ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ আশাশুনির তুয়ারডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২৭টি ভোট পড়ার পর ভোট ডাকাতরা সব ব্যালট নিয়ে নিজেদের মতো করে নৌকা প্রতীকে সিল মেরেছে। এছাড়া অন্যান্য কেন্দ্রে জোর করে ঢুকে একইভাবে ভোট ডাকাতি করা হয়েছে। এমন সব তথ্য তুলে ধরে আশাশুনি উপজেলা নির্বাচনে আনারস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী পরাজিত প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম পিন্টু ফলাফল বাতিল করে নতুন নির্বাচন দাবি করেছেন।
এ ব্যাপারে তিনি জেলা রিটার্নিং অফিসারকেও লিখিতভাবে জানিয়েছেন। নির্বাচনের আগে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপারের উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ভোটকেন্দ্র দখলের চেষ্টা করা হলে তাকে লাশ হয়ে ঘরে ফিরতে হবে। প্রকাশ্যে ভোট ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও পুলিশ অথবা কর্তৃপক্ষ তা প্রতিরোধের চেষ্টা করেননি। এমনকি ভোট চলাকালে বেলা ১১টায় এ অভিযোগ দিলেও কোনো কাজ হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বুধবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা বলেন পিন্টু। তিনি বলেন, তার এজেন্টদের বের করে দিয়ে টেবিলে ব্যালট রেখে নৌকা প্রতীকে সিল মারার দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী রয়েছে। মুড়ি বইতে নৌকায় সিল মারা অবস্থায় বহু সংখ্যক ব্যালট রেখে দিতে দেখা গেছে। পরে সেগুলো ভোট বাক্সে ঢুকানো হয়েছে। এমনকি তুয়ারডাঙ্গা কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার সুকুমার মন্ডল প্রার্থী পিন্টুকে বলেছেন ‘নৌকার প্রার্থী মোস্তাকিমের সন্ত্রাসী বাহিনীর চাপের মুখে ইউএনও ও ওসির সাহায্য চাইলেও তারা কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় সন্ত্রাসীদের হাতে ব্যালট তুলে দিতে বাধ্য হই। অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, যেসব কেন্দ্রে ভোট ডাকাতি হয়নি সেখানে ২৫-৩০ শতাংশ ভোট পড়েছে। আর ভোট ডাকাতির কেন্দ্রগুলিতে ৫৫- ৯৫ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে দেখানো হয়েছে। উপজেলার ৭৮টির মধ্যে ৪৯টি কেন্দ্রে এধরনের ডাকাতি ও অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, ভোট কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী এবিএম মোস্তাকিম বাহিনীর ডাকাতদের এই তা-ব দেখে সাধারণ ভোটাররা চোখের জল ফেলে বাড়ি ফিরে গেছেন। প্রশ্নবিদ্ধ এই ভোট বাতিল করে তিনি নির্বাচন কমিশনের কাছে পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। তার এই দাবি না মানা হলে প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারদের বক্তব্য এবং মিডিয়াকর্মীদের ধারণকৃত ডকুমেন্ট নিয়ে আদালতের মাধ্যমে আইনি লড়াইয়ে নামতে বাধ্য হবেন তিনি। তিনি বলেন, নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা চলছে আশাশুনিতে। এরই মধ্যে কয়েকজনকে মারপিট করা হয়েছে। বাড়ি ঘর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। আহতরা সাতক্ষীরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে, অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তুয়ারডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার হাড়িভাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুকুমার মন্ডল জানান, আমি ২৭টি ভোট পড়ার পর সব ব্যালট ভোট ডাকাতদের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলিনি। তবে কিছু ঝামেলা হয়েছিল, ইউএনও কে জানানোর পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়।
অপরদিকে প্রার্থী শহিদুল ইসলাম পিন্টুর মোবাইলে ধারণকৃত ছবিতে মুড়ি বইতে নৌকায় ভোট দিতে দেখা গেছে। এছাড়া প্রিসাইডিং অফিসারও ভোট ডাকাতদের হাতে ব্যালট তুলে দেওয়ার কথা স্বীকার করার কথার রেকর্ড শুনিয়েছেন প্রার্থী শহিদুল ইসলাম পিন্টু।
২৪ মার্চ অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে বেসরকারি ফল অনুযায়ী নৌকার প্রার্থী এবিএম মোস্তাকিম ৭৫,৩৪১ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আনারস প্রতীকের শহিদুল ইসলাম পিন্টু পেয়েছেন ৪০,৭০৩ ভোট।
ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর সংবাদ সম্মেলন: এদিকে একই দাবি নিয়ে বুধবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে আরও একটি সংবাদ সম্মেলন করেছেন আশাশুনি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী কৃষক লীগ সভাপতি স ম সেলিম রেজা। তিনি বলেন, ৪৮টি কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী এবিএম মোস্তাকিম একজন প্রার্থীর সাথে প্যানেল করে ভোট ডাকাতি করিয়েছেন। এ সময় কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়। জোর করে সিল মারার সময় কয়েকজনকে জনগণ ধরে ফেললেও কোনো প্রতিকার হয়নি। এসব ঘটনার সময় রিটার্নিং অফিসার, সহকারি রিটার্নিং অফিসার এবং ওসির কোনো সহায়তা পাওয়া যায়নি। তিনি আশাশুনিতে পুনরায় ভোট দাবি করেন।
Check Also
যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …