ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোটঃ পাক হেফাজতে থাকা ভারতীয় পাইলট উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে মুক্তি দিয়েছে পাকিস্তান। শুক্রবার সন্ধ্যার সূর্য্য যখন পশ্চিম দিগন্তে ঢলে পড়েছে ঠিক তখনই অভিনন্দনকে নিয়ে কনভয় এসে পৌঁছেছে ওয়াঘা-আটারি সীমান্তের চেকপোস্টে। পাকিস্তান বিটিং দ্য রিট্রিট সিরিমনির পরই অভিনন্দকে তুলে দিয়েছেন ভারতের হাতে। ভারত অবশ্য এদিন এই বিটিং দ্য রিট্রিট সিরিমণি বাতিল করে দিয়েছিল। প্রথমে পাকিস্তান সীমান্তে শুল্ক ও আভিবাসনের কাজ শেষ করে অভিনন্দন প্রবেশ করেছেন ভারতীয় ভূমিতে।
সেখানেও একদফা শুল্ক ও আভিবাসনের কাজ শেষ হওয়ার পর উইং কমান্ডার অভিনন্দনকে স্বাগত জানান এয়ার ভাইস মার্শাল আর জি কে কাপুর সহ ভারতীয় বায়ূ সেনার শীর্ষ আধিকারিকরা। অভিনন্দন বর্তমান বাইরে বেরিয়ে এলে সীমান্তে উপস্থিত মানুষ উন্মাদনায় উদ্বেল হয়ে উঠেছিল। অনেকে ঢাক ঢোল বাজিয়ে অভিনন্দনকে বীরের অভ্যর্থনা জানিয়েছেন।
‘ভারত মাতা কি জয়’, ‘বন্দে মাতরম’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছিল সীমান্ত এলাকা।
এই জনতা বৃহষ্পতিবার রাত এবং শুক্রবার সকাল থেকেই অপেক্ষা করেছেন অভিনন্দনকে স্বাগত জানাতে। তবে সবচেয়ে আবেগঘন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যখন অভিনন্দন তাঁর পিতা ও মাতার সঙ্গে মিলিত হয়েছেন। তারা গতকাল রাতেই চেন্নাই থেকে নয়াদিল্লি এসে পৌঁছেছিলেন। আজ দুপুরেই তারা পৌঁছে গিয়েছিলেন অমৃতসর। সেখান থেকে সীমান্তে। অভিনন্দনের আগমন উপলক্ষ্যে সীমান্তে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছিল। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংহও মুক্তি পাওয়া পাইলটকে স্বাগত জানাতে সীমান্ত চেকপোস্টে উপস্থিত ছিলেন। সকালেই তিনি টুইট করে জানিয়েছেন অমৃতসরের ওয়াঘা-আটারি সীমান্তে পাইলট অভিনন্দনকে গ্রহণ করতে তিনি নিজে উপস্থিত থাকবেন। সীমান্ত থেকে অভিনন্দকে নিয়ে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় জলন্ধরের সেনা হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা হবে তাঁর। পাকিস্তানে ৩ দিন ছিলেন অভিনন্দন। সেখানে অভিনন্দনকে নির্যাতন করা হতে পারে। তাঁর পায়ে গুলি লেগেছে বলে খবর। এরইসঙ্গে অভিনন্দনের শরীরে গোপন যন্ত্রাংশ প্রবেশ করিয়ে দিতে পারে বিপক্ষ দেশ। সে কারণে মানসিক ও শারীরিকভাবে অভিনন্দনকে প্রথমে সবল করে তোলা হবে।
বায়ুসেনার আধিকারিক ও পাইলটের পিতা-মাতাকে নিয়ে সকলে অভিনন্দনকে নিয়ে আসবেন নয়াদিল্লিতে। বৃহষ্পতিবার বিকেলেই পাক প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তান সংসদের যৌথ অধিবেশনে ঘোষনা করেছেন যে, শান্তির পদক্ষেপ হিসেবে শুক্রবারই অভিনন্দনকে মুক্তি দিয়ে ভারতের হাতে তুলে দেয়া হবে। ভারত অবশ্য মুক্তি পাওয়া পাইলটকে সরাসরি বিমানে উড়িয়ে নয়াদিল্লি নিয়ে আসার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্ত পাকিস্তান সরকার তা নাকচ করে দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিল যে ওয়াঘা-আটারি সীমানÍ দিয়েই ধৃত পাইলটকে ফেরত দেওয়া হবে। সংবাদমাধ্যম সুত্রের খবর, শুক্রবার সকালে পাইলট অভিনন্দনকে প্রথমে রাওয়ালপিন্ডি থেকে লাহোরে আনা হয়। সেখানে ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব রেড ক্রস (আইসিআরসি)-এর হাতে তুলে দেওয়া হয় বায়ুসেনার এই উইং কম্যান্ডারকে। সেসময় উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তনে ভারতীয় হাইকমিশনের প্রতিনিধিরাও। তার পরে সন্ধ্যা নাগাদ তাঁকে নিয়ে আসা হয় ওয়াঘা-আটারি সীমান্তে। এর আগে কার্গিল যুদ্ধের সময়ও ভারতীয় পাইলট নচিকেতাকে পাকিস্তান রেডক্রশের মাধ্যমেই ভারতের হাতে তুলে দিয়েছিল ঘটনার আটদিনের মাথায়।
ভারত অবশ্য দাবি করেছে, আন্তর্জাতিক স্তরে প্রবল চাপ এবং জেনেভা কনভেনশন অনুয়ায়ীই পাকিস্তান ধৃত পাইলটকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছে। বুধবার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে উইং কম্যান্ডার অভিনন্দনের ধরা পড়ার খবর প্রকাশ্যে আসার পরই তাঁর মুক্তির জন্য দেশ জুড়ে প্রার্থনা করেছিলেন মানুষ। কন্দহরের মতোই পাকিস্তান এ ক্ষেত্রেও শর্ত রাখার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ভারত আগেই বলেছিল কোনও শর্তেই তারা রাজি নয়। সেই সঙ্গে পাকিস্তানকে মনে করিয়ে দিয়েছিল, জেনেভা কনভেনশনের কথা। শেষপর্যন্ত অবশ্য শান্তির বার্তা দিয়েই অভিনন্দনকে মুক্তি দেবার কথা জানিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এদিকে বিজেপির সভাপতি শুক্রবার পাইলটের মুক্তিকে ভারতের কূটনৈতিক সাফল্য বলে বর্ণনা করেছেন। ভারতীয় বায়ুসেনা সূত্রে খবর, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সকালে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে প্রায় সাত কিলোমিটার ভারতের আকাশসীমায় ঢুকে পড়েছিল পাক ফাইটারগুলি।
তাদের মোকাবিলায় আকাশে ওড়ে ভারতের দু’টি বাইসন জেট। তারই একটির ককপিটে ছিলেন অভিনন্দন। সূত্রের খবর, নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় থাকা পাক ফাইটারকে টার্গেট ‘লক ইন’ করে অভিনন্দনের বাইসন জেট। সেকেন্ডের মধ্যে মিগ-২১ থেকে আর-৭৩ এয়ার টু এয়ার মিসাইল আঘাত করে পাক ফাইটারকে। কিন্তু ‘ তার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই অভিনন্দনের মিগে আঘাত করে পাক জেটের গুলি। বিমান নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে রেডিও বার্তা দিয়েই ‘ইজেক্ট’ করে বিমানের বাইরে চলে আসেন তিনি। কিন্তু ‘ হাওয়ার গতি উল্টো দিকে থাকায় অভিনন্দনকে নিয়ে প্যারাশুট ভেসে যায় পাক অধিকৃত কাশ্মীরের দিকে। তার পরই পাক সেনারা তাঁকে আটক করেন।