ক্রাইমবার্তা রিপোর্ট : নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারকে মানুষ ত্বকীর খুনী হিসেবেই বিবেচনা করবে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট সুলতানা কামাল। শুক্রবার বিকেলে ডিআইটি চত্ত্বরে ত্বকীর অপহরণ ও হত্যার ষষ্ঠ বার্ষিকী উপলক্ষে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আয়োজিত সমাবেশে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নিহত ত্বকির বাবা রফিউর রাব্বি।
সুলতানা কামাল বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে ত্বকী হত্যার বিচার হয়নি, কিন্তু বাংলাদেশের প্রত্যেকটি বিবেকবান, সংবেদনশীল মানুষের মনে মনে ওসমানের পরিবারের বিচার হয়ে গেছে। আজ তাঁরা যত দাপটে ঘুরেই বেড়াক না কেন, একটা একটা সময় আসবে মানুষ তাদেরকে ত্বকী হত্যার খুনী, শিশু হন্তারক হিসেবেই মনে করবে।
বর্তমানে সারা বাংলাদেশের মানুষ মহাসংকটে ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বসবাস করছে উল্লেখ করে সুলতানা কামাল বলেন, বর্তমানে শিশু হত্যার বিচার স্বাভাবিকভাবে হয়না। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সাহসী, সফল রাষ্ট্রনায়ক আমাদের প্রধানমন্ত্রীও এই হীন গুন্ডা প্রকৃতির মানুষদের ধরতে পারেনা, ধরার সাহস দেখাতে পারেনা। শুধু নারায়ণগঞ্জবাসী নয় সবাই ত্রাসের রাজত্বে বসবাস করছে। মুক্তিযুদ্ধ করার উদ্দেশ্য ছিলো, ত্রাসের রাজত্ব, নিপীড়ন থেকে বেরিয়ে এসে মর্যাদা নিয়ে বাঁচার জন্য।
সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আরো বলেন, ক্ষমতাসীন দল মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি দাবি করে ক্ষমতা চালিয়ে যাচ্ছে। সেই দলও একটি শিশু হত্যার বিচার করতে পারেনা। জ্বালাও পোড়াও এবং বাঁধা সৃষ্টিকারী রাজনীতির পক্ষে আমরাও নই। সমস্ত প্রশাসন ও আমলারা বর্তমান সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকার পরও ত্বকী হত্যার বিচার হচ্ছেনা।
দেশরত্ন খেতাব যাকে দেয়া হয় তার আমলে একটা শিশু হত্যার বিচার চাইতে এতো কাকুতি, মিনতি, আকুতির মধ্যে দিয়ে যেতে হবে কেন? আইনের শাসন না থাকলে মানুষ নিরাপদ থাকতে পারেনা। সেদেশে বেআইনী কাজ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তখনই নারায়ণগঞ্জের মতো সাত খুনের মতো ঘটনা ঘটে। সেটার বিচারের একটি পর্যায় শেষ হয়েছে, বাকিটুকু সমাপ্তি ঘটলো কিনা সেটিও আমরা দেখতে চাই।
প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে সুলতানা কামাল বলেন, নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি মানুষ জানতে চায় আসলেই তিনি চান কিনা! যদি নিতে না চান সেই দায়ভার তিনি তার হাত থেকে নামাবেন।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, উন্নয়নের এতো ফিরিস্তি তুলে ধরা হচ্ছে। কিন্তু আমরা কি দাবি করতে পারি, আমরা সভ্য হয়েছি, সভ্য সমাজে বসবাস করছি, আইনের শাসন আছে, অধিকার সুরক্ষিত হয়? এসব দাবি আমরা করতে পারছিনা। ত্বকী হত্যার বিচারের দাবিতে সংহতি জানিয়ে এই হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত পাশে থাকার কথা জানান সুলতানা কামাল।
নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি ভবানী শংকর রায়ের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাসুম, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি হালিম আজাদ, খেলাঘর আসর নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি রথিন চক্রবর্তী, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াইল ইসলাম কাজল, সমাজতান্ত্রিক দল বাসদেও জেলা সভাপতি নিখিল দাস, নাগরিক কমিটির জেলা সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, ন্যাপ ও নাগরিক কমিটির জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট এবি সিদ্দিকী, গণতান্ত্রিক আইনজীবি সমিতির জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট আওলাদ হোসেন, কমিউনিস্ট পার্টির জেলা সাধারণ সম্পাদক শিবনাথ চক্রবর্তী, গণসংহতির জেলা সমন্বয়ক তরিকুল সুজন বক্তব্য রাখেন। সমাবেশ শেষে ডিআইটি থেকে চাষাঢ়া শহীদ মিনার পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল শেষে জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ হয়।