ঢাকা: ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের কম উপস্থিতির দায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা।
উত্তরার ৫ নং সেক্টরের আইইএস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেওয়া শেষে বৃহস্পতিবার সকালে সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
সিইসি বলেন, ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের কম উপস্থিতির দায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নয়, রাজনৈতিক দলের। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
গণতন্ত্র হত্যার পর তামাশার নির্বাচন করছে সরকার : রিজভী
গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত জনগণ মানবে না
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ৩০ ডিসেম্বরে ভোট চুরির মহৌৎসব করে একটা অবৈধ শাসকগোষ্ঠীকে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসিয়ে দেশকে গভীর সঙ্কটে নিপতিত করার মূল হোতাই হচ্ছেন সিইসি কে এম নুরুল হুদা। কাজেই জনগণ এবং রাজনৈতিক দলগুলো এখন নির্বাচন কমিশন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। যে নির্বাচন হচ্ছে তাতে উৎসবের লেশমাত্র নেই। এখন গণতন্ত্র হত্যার পর তামাশার নির্বাচন করছে সরকার। এছাড়া নতুন করে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত জনগণ মেনে নেবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন। নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘২৯ ডিসেম্বরে মিডনাইট নির্বাচনের পর এখন শেখ হাসিনা নতুন পাটিগণিত কষছেন। আর সেটি হচ্ছে- দেশের অবিসংবাদিত জাতীয়তাবাদী নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ধীরে ধীরে নিঃশেষ করে দেয়া। অসুস্থ দেশনেত্রীকে টানাহেঁচড়া করে ঘনঘন আদালতে নিয়ে আসা, অন্ধকারাচ্ছন্ন শ^াসরুদ্ধকর পরিবেশে তার জন্য আদালত স্থাপন করা, তার পছন্দমতো চিকিৎসকদের দিয়ে চিকিৎসা করতে না দেয়া, তাকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতালে না নেয়া, সাত দিন পর পর নিকটাত্মীয়দের সাথে দেখা করতে না দেয়া, আত্মীয়স্বজনদেরকে দেখা করতে দিতে বিলম্ব করা, অস্বাস্থ্যকর ও কীট-পতঙ্গে ভরা কারাকক্ষে থাকতে বাধ্য করা, যে মামলায় অন্যরা জামিন পেয়েছেন সেই একই মামলায় তাকে জামিন না দেয়া ইত্যাদিতে প্রমাণিত হয়- সরকার দেশনেত্রীকে এক অশুভ পরিণতির দিকে ঠেলে দিতে চায়। সেজন্যই বেআইনীভাবে নির্দোষ বেগম খালেদা জিয়াকে আটকে রাখা হয়েছে।’
রিজভী বলেন, ‘২৯ ডিসেম্বরের মিডনাইট নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা হবে বলেই বেগম জিয়াকে বেশ কয়েক মাস আগেই কারান্তরীণ করা হয়। গণতন্ত্রের সূর্যকে অস্তগামী করার জন্যই বেগম জিয়া এখন কারাগারে। একদলীয় কর্তৃত্ব নিরঙ্কুশ করার জন্যই বেগম জিয়াকে কারাগারে রাখা হয়েছে। বিচার ব্যবস্থায় ক্রমাগত হস্তক্ষেপের কারণেই বেগম জিয়া এখন কারাগারে। আমরা আবারো আহবান জানাচ্ছি- এই মুহূর্তে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।’
গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘এ সরকার এখন গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। গণবিরোধী সরকারের কাছে জনগণের ইচ্ছার কোনো মূল্য নেই। ম্যান্ডেটবিহীন বলেই জনগণের দুঃখ-কষ্টের প্রতি তাদের কোনো লক্ষ্য নেই। জনগণের সরকার নয় বিধায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর এমন সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না জনগণ। এটি ক্ষমতাসীনদের জন্য আরেকটি লুটপাটের সুযোগ সৃষ্টি করবে। এটি একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জ¦ালানি। এমনিতেই তীব্র গ্যাস সঙ্কটে গ্রহিতারা প্রচন্ড দুর্ভোগে পড়েছে। এর ওপর গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ঘোষণায় এই জ¦ালানির ওপর নির্ভরশীল জনগণের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়বে। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে এধরনের গণবিরোধী ঘোষণা থেকে সরে আসার আহবান জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশ না নেয়া কমিশনের জন্য অস^স্তিকর। সিইসি তার এই বক্তব্যে স্বীকার করে নিলেন যে, জনগণ ও দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে তাদের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। যে দেশে ভোটের আগের রাতেই ব্যালট পেপারে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা হয়, ভোট চুরি হয়, ভোট দিতে পারে না সেদেশের মানুষ বর্তমান নির্বাচন কমিশন ধিক্কার ছাড়া অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য নয়। তিনি জনগণকে ভোট প্রদান থেকে প্রতারিত করেছেন।’
বিএনপির শীর্ষ এই নেতা আরো বলেন, ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি রাজিয়া আলিম কারাগারে প্রচন্ড অসুস্থ। আদালত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বললেও জেল কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এছাড়া ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) ৩১, ৩২ ও ৩৩ নং ওয়ার্ড কমিশনার এবং জাতীয়তাবাদী মহিলা দল লালবাগ-চকবাজার থানা শাখার সদস্য সচিব নাসরিন রশীদ পুতুল বহুদিন ধরে কারাগারে আটক আছেন। তিনিও ভীষণ অসুস্থ। আমি অবিলম্বে তাদের সুচিকিৎসা এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।
এছাড়া ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দের মধ্যে কারান্তরীণ আব্দুল আলীম নকী, মোয়াজ্জেম হোসেন, আশরাফুর রহমান আশরাফ, আরিফুর রহমান নাদিম, ডি এম নজরুল, রেজাউল করিম ফাহিম, ভিপি মো: হানিফ, এ বি এম এ রাজ্জাক, কিরণ, গোলাম কিবরিয়া মাখন, আবুল কালাম আজাদ, আক্তার হোসেন জিল্লু, আব্দুল আউয়াল, মো: ওসমান গনি শাহজাহান, মো: নাসির উদ্দিন, ইঞ্জিনিয়ার মজিবুল হক, মিজানুর রহমান বাচ্চু, আবুল হোসেন আব্দুল, হাজী ওয়াজেদ উদ্দিন, হাজী আব্দুর রহমান, হুমায়ুন কবির রওশন, আব্দুর রশীদ, মো: দ্বীন ইসলাম, হাজী দুলাল, এ কে এম লুৎফুল বারী মুকুল, হুমায়ুন কবির, মো: আমির হোসেন, মো: মাসুম বাবুল, মো: নাজিম উদ্দিন দেওয়ান, মো: শফিকুর রহমান শফিক, মো: হাশেম মিয়াসহ কারাগারে আটক নেতাকর্মীদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করেন রিজভী।