ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ : প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের সংসদে এসে কথা বলার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নৌকার বিজয় জনগণের স্বতস্ফুর্ত ভোটের রায়। জঙ্গী-সন্ত্রাস-মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগকেই বেছে নিয়েছে দেশের জনগণ। জনগণ আর জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাস-মাদক-অগ্নিসন্ত্রাস আর দেখতে চায় না, নির্বাচনে তাই প্রমাণ হয়েছে। তাই বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত নেতাদের বলব, জনগণের ভোটের প্রতি সম্মান দেখিয়ে সংসদে আসুন, যতো কথা বলার আছে বলুন, আমরা কোন বাধা দেব না। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল রাতে প্রেসিডেন্ট ভাষণ সম্পর্কে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাব এবং একাদশ জাতীয় সংসদের সমাপনি বক্তব্যে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জনগণের কাছে যে ওয়াদা দিয়েছি, তা রক্ষা করাই আমাদের কাজ।
দুর্নীতি করতে আসিনি, জনগণের সেবা করতে এসেছি। দুর্নীতি অনেক কমিয়ে আনতে পেরেছি। চেষ্টা করে যাচ্ছি দুর্নীতি দূর করে উন্নয়ন করতে।
দুর্নীতি যথেষ্ট কমাতে পেরেছি বলেই এতো উন্নয়ন-সমৃদ্ধি দৃশ্যমান হয়েছে। মানুষের মধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে চেতনা সৃষ্টি করছি। কারণ অসৎ উপায়ে বিরানী খাওয়ার চেয়ে সৎভাবে বসবাস করে নুন খেলেও তৃপ্তি। আলোচনা শেষে ধন্যবাদ প্রস্তাবটি ভোটে দিলে তা সর্বসম্মতক্রমে গৃহীত হয়। বিরোধী দলের বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে কোন চূক্তি নয়, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। রাশিয়া, চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভিয়েতনামসহ প্রতিরক্ষা চূক্তি পৃথিবীর অনেক দেশের সঙ্গে চূক্তি আছে। বিশ্ব গ্লোবাল ভিলেজ।
স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আমাদের সামরিক বাহিনী প্রয়োজন। তাই সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিকভাবে গড়ে তুলছি। ফোর্সেস গোল প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। যুদ্ধ বিধ্বস্ত কুয়েতকে গড়ে তুলতে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। সৌদি আরবের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক করেছি অবকাঠামো নির্মাণ, কারিগরী সহায়তায়, দেশটির স্থল সীমানায় মাইন অপসারণের জন্য। তিনি দৃঢ়কন্ঠে বলেন, অন্য কোন দেশের যুদ্ধ হলে সেখানে আমাদের সেনাবাহিনী সেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে না। পবিত্র মক্কা ও মদিনার নিরাপত্তার রক্ষার প্রয়োজন হয়, সেখানে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী কাজ করবে। এখনে ভুল বোঝাবুঝির কোন অবকাশ নেই। গত ১০ বছরে কোন দেশের সঙ্গে আমাদের বৈরিতা হয়নি, সবার সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদে দেওয়া ভাষণে সরকারের কার্যক্রম বিষদভাবে তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে তা তুলে ধরেছেন।
বাংলাদেশকে আরও উন্নত করতে অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি, যা অর্থনৈতিক উন্নয়নে অনেক ভূমিকা রাখবে। পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী ট্যানেল নির্মাণ কাজ শুরু করেছি। আমরা প্রতিটি গ্রামকে শহরের সুবিধা সম্বলিত করে গড়ে তুলবো। নির্বাচনী ইশতেহারে তা তুলে ধরেছি। ৯৩ ভাগ গ্রামে বিদ্যুত সংযোগ দিয়েছি, প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বালবো। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ। নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি। গ্রাম পর্যন্ত ইন্টারনেট সংযোগ দিচ্ছি। প্রাইমারী শিক্ষা থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত বৃত্তি দিচ্ছি। ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থী একেবারেই নেই।
সারা বাংলাদেশ মানুষের জন্য সুপেয় পানি নিশ্চিত, স্বাস্থ্যসম্মত পয়নিঃস্কাশন ব্যবস্থা করে দিয়েছি। প্রত্যেক উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম করে দিচ্ছি। ৫৬০টি মডেল মসজিদ করে দিচ্ছি। যাতে সত্যিকার অর্থে ধর্মীয় শিক্ষা পায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কর্মসংস্থান ও বেকারত্ব দূর করতে আওয়ামী লীগ সরকারই বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। বেসরকারি খাতে ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। তরুণ সমাজেরা কর্মসংস্থান ব্যাংকের বিনা জামানতে ২ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে নিজেরাই কিছু কাজ করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছি, সেখানে নিজের দেশে বসে ট্রেনিং নিয়ে এই সেন্টারের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে পারে। যদি চাকুরির হিসেবে কম হতে পারে, নিজে স্বউদ্যোগে ব্যাপক কর্মসংস্থান হচ্ছে। তরুণ সমাজের কাজ করার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছি। রেডিও, টেলিভিশন, ব্যাংক, বীমাকে বেসরকারি খাতে দিয়েছি।