জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নাজমুল কবির জানান, নির্বাচনী বিধান অনুযায়ী প্রদত্ত ভোটের এক অষ্টমাংশের কম পেলে প্রার্থী তাঁর জামানত হারাবেন। এ অনুযায়ী রোববার সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ২৮ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
জামানত খোয়ানো সাতজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর একজন হলেন কালীগঞ্জ উপজেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা শেখ আতাউর রহমান। নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ৯ হাজার ৮৯৬ ভোট। এ উপজেলায় ৫৬ হাজার ৮৩৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ মেহেদী। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ মেহেদি হাসান পেয়েছেন ৩৪ হাজার ৭৬৬ ভোট। জামানত হারানো শেখ আতাউর রহমান প্রয়াত উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ ওয়াহেদুজ্জামানের (৭১) চাচাত ভাই।
কালীগঞ্জ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে পরাজিত হয়ে জামানত খুইয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ডিএম সিরাজ (২২০০ ভোট), উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার আবদুল হাকিম (১১৫৪৬ ভোট), জাহাঙ্গীর আলম (৩৫১৯ ভোট), আবদুল কুদ্দুস (১২৩৯১ ভোট), মাছ ব্যবসায়ী আবদুল হামিদ (৫৭৫ ভোট) ও আফসানা বেগম (১০৩৩১ ভোট)।
তালা উপজেলার স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল জব্বার ৯ হাজার ৯৪৮ ভোট ও মো. আমিনুজ্জামান ২ হাজার ৯১৫ ভোট পাওয়ায় বিধিমতে তাঁদের জামানত বাতিল হয়েছে। এই উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জেবুন্নেসা সুলতানা ১০ হাজার ৭৩৪ ভোট ও মোস্তারি সুলতানা ১ হাজার ২৫৪ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন। এখানে ৫০ হাজার ৮৪০ ভোট পেয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষ সনৎ কুমার। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এমএম ফজলুল হক পেয়েছেন ৪৮ হাজার ৫৫৬ ভোট।
শ্যামনগর উপজেলায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান প্রার্থী আজিবর রহমান ৯৬৪ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন। এখানে ৭২ হাজার ৩২৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এস এম আতাউল হক দোলন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ওসমান গনি পেয়েছেন ১০ হাজার ৯৯০ ভোট।
দেবহাটা উপজেলায় ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান প্রার্থী অজিহার রহমান ১ হাজার ৮১ ভোট ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সাঈদ মাহফুজুর রহমান ২ হাজার ৩৮৬ ভোট পেয়েছে জামানত খুইয়েছেন। এই উপজেলায় ২৪ হাজার ৭৬৫ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল গনি। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী গোলাম মোস্তফা পেয়েছেন ১৬ হাজার ২৯৫ ভোট।
এদিকে, সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে জামানত হারিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান আলী (১৫৩৭২ ভোট), পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাশেদুজ্জামান রাশি (১১৬৯৬ ভোট), জেলা শ্রমিক লীগের সহসভাপতি তামিম আহমেদ সোহাগ (১০০৩৫ ভোট) ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী আক্তার হোসেন (৭০৩২ ভোট)। এখানে ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়ী হন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মারুফ তানভীর হোসাইন সুজন। তিনি পেয়েছেন ৪৫ হাজার ৬১৪ ভোট।
সদর উপজেলায় ৬২ হাজার ৭৭৩ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন নৌকার প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবু। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এস এম শওকত হোসেন পেয়েছেন ৩৪ হাজার ৩৫৮ ভোট।
৭১ হাজার ৭৯৭ ভোট পেয়ে কলারোয়ায় জিতেছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আমিনুল ইসলাম লাল্টু। বিপরীতে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের ফিরোজ আহমেদ স্বপন পেয়েছেন ৩৭ হাজার ২১১ ভোট।
এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী রাজিয়া সুলতানা দুলালী ৮ হাজার ৪৫৩ ভোট ও শ্যামনগরে মো. মিজানুর রহমান ৯ হাজার ৬৫ ভোট, মো. ফারুক হোসেন ৯৫৭ ভোট ও নাফিজা সুলতানা ৮ হাজার ৪৩ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন।
এ উপজেলায় ৫৬ হাজার ৮৩৮ ভোট পেয়ে বিজয় নিশ্চিত করেছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাঈদ মেহেদি। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ মেহেদি হাসান পেয়েছেন ৩৪ হাজার ৭৬৬ ভোট।
অন্যদিকে দেবহাটা উপজেলায় জামানত হারানো প্রার্থীরা হলেন ভাইস চেয়ারম্যান পদে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির রিয়াজুল ইসলাম (২৩৭ ভোট), স্বতন্ত্র প্রার্থী আনিসুর রহমান বকুল (৪৩৩৪ ভোট) ও আফরোজা পারভীন (৬০৮ ভোট)।
জেলা নির্বাচনী অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ১৩৭টি কেন্দ্রে ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৩২৫ ভোটারের মধ্যে প্রদত্ত ভোট ১ লাখ ২৮ হাজার ৪৬৪টি। তালার ৯৩টি কেন্দ্রে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৪৪৫ ভোটারের মধ্যে ১ লাখ ১ হাজার ৬২০ ভোট, কলারোয়ার ৭৫টি কেন্দ্রে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৭৩০ ভোটারের মধ্যে ১ লাখ ১১ হাজার ৭৬ ভোট, কালীগঞ্জে ৭৮টি কেন্দ্রে ২ লাখ ১৭ হাজার ৭০৬ ভোটারের মধ্যে ১ লাখ ৩ হাজার ৪৩০ ভোট, আশাশুনির ৮৫টি কেন্দ্রে ২ লাখ ১২ হাজার ৫৯১ ভোটারের মধ্যে ১ লাখ ১৮ হাজার ১১৩ ভোট, শ্যামনগর উপজেলার ৮৯টি কেন্দ্রে ২ লাখ ৫৩ হাজার ১৭ ভোটারের মধ্যে ৮৬ হাজার ৫১২ ভোট ও দেবহাটা উপজেলার ৪০টি কেন্দ্রে ৯৭ হাজার ৮৩৬ ভোটারের মধ্যে ৪৯ হাজার ৬৭৪ ভোট পড়েছে।