ভোটের আগে আলোকিত সমাজ গড়ার প্রত্যয়, নির্বাচিত হলে অন্ধকার হয়ে যায়!

জাবের হোসেন
জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচন আসলে বড় বড় কথার ফুলঝুরি শোনান ভোটারদের। কিন্তু নির্বাচিত হতে পারলে প্রতিশ্রুতির কথা মনে থাকেনা। নির্বাচন মতামত প্রকাশের সর্বোচ্চ মাধ্যম। যদিও পৃথিবীর সব দেশ গণতান্ত্রিক নয়। তথাপি অধিকাংশই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। আর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ক্ষমতায় যাওয়ার বৈধ পন্থা নির্বাচন। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ নির্বাচিত করেন তাদের জনপ্রতিনিধিদের। আর জনপ্রতিনিধিরা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এলাকার বা দেশের জনগনের প্রতিনিধিত্ব করেন।মেয়াদ শেষ হলেই আবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যতদিন তারা ক্ষমতায় থাকে ততদিন পদমর্যাদা ভেদে অন্যের থেকে কিছু কিছু ভিন্ন কাজ করার ক্ষমতা রাখে।
জনগনের সাথে রাজনৈতিক নেতাদের বেশি বেশি সাক্ষাত হয় নির্বাচনকালীন সময়ে। নির্বাচনের সময় নেতারা এলাকার প্রতিটি চা স্টল, রাস্তা, মোড়সহ জনগণের দোয়ারে দোয়ারে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু নির্বাচনের পর আগের মত ভাব আর থাকেনা। যিনি জয়ী হন তিনি আর আগের মত জনসম্পৃক্ততা বজায় রেখে চলেনা। আর যিনি পরাজিত হন তিনিও আগের মত সুসম্পর্ক বজায় রাখেনা। তখন জনগণের কাছে নেতাদের প্রয়োজন শেষ হয়ে যায়।
একজন জনপ্রতিনিধি চাইলে সারাজীবন তার পদে বহাল থাকতে পারে। তার জন্য শুধু প্রয়োজন নিজের সদিচ্ছা। তার অর্থ হলো, একজন নির্বাচিত প্রতিননিধি নির্বাচিত হওয়ার পর যদি সে চাই সে সারাজীবন উক্ত পদে বহাল থাকবে, তাহলে সে থাকতে পারবে। তার জন্য অর্থের প্রয়োজন নেই, তার জন্য জনগনের দোয়ারে দোয়ারে যেয়ে ভোট ভিক্ষা চাইতে হবেনা। শুধু নিজের একটু সদিচ্ছাই পারে তাকে সারাজীবন পদে বহাল রাখতে। নিজেকে নিজের মত করে না ভেবে জনগণের মত করে ভাবতে হবে। জনপ্রতিনিধিরা যদি নির্বাচিত হওয়ার পরে জনগণের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলে, যদি জনগণের সাথে সেতুবন্ধন তৈরি করতে পারে তাহলে পরবর্তী ভোটে তাকে জনগনের কাছে যাওয়া লাগবে না। জনগনই তাকে ডেকে ভোট দিবে।
কিন্তু আমাদের দেশে আমরা ভিন্ন রকম দেখি। সব দেশে কম-বেশি আছেই। তথাপি নেতারা নেতাদের কৃতকর্মের জন্যই জনগণের কাছে গেলে অনেকক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। যার জন্য পাঁচ বছর পর পর নেতাদের জনগণের কাছে যেয়ে কবিরাজি ঔষধ বিক্রি করা মত বক্তব্য দিতে হয়।
কবিরাজ সম্পর্কে আমাদের ধারণার একটু বিভ্রাট রয়েছে।কেউ কেউ বিশ্বাস করে, আবার কেউ কেউ বিশ্বাস করেনা। অধিকাংশ জনগণ মনে করে তাদের ঔষধে কাজ হয়না। তারা মিষ্টি কথা বলে পাবলিককে ঠকিয়ে পকেটের টাকা নিয়ে চলে যায়।
যারা বলেন, তারা জনগণকে ধোকা দিয়ে অর্থ উপার্জন করেন। তারা কি জানেনা যে, তারা অর্থ দিয়ে কবিরাজের কাছ থেকে ধোকার ঔষধ কিনছেন? যদি জেনেই থাকে তাহলে কেনো জনগণ তাদের কাছ থেকে ঔষধ কেনেন? যদি কাজ না হয় তাহলে কেনো জনগণ তাদের কাছ থেকে ঔষধ ক্রয় করবেন? একটা জিনিস খেয়াল করবেন। দেখবেন যারা ওই সমস্ত ঔষধ বিক্রি করা তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে যৌন উত্তেজক জাতীয় ঔষধ বিক্রি করে। তারা কিন্তু ব্যবসায় সফল।কারন তারা জানে পাবলিকের কাছে কোন জিনিস দিলে পাবলিক গ্রহণ করবে। তারা জানা কীভাবে কথা বললে পাবলিক তাদের কাছে থেকে ঔষধ নিবে। তাহলে তারা কিন্তু কৌশলে জয়ী হয়। আর যারা নেন তাদের কারোর কারোর কাজ হয়, কারোর কারোর হয়না। এটার জন্য কবিরাজকে দায়ি করতে পারবো না আমি।
অপরদিকে আমাদের দেশের রাজনীতিও সেই কবিরাজের ঔষধের মত হয়ে গেছে। নির্বাচনের সময় হলে তারা জনগণের কাছে যায়।অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় জনগন অমুককে ভোট দিবেননা,তমুক খুব খারাপ লোক। সে এলাকার কোনো কাজ করেনি। দুর্নীতি করেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক কৌশলে নেতারা ওই ঔষধ বিক্রির মত লেকচার দিয়ে ভোট অর্জন করে নেয়। অপরদিকে নির্বাচনের পরে পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায় নেতারা। নেতারা তাদের প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে যায়। ভুলে যায় জনগরের জন্যই তারা ক্ষমতাবান। ভুলে যায় জনগণের স্বার্থের কথা।
সেজন্যই বুঝি পাঁচ বছর অন্তর অন্তর নির্বাচনের সময় নেতারা জনগণের কাছে কাছে গিয়ে কুশল বিনিময় করেন। কিন্তু একজন নেতা চাইলে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পূর্ব থেকে পরবর্তী পর্যন্ত জনসম্পৃক্ততা ঠিক রেখে পুনরায় নির্বাচিত হতে পারে।
আমরা আমানতের খেয়ানত করতে শিখেছি। কিন্তু কীভাবে আমানত রক্ষা করতে হবে সেটি শিখিনি এখনো। সত্যি কথা বলতে আমরা একটু ভালো জায়গায় গেলেই ধরাকে সরা জ্ঞান করি। ভাবটা পরিবর্তন হয়ে যায়। তখন আর উঁচু-নিচু কিছু দেখতে পায়না আমরা। সেজন্যই কিন্তু বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, সাত কোটি কম্বলের মধ্যে আমার (বঙ্গবন্ধু) কম্বল কই?
সাত সাগর তের নদী পার হয়ে যেমন অনেকেই ভালোবাসা অর্জন করে। তেমনি আমরাও রক্তের নদী পার হয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। কিন্তু স্বাধীনতা অর্জন করাটা যতটা না কষ্টের, তার থেকে বেশি কষ্টের সেই অর্জিত স্বাধীনতা ধরে রাখা। একজন মানুষ ইচ্ছা করলেই নেতা হতে পারে।কিন্তু নেতার নেতামী ধরে রাখা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। নেতা হলেই নেতামী অর্জন হয়না। তার জন্য আরো বেশি সাধনার প্রয়োজন। নিজের ভিতর যদি জবাবদিতিহা না থাকে তাহলে পূর্ণাঙ্গতা লাভ করা যায়না।
জনগন এবং রাজনৈতিক নেতাদের এমন সূসম্পর্ক হওয়া উচিত যেমন কলমের সাথে কালির সম্পর্ক। যতদিন না এমন পরিবেশ তৈরি হবে, যতদিন না ব্যক্তিস্বার্থ দূর হবে ততদিন প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জিত হবেনা। ততদিন আর কতদিন সেটির জন্য অপেক্ষা!

Check Also

সাতক্ষীরায় পুত্রবধূর হাতে নির্যাতিত সেই স্কুলশিক্ষক মারা গেছেন

ক্রাইমবাতা রিপোট, সাতক্ষীরা:   ছেলে ও পুত্রবধূর হাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশতলা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।