ক্রাইমবার্তাডেক্সঃ কাশ্মিরে আত্মঘাতী হামলা প্রশ্নে পাকিস্তানের বুম বুম আফ্রিদির এক মন্তব্যে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে ভারতে। শহিদ আফ্রিদি সন্ত্রাসবাদ প্রশ্নে দেশের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মন্তব্যকেই সমর্থন করেন। আর সেটা হজম করা ভারতীয়দের পক্ষে সম্ভব হয়নি।
ইমরান খান বলেছিলেন, পুলওয়ামায় নাশকতার পেছনে পাকিস্তানের কোনো ভূমিকা নেই। প্রতিশোধের বশে ভারত যেন কোনো পদক্ষেপ না করে, সে বিষয়ে সতর্কও করে দেন। পুলওয়ামার ঘটনায় পাকিস্তানের হাত রয়েছে বলে ভারত যে দাবি করছে, তারও প্রমাণও চেয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতির এই ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন আফ্রিদি। সঙ্গে লেখেন, ‘এক্কেবারে স্বচ্ছ ও সহজবোধ্য বিবৃতি। ( ‘অ্যাবসোলিউটলি ক্রিস্টাল অ্যান্ড ক্লিয়ার’।)’
আফ্রিদির এই মন্তব্যের পর ভারতের সামাজিক মাধ্যমে তার নিন্দা জ্ঞাপনের ঢল নামে। তারা তাদের মতো করে মন্তব্য না করায় আফ্রিদির তীব্র সমালোচনা করছে।
কাশ্মিরে টানা ৫ দিন কারফিউ বাড়ছে উত্তেজনা
ডন
গতকাল মঙ্গলবারও ভারত অধিকৃত কাশ্মির জুড়ে পঞ্চম দিনের মতো কারফিউ বলবৎ ছিল। পুলওয়ামার হামলার পরে উত্তেজনা বেড়ে গেছে। গত সোমবার ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের একটি গ্রামে অভিযান চালাতে গিয়ে পাল্টা হামলার মুখে পড়ে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী। পিংলেন এলাকায় পরিচালিত অভিযানে ভারতের সেনাদের হাতে শহীদ হয়েছেন চার কাশ্মিরি। স্বাধীনতকামী যোদ্ধাদের সাথে সেখানে সংঘর্ষে একজন মেজরসহ পাঁচজন ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়।
নিরাপত্তা প্রত্যাহারের পর হুরিয়াত নেতা মিরওয়াইজ উমর ফারুককে রক্ষা করার জন্য প্রায় ২০০ যুবক স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন। পুলাওয়ামায় হামলার পরে রোববার মিরওয়াইজসহ ছয় স্বাধীনতাকামী নেতার নিরাপত্তা প্রত্যাহার করেছে ভারত সরকার। আওয়ামী অ্যাকশন কমিটি (এসিসি) টুইটারে জানান, নিজদেরকে মিরওয়াইজের নিরাপত্তা প্রহরী করার জন্য কয়েকশত যুবক নাম লিখিয়েছেন। হুরিয়াত নেতা বলেন, ‘এসব যুবকের ভালোবাসা ও প্রীতির দ্বারা আমি অনুপ্রাণিত, তাদের নিঃস্বার্থ ভালোবাসার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা।’
এদিকে উগ্র হিন্দুদের হামলার আশঙ্কায় ভারত অধিকৃত কাশ্মির উপত্যকার কমপক্ষে ছয় হাজার মুসলমান মসজিদগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। কাশ্মির মিডিয়া সার্ভিস জানিয়েছে, মক্কা মসজিদ কমিটির বাথিন্ডির সদস্য আব্দুল মজিদ বলেছেন, আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার মানুষ তার মসজিদে আশ্রয় নিয়েছে। চিকিৎসার জন্য সস্ত্রীক চণ্ডীগড় গমনকারী বারামুল্লার বাসিন্দা আইজাজ আহমেদ মীর বলেন, ‘আমরা রোববার সন্ধ্যায় জম্মুতে পৌঁছলাম। অন্যান্য এলাকায় আক্রমণের ভয়ে আমরা বাথিন্দীতে মক্কা মসজিদে আশ্রয় নিয়েছিলাম।’
পুলওয়ামার হামলার পরে কাশ্মিরি পুরুষ ও নারীদের ভারতের পুলিশের আক্রমণ, হয়রানি এবং নির্বিচারে গ্রেফতারের মুখোমুখি না করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। অ্যামনেস্টি ইন্ডিয়ার প্রধান আকার প্যাটেল এক বিবৃতিতে বলেন, কাশ্মির বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং কাশ্মিরি ব্যবসায়ীরা উত্তরাখান, হরিয়ানা ও বিহারে হিন্দু উগ্রবাদীদের মারধর, হুমকি ও ভয়ভীতির শিকার হয়েছেন।
গত সপ্তাহে ভারত অধিকৃত কাশ্মিরে ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলায় পুলওয়ামাতে ৪৪ ভারতীয় সেনা সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী সিআরপিএফ-এর প্রায় আড়াই হাজার সদস্য বহনকারী ৭৮টি ট্রাক আর বাসের সারির ভেতরে আইইডি বিস্ফোরক ভর্তি একটি সেডন গাড়ি ঢুকিয়ে বিস্ফোরণ ঘটায়।