ঝড় ও বৃষ্টিতে সাতক্ষীরার আম চাষীরা সর্বশান্ত: লক্ষ্য মাত্রা অর্জনে সংশয়

আবু সাইদ বিশ্বাসঃসাতক্ষীরা: টানা চার দিনের ঝড় ও বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা জেলার বেশিরভাগ আম গাছের মুকুল ঝরে পড়েছে। এতে অধিকাংশ গাছে আশানুরূপ আম না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্র অর্জনে সংশয় দেখা দিয়েছে। আম চাষীরা সর্বশান্ত হতে চলেছে।

গত সোমবার ভোর থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি ও ঝড়, সাথে শিলাবৃষ্টি বৃহষ্পতিবার সকাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়। সাথে হয়েছে বজ্রপাতও। এর সাথে আবার থেমে থেমে হয়েছে দমকা ঝড় ও বৃষ্টি। আচমকা প্রকৃতির এমন বৈরিতায় জেলার আমের মুকুলে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। বেশির ভাগ আমের মুকুল ঝরে পড়েছে। তবে আমের মুকুলের ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা না গেলেও এই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয় বলে দাবি করেছেন স্থানীয় আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

শহরের ৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুল্লাহ জানান, মেঘের গর্জনে ঘুম ভেঙ্গে যায়। পরে কিছুক্ষণ পর দেখি চারদিকে অন্ধকার। বিদ্যুতের ঝলকানি আর ঝড়ো হাওয়া বইছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি, বাগানের গাছের আমের মুকুল, ছফেদা সব কিছু নিচে পড়ে আছে। শীতের শেষে হঠাৎ এ বৃষ্টিতে আমাদেও ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেলো।

স্থানীয় শেখ বলেন, বজ্রপাত ও বৃষ্টিতে আমের মুকুল ঝরে পড়ায় খুব ক্ষতি হয়েছে। এ মৌসুমে নিজের গাছের আম খেতে পারবো কি না সন্দেহ আছে।

এদিকে সময়ের আগেই স্বর্ণালি মুকুলে ভরে যায় সাতক্ষীরার আম বাগান। গাছে গাছে ঝুলতে থাকে আমের মুকুল। চাষীদের মনে আশার আলো সঞ্চালন হয়।

আগাম মুকুল আসায় জেলা কৃষি বিভাগ এখনো আম চাষের আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে পারিনি। তারা বলছে, দ্রুত সময়ের মধ্যেই চলতি বছরে আম উৎপাদনের টার্গেট নির্ধারণ করা হবে। তবে গত বছর এ জেলাতে আমের চাষ হয়েছিল ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর রেকর্ড পরিমান আমের চাষ হবে আশা সংশ্লিষ্টদের।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সাতক্ষীরার চাহিদা মিটিয়ে এ বছর প্রচুর আম দেশ-বিদেশে রফতানি হবে বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়,চলতি মৌসুমে জেলাতে সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে আমের আবাদের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
গত মৌসুমে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১১৯৫ হেক্টর জমিতে, কলারোয়া উপজেলায় ৬০২ হেক্টর, তালা উপজেলায় ৭০৫ হেক্টর, দেবহাটা উপজেলায় ৩৬৮ হেক্টর কালিগঞ্জ উপজেলায় ৮০৫ হেক্টর, আশাশুনি উপজেলায় ১২৫ হেক্টর ও শ্যামনগর উপজেলায়ং ১৫০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়ে ছিল।
এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদরে আমের বাগন ছিল ১৫৩০টি, কলারোয়ায় ১৩১০টি, তালায় ১৪৫০টি, দেবহাটায় ৪৭৫টি, কালিগঞ্জে ১৪২টি, আশাশুনিতে ১৯০টি ও শ্যামনগর উপজেলায় ১৫০টি ।

রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের তুলনায় একটু আগেই বাজারে আসে সাতক্ষীরার আম। মাটি, আবহাওয়া ও পরিবেশগত কারণে এ জেলার আমের স্বাদও আলাদা। হিমসাগর, ল্যাংড়া, গোবিন্দভোগ, আ¤্রপালি, মল্টিকা, সিঁদুর রাঙা, ফজলির সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশেও।
অন্যান্য জেলার থেকে সাতক্ষীরার আম আগে পাকে। এ জেলার মাটি আম চাষের উপযোগী। গত ৫ বছর ধরে এ জেলার আম ইউরোপে রফতানি হচ্ছে। এবারও বাগান পরিচর্যা করা হচ্ছে বিদেশে আম পাঠানোর জন্য।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অরবিন্দ বিশ্বাস জানান,ঝড় ও বৃষ্টিতে আমের মুকুলে সামান্য কিছু ক্ষতি হলেও বৃষ্টিতে কৃষির উপকারই বেশি হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে ঝড় না হয়ে যদি বৃষ্টি হয় তাহলে ধানের ফলন ভালো হবে। তিনি আশা করনে আর ক্ষতি না হলে আমের লক্ষ্য মাত্রা অর্জন হবে।

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।