ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোটঃ পাকিস্তানে আটক ভারতীয় উইং কমান্ডার অভিনন্দনকে ফেরত প্রদানের কিছুক্ষণ পরই ভারতীয় বাহিনীর গুলিতে ২ পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হওয়ার দাবি করেছে পাকিস্তান। সীমান্তের লাইন অব কন্ট্রোলে ভারতীয় সেনাদের চালানো গুলিতে সেনা সদস্যের পাশাপাশি দুজন বেসামরিক নাগরিকও নিহত হয়েছে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আন্তঃসংযোগ অধিদফতর (আইএসপিআর) শনিবার এক বিবৃতিতে জানায়, ভারতীয় বাহিনী কোনো কারণ ছাড়াই লাইন অব কন্ট্রোলে বেসামরিক নাগরিকদের ঘরবাড়ি লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে। এতে দুজন সামরিক ও দুজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। এ ছাড়াও অনেকে আহত হয়েছে। আহতদের কোটলি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
নিহত দুই সেনার নাম হাওলাদার আবদুর রব ও খুররম বলে আইএসপিআরের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
ভারতীয় বাহিনীর হামলায় পর পাকিস্তানও পাল্টা গুলিবর্ষণ করেছে এবং সীমান্তে পাক বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে।
এ দিকে ভারত দাবি করছে জম্মু-কাশ্মীরের পুঞ্চ জেলার নিয়ন্ত্রণরেখায় শুক্রবার রাতভর গোলাগুলিতে রুবানা কসার (২৪) নামে এক মা এবং তার দুই শিশুসন্তান নিহত হয়েছে।
নিহত দুই শিশুর বয়স পাঁচ বছর ও নয় মাস। পাকিস্তানি সেনাদের ছোড়া গোলার আঘাতে ওই মানেটা ও তার শিশুরা নিহত হয়েছে বলে দাবি ভারতের।
গত আট দিন ধরে কাশ্মীরের পুঞ্চ এবং রাজৌরি জেলার নিয়ন্ত্রণরেখায় প্রতিবেশী দুই দেশের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলি চলছে। নিয়ন্ত্রণরেখার পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত সব স্কুল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় দেশটির আধাসামরিক বাহিনীর গাড়িবহরে হামলায় অন্তত ৪০ সেনা নিহত হন। এই আত্মঘাতী হামলার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ। ভারত এ হামলার পেছনে পাকিস্তানের মদদ রয়েছে বলে দাবি করে আসছে।
এই হামলার জেরে গত মঙ্গলবার কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হামলা চালায় ভারতীয় বাহিনী। হামলায় ২০০ থেকে ৩০০ জঙ্গি নিহত হয় বলে দাবি করেছে দেশটি।
মঙ্গলবার ভারতীয় বিমানবাহিনী পাকিস্তানে বালাকোট এলাকায় সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ রেখা পার হয়ে বোমা হামলা চালায়। ভারতীয় গণমাধ্যম দাবি করে এতে অনেক জঙ্গি হতাহত হয়েছে। তবে পাকিস্তান বলছে, এতে তাদের দেশে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এর পর এদিন বিকালে পাকিস্তান সীমান্তবর্তী এলাকায় ব্যাপক গোলা বর্ষণ করে। এতে ভারতীয় দুই নাগরিক নিহত হওয়া দাবি করা হয়েছে। বুধবার সকালে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ভারতীয় দুটি বিমান ঢুকে পড়লে পাকিস্তান তা ভূপাতিত করে। এ ঘটনায় দুইজন নিহত ও এক ভারতীয় পাইলটকে আটক করেছে পাকিস্তান।
দুই দেশের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আটক ভারতের পাইলটকে মুক্তি দিচ্ছে পাকিস্তান। বৃহস্পতিবার পাক ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে এমন ঘোষণা দেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
পাইলটকে মুক্তির কারণ হিসেবে ইমরান খান বলেছেন, শান্তির বার্তা দিতেই ভারতীয় পাইলটকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে। তবে তিনি এও হুশিয়ারি দেন যে, পাইলটের মুক্তির সিদ্ধান্তকে পাকিস্তানের দুর্বলতা ভাববেন না। শুক্রবার রাতে উইং কমান্ডার অভিনন্দনকে ভারতের হাতে তুলে দেয় পাকিস্তান।