেশেই আছে এমন নয়।
তিনি বলেন, তিনি জানেন এই বিলটি (নাগরিকত্ব বিল) নিয়ে ভারতের মানুষজনও খুশি নন। ‘আমি মনে করি তাদের (ভারতের) এমন কিছু করা উচিত হবে না, যা উত্তেজনা সৃষ্টি করে’। তিনি আরো বলেন, আসাম ও ভারতের অন্যান্য স্থানে (বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো) বোমা হামলার মতো ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী, যারা বাংলাদেশে বসে অপারেশন চালাতো, তাদের বিরুদ্ধে তার সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। তারপর থেকে এমন বোমা হামলার ঘটনা আর ঘটে না। শেখ হাসিনা বলেন, একটি প্রতিবেশী দেশ হিসেবে এসব বিষয় তাদের (ভারতের) বিবেচনা করা উচিত।
তিনি আরো বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বিশাল জনসংখ্যা ও দারিদ্র্য একটি ভয়াবহ সমস্যা। তার ভাষায়, আমি প্রতিবেশী দেশগুলোকে বলেছি যে, আমাদের একটি অভিন্ন শত্রু আছে। তা হলো দারিদ্র্য। তার বিরুদ্ধে আমাদেরকে একসঙ্গে লড়াই করতে হবে।
বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী ও অধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে নিপীড়নের উদ্বেগের বিষয়টিকে পাশ কাটিয়ে গিয়ে তিনি বলেছেন, ২০১৬ সাল থেকে কোনো বুদ্ধিজীবী হত্যা হয়নি। তার ভাষায় ‘আমার দেশে ব্লগার ও অনলাইন অধিকারকর্মীদের হত্যাকাণ্ড দৃশ্যত একটি নতুন প্রবণতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। জনগণ ও সরকার দ্ব্যার্থহীনকণ্ঠে এসব হামলার নিন্দা জানিয়েছে। অপরাধীদের গ্রেপ্তারে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব বিষয় অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে তাতে নজরদারি করতে সৃষ্টি করা হয়েছে স্পেশাল টাস্কফোর্স। প্রয়োজন অনুযায়ী তারা আইনগত ব্যবস্থা নেয়। যেসব মানুষকে হুমকি দেয়া হয়েছে তাদের সঙ্গে অব্যাহতভাবে যোগাযোগ রাখতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে পুলিশ স্টেশনগুলোকে। তিনি বলেন, ২০১৬ সাল থেকে কোনো ব্লগার অথবা অনলাইনের অধিকারকর্মী নিহত হননি। এটা তার সরকারের কার্যকারিতার প্রকাশ।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমাদের প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে কোনো সমস্যা সৃষ্টি করতে অথবা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে দেবো না কাউকে। কারণ, এতে আমার নিজের দেশের শান্তি বিনষ্ট হয়। আমাদের পরিষ্কার ঘোষণা হলো, যেকোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমাদের শূন্য সহনশীলতা। যদি শান্তি বজায় থাকে তাহলে আপনি অতি দ্রুত উন্নতি করতে পারবেন।
Check Also
গাড়িচাপায় বুয়েট শিক্ষার্থী মাসুদের মৃত্যু ‘হত্যাকাণ্ড’
প্রাইভেটকার চাপায় বুয়েট শিক্ষার্থী মুহতাসিম মাসুদের মৃত্যুকে ‘হত্যাকাণ্ড’ বর্ণনা করে দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তিসহ ৬ দফা …