ক্রাইমর্বাতা রিপোট: সাতক্ষীরা সংবাদদাতা: হামলা,মামলা,জাল ভোট প্রদান,পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়াসহ নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে তৃতীয় ধাপের সাতক্ষীরায় একদলীয় উপজেলা নির্বাচন শেষ হয়েছে। সাধার মানুষ ভোট না দিয়ে সরকারের অনিয়মের প্রতিবাদ জানিয়েছে বলে সাধারণ ভোটাররা জানান।
এ নির্বাচণে সাতক্ষীরা জেলার বেশির ভাগ কেন্দ্রে তেমন ভোট পড়েনি। পর্যবেক্ষদের দাবী
প্রথম ঘণ্টায় কিছু কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ১ থেকে ৫টি বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
গতকাল রবিবার সকাল ১১টার দিকে শহরের কুকরালি কেন্দ্রের পোলিং এজেন্ট আকরাম বলেন, ‘সকাল ৮টা থেকে ৯টার ভেতরে মাত্র ১০ ভোটার ভোট দিয়েছেন।
সকাল ৮টায় পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডে পারকুকরালি কেন্দ্রে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করে দেখা যায়, কয়েকজন পোলিং এজেন্ট বসে আছেন। পুরো স্কুলের ভেতরে একজনও ভোটারকে দেখা যায়নি।
কেন্দ্রটির প্রিজাইডিং অফিসার জানান,তার কেন্দ্রে ৮ টি বুথে ৩৫০২জন ভোটার তার ভোট প্রদান করতে পারবে। তবে এখন পর্যন্ত ভোটার উপস্থিতি খুব কম। বেড়া বাড়লে উপস্থিত বাড়তে পারে। সকাল ৯টা একই ওয়ার্ডেও বাটকেখালি কেন্দ্রে যেয়ে যেয়ে দেখা যায় কেন্দ্র কোথাও কোন ভোটারের লাইন নেই। পুলিশ ও আনছার কেন্দ্র পাহারা দিচ্ছে। সম্মুখে কেন্দ্রের মধ্যে দুটি কুকুর শুয়ে আছে। একই কেন্দ্রে গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। সদরের ৪০টি কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায় ভোটার বিহীন নির্বাচন কেন্দ্র সমূহ। কোথাও ভোট কেন্দ্রে ভোটরদের লাইন চোখে পড়েনি। কেন্দ্রের বাইরেও ছিলনা তেমন নির্বাচনি আমেজ।
কেন্দ্রটির প্রিজাইডিং অফিসার আবু তাহের জানান, তার কেন্দ্রে সকাল ৯টা পর্যন্ত ১০টি ভোট পড়েছে। তার কেন্দ্রে ৯টি বুথে ৩৬৩১ জন ভোটার। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৭৯৭ জন। কেন্দ্রটিতে ১২টি প্রতিকের বিপরীতে ১০৮ জন পোলিং এজেন্ট থাকার কথা। সেখানে নৌকার ৭জন সহ ২৪ জন পোলিং এজেন্ট রয়েছে।
বেলা ১২ টা পর্যন্ত তিন ঘন্টায় সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ ভোট পড়েছে। সব কেন্দ্রের ভোট গ্রহন কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা কর্মীদের অলস সময় পার করতে দেখা গেছে। শহরের সরকারি কলেজ কেন্দ্রে চার ঘন্টার ব্যবধানে ১০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে প্রিজাইডিং অফিসার মো. ইয়াসিন আলি জানিয়েছেন।
এদিকে, আশাশুনির কেন্দ্রে কেন্দ্র্রে নৌকার সমর্থকরা জোর করে ব্যালটে সীল মারছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক ভিডিও ফুটেজে বিদ্রোহী প্রার্থী শহিদুল ইসলাম পিন্টু অভিযোগ করেছে। এ উপজেলার খাজরা কেন্দ্রে হাঙ্গামার খবর পাওয়া গেছে। আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর আলিফ রেজা জানান, কুল্লা ইউনিয়নের আগরদাঁড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র্রে জোরপূর্বক ভোট দেওয়ার ঘটনায় কিছু সময় ধরে ভোট গ্রহন বন্ধ রাখা হয়। অপরদিকে, কলারোয়ার বাটরা কেন্দ্রে নৌকা ও আনারস প্রতিকের দুইপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে হাঙ্গামার ঘটনা ঘটেছে। এতে আনারস প্রতিকের সমর্থক মুক্তিযোদ্ধা আফছার উদ্দীনসহ তিন জন আহত হয়েছেন। আহতরা সাতক্ষীরা সদর ও কলারোয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। সেখানকার উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেলিম শাহনেওয়াজ জানান, সেখানে দ্রুত নিরাপত্তা বাহিনী পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
অপরদিকে, আশাশুনির বিদ্রোহী প্রার্থী শহিদুল ইসলাম পিন্টু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার দেবনাথের দ্রুত অপসারন দাবি করে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ওসি প্রিজাইডিং অফিসারদের প্রভাবিত করে প্রতি কেন্দ্র্রে এক হাজার ব্যালটে নৌকার সিল মারার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি জানান ১০ টি কেন্দ্রে থেকে তার এজেন্টদের বের করে দিয়ে কর্মকর্তাদের সহায়তায় নৌকায় সিল মারা হচ্ছে।
এদিকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্রকরে সহিংসতায় সাতক্ষীরার ধূলিহরে ইউপি সদস্যসহ ২ জন আহত হওয়ার ঘটনায় ধুলিহর ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাবু সানাসহ ২৩ জনকে আসামী করে সাতক্ষীরা থানায় মামলা হয়েছে। শনিবার রাতে ইউপি সদস্য রেজাউল করিম মিঠু বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
সাতক্ষীরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান মামলা রেকর্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে।
এদিকে সাতক্ষীরার সাত উপজেলায় ৭৮টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভার ৫৯৭টি কেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ৪৯৭টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ১৯ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী, ৩১ জন ভাইস চেয়ারম্যান ও ২৩ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী। তবে প্রার্থীদের মধ্যে শুধুমাত্র দেবহাটা উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী ওজিয়ার রহমান (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি) ছাড়া সকল প্রতদ্বন্দ্বি প্রার্থীই আওয়ামীলীগ অথবা অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী।