স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদে আবারও নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি নূরুল হক নূর। গতকাল রোববার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ দাবি করেন তিনি। নূর বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা চাইলে আমি দায়িত্বগ্রহণ করব। না চাইলে করব না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি। তার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থেকে আমি গণভবনে গিয়েছি। সেটি আমার সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেই গণভবনে গিয়েছি।
এদিকে পাঁচ দফা দাবিতে আজ সোমবার ক্লাস বর্জন ও ভিসির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে নির্বাচন বর্জনকারী প্যানেলগুলো। পৃথক সাংবাদিক সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তারা।
দাবিগুলো হলো- ডাকসু নির্বাচন বাতিল, পুনঃতফসিল দেয়া, ভিসির পদত্যাগ, মামলা প্রত্যাহার ও হামলাকারীদের বিচার। নির্বাচন বর্জনকারী প্যানেলগুলোর পক্ষ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন স্বতন্ত্র জোট থেকে ভিপি প্রার্থী অরণি সেমন্তি খান।
এ দিকে পৃথক সাংবাদিক সম্মেলন করে আজ ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ভিসির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেবে প্রগতিশীল ছাত্র ঐক্য। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে বলে জানানো হয়েছে। গতকাল দুপরে মধুর ক্যান্টিনে এ ঘোষণা দেন ডাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে অংশ নেওয়া লিটন নন্দী। তিনি বলেন, ১১ মার্চের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় রচিত হয়েছে। এই নির্বাচন আমরা মানি না। ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনকে আমরা বৈধতা দিতে পারি না। এই ডাকসু আমাদের ডাকসু। পুর্ননির্বাচন করার জন্য আমরা কঠিন আন্দোলন গড়ে তুলবো।
আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ভিসি কার্যালয় ঘেরাও করা হবে। দাবি আদায় না পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। নবনির্বাচিত ভিপি নূরল হক নূর’কে নিয়ে লিটন নন্দী বলে, তার আগের বক্তব্য এবং গণভবনের বক্তব্যের মধ্যে ব্যাপক ধোয়াশাপূর্ণ অবস্থান দেখা যাচ্ছে। তার বক্তব্য আন্দোলনের স্পিরিটের জন্য ক্ষতিকর। নূর এটা নিজের বক্তব্য কিনা আমাদের সন্দেহ আছে। তাই বিষয়টি জানার জন্য গতকাল থেকে তার সাথে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেলও কোনো ভাবে যোগাযোগ করতে পারিনি। তারপরও আমরা আশা করি তিনি আমাদের সমর্থন দেবেন। কারন তার প্যানেলও ভুক্তভোগী।
ভুলভাবে উপস্থাপন না করতে ভিপির অনুরোধ: গতকাল সাংবাদিক সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নূর বলেন, আমরা প্রথম শুনেছিলাম যে গণভবনে শুধু ডাকসু এবং হল সংসদের নিবার্চিত প্রতিনিধিরা যাবেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা উপস্থিত। তাদের দেখে আমার নিজের অস্বস্তিবোধ হয়েছে। আপনারা জানেন যে স্বাভাবিকভাবে মানুষের একবার ‘কনসেনট্রেশন’ নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে মানুষের আর কথা বলার মুড থাকে না। তাই আমি সেখানে (গণভবনে) অনেক কথা বলতে পারিনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রেখে আমরা সেখানে গিয়েছি। কারণ, তিনি রাষ্ট্রের সবোর্চ্চ নির্বাহী ব্যক্তি। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম স্বাধীনভাবে পরিচালনা করার সে এখতিয়ার রয়েছে। তাই আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে পুনর্র্নিবাচন দেয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, ডাকসু নির্বাচনটা হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়, এটা সরকারের কোনও বিষয় না। প্রধানমন্ত্রী কারচুপি ও অনিয়মের নির্বাচনে যারা জয়ী হয়েছেন তাদের গণভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমাদের শ্রদ্ধাবোধ থেকে আমরা সেখানে গিয়েছি। সেখানে ডাকসুর বাইরেও আবাসন সংকট এবং শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কথা বলেছি। কিন্তু নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের কিছুই করার নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। আমি শুধু প্রধানমন্ত্রীর নজরে এনেছি যে এই নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে। শিক্ষার্থীরা সেটির সমাধান চাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জায়গা থেকে তিনি যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করেন।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে ডাকসুর ভিপি বলেন, আমাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করবেন না। আমি যেটা আগেই বলেছি যে এত অনিয়ম-কারচুপির পরেও ভিপি ও সমাজসেবা পদে আমরা জয়ী হয়েছি। সে জায়গা থেকে বলেছিলাম অন্তত এই দুটি পদ বাদে বাকি পদগুলোতে নির্বাচন দিতে। তবে, এটা ছিল আমার ব্যক্তিগত বক্তব্য। কিন্তু আমরা দেখেছি যে শিক্ষার্থীরা চাচ্ছে যে সব পদে পুননির্বাচন। সে জায়গা থেকেই আমিও তাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে বলছি, পুননির্বাচন দেওয়া হোক।
এর আগে শনিবার দুপুর ২টা থেকেই প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রেণে সরকারি বাসভবন গণভবনে যান ডাকসু ও হল সংসদের নির্বাচিতরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩টি বাসে তারা গণভবনে পৌঁছান। সবার শেষে বেলা ৩টার দিকে একটি প্রাইভেটকারে গণভবনে পৌঁছান ডাকসু ভিপি নুরুল হক নূর। সঙ্গে ছিলেন ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আকতার হোসেনও। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর একজন বিশেষ সহকারী ফোনে আমন্ত্রণ জানান ডাকসু এবং হল সংসদে নির্বাচিতদের।
প্রসঙ্গত, ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে ভিপি এবং সমাজসেবা সম্পাদক ছাড়া বাকি ২৩টি পদে জয়ী হয়েছে ছাত্রলীগ। ২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে তা বর্জন করেছে ছাত্রলীগ ছাড়া সবকটি প্যানেল। তারা পুননির্বাচন দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আলটিমেটাম দিয়েছে।
Check Also
বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়িয়ে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেবহাটায় মানববন্ধন
দেবহাটা প্রতিনিধি: স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুদের গ্রেফতার এবং বিএনপির …