ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ তেল গ্যাস বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, নিমতলী-চুড়িহাট্টা থেকে বনানী, সড়ক থেকে ভবন, কারখানা থেকে অফিস সর্বত্রই ‘উন্নয়নের’ মৃত্যুকূপ তৈরি করা হয়েছে। সীমাহীন লোভ, ক্ষমতাবানদের বিশ্বাস-আশ্বাস ঘাতকতা, জনস্বার্থের প্রতি চরম অবজ্ঞা, ক্ষমতার দাপট ও দুর্নীতি, সর্বোপরি জবাবদিহির ভয়ংকর অনুপস্থিতি এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে। তাই এই প্রতিটি অকালমৃত্যুর দায় রাষ্ট্রের।
সুন্দরবন বিনাশী রামপাল প্রকল্প ও দুর্নীতির দায়মুক্তি আইন বাতিল এবং গ্যাস অনুসন্ধান ও পরিবেশবান্ধব সাশ্রয়ী বিদ্যুতের জন্য জাতীয় সক্ষমতা বিকাশের দাবিতে আজ এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
পল্টনস্থ মুক্তি ভাবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান, জ্বালানী বিশেষজ্ঞ কল্লোল মোস্তফা, বাম জোট নেতাদের মধ্যে নাসিরউদ্দিন নাসু, শম্পা বসু, নজরুল ইসলাম,ফকরুদ্দিন খান আতিক প্রমুখ।
এতে তিনি আরো বলেন, দেশে উন্নয়নের নামে সকল পর্যায়ে বিচার বিবেচনাহীন অদূরদর্শী লোভী দায়দায়িত্বহীন প্রকল্প অনুমোদন করা হচ্ছে, নির্মাণ ও ক্রয় চলছে। জনগণের ওপর নজরদারি বাড়ানোর জন্য শত হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করলেও কারখানা, ভবন, সড়কসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বিধানের কোনো নজরদারি ব্যবস্থা নেই, তদারকি নেই, জবাবদিহি নেই। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্ষম ও কার্যকর করার উদ্যোগ নেই।
যেদেশে শতাধিক মানুষ মৃত্যুর পরও ১০ বছরে পুরনো ঢাকায় ভয়াবহ গুদাম সরানো হয় না, আবারো অকাল মৃত্যুর মুখে পতিত হয় মানুষ, যেখানে একের পর বহুতল ভবন হয় কোনোরকম নিয়মকানুন ছাড়া, যেখানে বাস ট্রাক চলতে থাকে ফিটনেস ছাড়া এবং প্রতি বছরে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয় সেখানে বলা হয় এর চাইতে লক্ষগুণ বিপজ্জনক পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র হবে সকল ঝুঁকিমুক্ত।
যে সরকার সচিবালয়ের পাশের নদীকে ড্রেনে পরিণত হওয়া ঠেকাতে পারে না তারা বলতে থাকে বছরে ৪৭ লাখ টন কয়লা পুড়লেও সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না!
তিনি বলেন, প্রাণ প্রকৃতি দেশ বিনাশী আরেকটি বড় দৃষ্টান্ত সুন্দরবন বিনাশী রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। গত ৮ বছরে সুন্দরবন বিনাশী রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প কীভাবে বাংলাদেশের জন্য ভয়ংকররকম সর্বনাশা তার অনেক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ আমরা সরকারের কাছে হাজির করেছি। সরকার সেগুলো উপেক্ষা করছে আর দেশ বিদেশে দিয়ে যাচ্ছে একের পর এক মিথ্যা তথ্য।
বাংলাদেশের জন্য, দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যতের কোটি কোটি মানুষের জন্য, সুন্দরবন একটি জীবন মরণ প্রশ্ন। সবাই জানেন যে, বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন পরিবেশগত দিক থেকে, প্রাণবৈচিত্রের দিক থেকে অতুলনীয়, সেজন্য এটি ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্বঐতিহ্য হিসেবে ঘোষিত। শুধু তাই নয়, এই বন বাংলাদেশের জন্য অসাধারণ একটি প্রাকৃতিক সুরক্ষা প্রাচীর হিসেবে কাজ করে। উপকূলের কয়েক কোটি মানুষের জীবন জীবিকা সম্পদ সুন্দরবনের অস্তিত্বের ওপর নির্ভরশীল। প্রাকৃতিক ভাবে পাওয়া এরকম অতুলনীয় সম্পদ হেলায়, লোভে, দায়িত্বহীনতা আর জেদ দিয়ে ধ্বংস করা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।
আর এজন্য তিনি স্থল ও সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, এতে জাতীয় সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বাপেক্সকে বিদেশি কোম্পানির সাবকন্ট্রাক্টর না বানিয়ে স্বাধীন আন্তর্জাতিক মানের সংস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। গ্যাস সংযোগে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। দুর্নীতিবাজদের লোভের বোঝা মেটাতে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো চলবে না। সুন্দরবন বিনাশী সকল প্রকল্প অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। উপকূল জুড়ে কয়লা বিদ্যুতের বদলে সৌর ও বায়ু বিদ্যুতের বৃহৎ প্রকল্প তৈরি করে বাংলাদেশের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদ কমাতে হবে। ফুলবাড়ী চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন করে খুনি এশিয়া এনার্জি (জিসিএম)কে দেশ থেকে বহিষ্কার করতে হবে। ফুলবাড়ী নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
কর্মসূচি
এসব দাবিতে আগামী ৫ এপ্রিল ফুলবাড়ীতে উত্তরাঞ্চলীয় প্রতিনিধি সভা এবং ২৭ এপ্রিল খুলনায় দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হবে। এসব সভার সিদ্ধান্ত নিয়ে মে ও জুন মাসে অনুষ্ঠিত হবে দেশব্যাপী সভা সমাবেশ ও জনসংযোগ। এছাড়া ৬ জুলাই ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় কনভেনশন। এই কনভেনশন থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।