ভোট কেন্দ্র দখলের সুযোগ নেই: চেষ্টা করলেই গুলি : সাতক্ষীরার এসপি

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জমাদি পাঠানো শুরু হয়েছে। শনিবার সকালে নির্বাচনী সামগ্রী পাঠানো কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন রির্টানিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক এস.এম মোস্তফা কামাল।

রিটার্নিং অফিসার এস.এম মোস্তফা কামাল জানান, ভোটকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণের জন্য ৬ স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেছে প্রশাসন।

সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান জানান, প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশসহ ১৪ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবেন।

তিনি আরো জানান, সাত উপজেলায় ৭৮টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভার ৫৯৭টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ ২৪ মার্চ রবিবার। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার প্রচারণা। রবিবার সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ করা হবে। এদিকে সাতটি উপজেলার ৫৯৭টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৪৯৭টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা। এসব ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রসহ সর্বত্র সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশে ভোট গ্রহণে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নির্বাচনের দিন ছয় স্তরের নিরাপত্তা বলয়ে ঢাকা থাকবে সাতক্ষীরা। নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

নির্বাচনে কোন রকম অরাজকতা সহ্য করা হবে না বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাজ্জাদুর রহমান বলেছেন, কেন্দ্র দখলের চিন্তা যদি কেউ করে, আর আমরা যদি সেটা জানতে পারি এমনকি কারোর যদি বিশৃঙ্খলার পরিকল্পনাও থাকে তাহলে সে জীবন নিয়ে ঘরে ফিরতে পারবে না। জেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ১৯ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী, ৩১ জন ভাইস চেয়ারম্যান ও ২৩ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী। জেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তৃতীয় ধাপে আগামী ২৪ মার্চ সাতক্ষীরার ৭টি উপজেলায় এক যোগে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। গত ৮মার্চ প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রচার প্রচারণা চালিয়েছেন প্রার্থীরা। সাতক্ষীরার ৭ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ১৯ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী, ৩১ জন ভাইস চেয়ারম্যান ও ২৩ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী। তবে প্রার্থীদের মধ্যে শুধুমাত্র দেবহাটা উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী ওজিয়ার রহমান (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি) ছাড়া সকল প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীই আওয়ামীলীগ অথবা অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী। সাতক্ষীরায় প্রার্থীরা হলেন- সাতক্ষীরা সদর উপজেলা: সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কলারোয়া উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তিন পদেই লড়ছেন ২ জন করে প্রার্থী। তালা উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ২ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জনসহ মোট ১০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আশাশুনি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ২ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন প্রার্থীর প্রতীক বরাদ্দ করা হয়েছে। দেবহাটা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কালিগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। শ্যামনগরে ২ পদের বিপরীতে লড়বেন মোট ১০ জন। এখানে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন প্রার্থী। এদিকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা জেলার সাতটি উপজেলার ৫৯৭টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৪৯৭টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা। ২২ মার্চ সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১৩৭টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে ১২৩টি ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। এছাড়া তালা উপজেলার ৯২টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪৬টি ঝুঁকিপূর্ণ, কলারোয়া উপজেলার ৭৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৬৫টি ঝুঁকিপূর্ণ, দেবহাটা উপজেলার ৪০টি কেন্দ্রের মধ্যে ২০টি ঝুঁকিপূর্ণ, আশাশুনি উপজেলার ৮৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৬৯টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ, কালিগঞ্জ উপজেলার ৭৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫২টি ও শ্যামনগর উপজেলার ৮৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫৪টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সূত্র আরও জানায়, ঝুঁকিপূর্ণ এসব কেন্দ্রে নির্বাচনী পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এসব কেন্দ্রে বাড়তি পুলিশসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত থাকবে। এছাড়াও মোবাইল টিম সবসময় প্রস্তুত থাকবে। এক হাজার ৮৬৪ জন পুলিশ সদস্য তিন স্তরে নিরাপত্তা দেবে। এর বাইরে আনসার, বিজিবি এবং র‌্যাবের সমন্বয়ে ছয় স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘প্রত্যেক কেন্দ্রে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে ভোটগ্রহণ করা হবে

পুলিশ সুপার মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেছেন, ২৪ মার্চের উপজেলা নির্বাচন হবে সাতক্ষীরার মাটিতে আর একটি রোল মডেল নির্বাচন। এখানে ভোটাররা ভোট দিতে আসবেন নির্ভয়ে ও নির্বিঘ্নে। শান্তিপূর্ণভাবে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে ভোটাররা বাড়ি চলে যাবেন। আমরা আপনাদের নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা দেবো। শুক্রবার সকালে সাতক্ষীরা পুলিশ লাইন্স মাঠে ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২০১৯ (৩য় ধাপ) ভোটগ্রহণ উপলক্ষে আইন শৃংখলা বিষয়ক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, কোন মহল যদি ভোট কেন্দ্রে এসে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করে বা কেন্দ্রে কোন পক্ষকে জেতানো বা হারানোর চেষ্টা করে বা ভোট কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করে আমি তাদেরকে সর্তক করে দিয়ে বলতে চাই, তাদের পরিণতি হবে খুব ভয়াবহ। বিশৃংখলা করলে তারা কেন্দ্র থেকে প্রাণ নিয়ে বাড়ি যেতে পারবেনা। জোর করে ভোট কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করলেই গুলি করা হবে। ২৪ মার্চের নির্বাচন হবে অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ।
ব্রিফিং অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পদন্নোতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার) মোহাম্মদ ইলতুৎ মিশ, সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের এডিশনাল এসপি মেরিনা আক্তার, কালিগঞ্জ সার্কেলের এডিশনাল এসপি জামিরুল ইসলাম, তালা সার্কেলের এডিশনাল এসপি অপু সরোয়ার, দেবহাটা সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার ইয়াছিন আলী, জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক আজম খান, জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ আলী আহমেদ হাশেমী, সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মোমিন হোসেনসহ জেলার ৮টি থানার অফিসার ইনচার্জ, এসআই, এএসআই ও ফোর্সবৃন্দ।

Check Also

তাবলীগ জামায়াতের সাদপন্থীদের নিষিদ্ধের দাবিতে সাতক্ষীরায় বিক্ষোভ-সমাবেশ

মুহাম্মদ হাফিজ, সাতক্ষীরা : তাবলীগ জামাতে সাদপন্থীদের বর্বোরিচত হামলার প্রতিবাদ ও সাতক্ষীরা জেলা আ.লীগের সহসভাপতি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।