ছাত্রলীগের হামলায় ডাকসু নির্বাচনে কোটা সংস্কার আন্দোলনের (বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ) প্যানেল থেকে ভিপি প্রার্থী নুরুল হক নূরসহ তিন প্রার্থী আহত হয়েছেন। সোমবার ভোট চলাকালে রোকেয়া হলের ছাত্রলীগকর্মীদের কয়েকজন তাদের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ করা হয়।
নুরুল হক নূরসহ অন্য আহতরা হলেন- স্বতন্ত্র জোটের প্রার্থী অরণী ও শ্রাবণী শফিক দীপ্তি। এদিকে হামলা ও মারধরের পর অজ্ঞান হয়ে পড়েন নুরুল হক নূর। তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোকেয়া হলে ভোট কারচুপি হচ্ছে এমন অভিযোগ পেয়ে নূর এবং অন্য বিরোধী প্রার্থীরা সেখানে যান। হলের শিক্ষার্থীরা একটি কক্ষ ঘেরাও করে রাখেন। তাদের অভিযোগ, সেখানে তিনটি ব্যালটবাক্স আগে থেকে ভরে রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে শিক্ষক ও নির্বাচনী কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাইতে গেলে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন নূর ও তার সঙ্গে থাকা দুই প্রার্থী।
প্রসঙ্গত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এবং হল সংসদের নির্বাচনে বেগম রোকেয়া হল ভোটকেন্দ্র থেকে তিনটি ব্যালট বাক্স সরিয়ে ফেলার অভিযোগ করেছেন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা। এ অভিযোগে বিক্ষোভের মুখে ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখা হয়েছে।
এর আগে সোমবার সকাল ৮টা থেকে অন্যান্য ভোটকেন্দ্রে ভোট শুরু হলেও রোকেয়া হলে শুরু হয় এক ঘণ্টা দেরিতে।
ছাত্রদল, বাম জোট ও সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ আন্দোলনের একাধিক প্রার্থী অভিযোগ করেন যে, রোকেয়া হলে গায়েব হওয়া তিনটি ব্যালট বাক্স সরিয়ে ফেলেছে ছাত্রলীগ।
আরো পড়ুন : রোকেয়া হলের ভোটগ্রহণ শুরু এক ঘণ্টা দেরিতে
সোমবার সকাল ৮টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন শুরু হলেও রোকেয়া হলে এক ঘণ্টা দেরিতে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। এ বিষয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা সালমা আক্তার বলেন,‘কিছু জটিলতার কারেণ নির্ধারিত সময়ে ভোট শুরু হয়নি।’
তবে কী ধরনের জটিলতা সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি। তবে হলের ছাত্রীদের একটি সূত্র বলছে, ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার আগেই প্রার্থীরা খালি ব্যালট বাক্স দেখতে চায়, কিন্তু হল প্রশাসন তাদেরকে খালি ব্যালট বাক্স দেখতে দেয়নি। ফলে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকেরা মিলে ভোটগ্রহণ স্থগিত রাখে।
রোকেয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী উম্মে কুলসুম অভিযোগ করেন, আমাদের হলে অস্বচ্ছ ব্যালট বক্স নিয়ে ঝামেলা হয়। এরপর আমরা ভোট দান বন্ধ রেখেছিলাম।
রোকেয়া হলে ভোটকেন্দ্র করা হয়েছে টিভি রুমে। সেখানে গণমাধ্যম কর্মীদের যেতে দেয়া হচ্ছে না। হল গেট থেকে বলা হচ্ছে এখন ভেতরে যাওয়া যাবে না। ভোট দেরিতে শুরু হওয়ায় ছাত্রীদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে।
ছাত্রদলের জিএস প্রার্থী আনিসুল হক অনিক বলেন,‘কী কারণে ভোটগ্রহণ দেরিতে শুরু হয়েছে আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। আমরা প্রভোস্ট ম্যাডামকে বলার পর ৯টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। দেরি করার যৌক্তির কারণ দেখি না। ব্যালট ব্যাক্স আমাদের সামনে খুলে সিলগালা করা হলেও কোনও বাক্সেই নম্বর নেই। ফলে এ নিয়ে আমরা শঙ্কায় রয়েছি।’
রোকেয়া হল সংসদের ছাত্রলীগের ভিপি প্রার্থী ইসরাত জাহান তন্বী বলেন,‘আমাদেরকে বিশ্ববিদ্যলালয় প্রশাসন ৮টার আগে ব্যালট বাক্স খুলে দেখিয়েছে। পরবর্তীতে অন্যান্য দল ও প্যানেলের যারা ছিল তারা বিরোধিতা করায় ভোটগ্রহণ শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ছেলেদের ১৩ ও মেয়েদের ৫ হলে মোট ভোটার রয়েছে ৪৩ হাজার ২৫৬ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ২৬ হাজার ৯৪৪ যা মোট ভোটারের ৬২ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং নারী ১৬ হাজার ৩১২ জন; যা মোট ভোটারের ৩৭ দশমিক ৭১ শতাংশ।