ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আসলে দুর্নীতির মহাসড়কেই এই সরকার হাঁটছে বলেই সাধারণ মানুষের এতো লাশের স্তুপ। আজ শনিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অন্তনির্হিত স্পিরিটই ছিল গণতন্ত্র। ক্ষমতাসীন দল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে গণতন্ত্রকে মুছে দিয়ে বাকশালকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, বাকশাল হচ্ছে জনগণকে খোয়াড়ে বন্দী করার ব্যবস্থা। এখন চেতনা সন্ত্রাসের দ্বারা গণতন্ত্রকে দুরমুস করা এবং গণতান্ত্রিক শক্তির প্রতীক জনপ্রিয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আজ বন্দীশালায় বন্দী করে রেখেছেন। তার ওপর চালানো হচ্ছে পরিকল্পিত নিষ্ঠুর নির্যাতন-যাতে তিনি বিনা চিকিৎসায় সেখান থেকেই দুনিয়া থেকে চলে যান।
রিজভী বলেন, বিএসএমএমইউ এর প্রো-ভিসি, বিএমএ এর মহাসচিব ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এবং আরও একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক একদিন আগে গণমাধ্যমকে বলেছেন ‘বেগম খালেদা জিয়ার যে শারীরিক অবস্থা তাতে যেকোনো সময় একটা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তার স্বাস্থ্যের বর্তমান অবস্থা খুবই খারাপ এবং খুবই উদ্বেগজনক।’
তারা সকলেই বেগম জিয়াকে উন্নত চিকিৎসা দেয়ার সুপারিশ করেছেন। কিন্তু সরকার দেশনেত্রীর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। স্বৈরতন্ত্রের বন্দীশালা থেকে যিনি বারবার গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে আপোষহীন সংগ্রাম করেছেন তাকে সুকৌশলে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে মরিয়া হয়ে উঠছে একটি পক্ষ। আমরা আবারো দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলতে চাই-এই মূহুর্তে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে রাজপথ শুন্য ও আওয়াজহীন থাকবে না। অধিকার বঞ্চিত মানুষ প্রতিরোধ-প্রতিশোধের জন্য এখন ফুঁসছে। যেকোনো মূহুর্তে বাঁধ ভেঙ্গে যাবে এবং জনতার ঢল ধেয়ে গিয়ে উল্টে দিবে ক্ষমতাসীনদের সিংহাসন। নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
রিজভী বলেন, একটি ভবনের ধোঁয়া অপসারিত হতে না হতেই আরেকটি উঁচুতল ভবনের অগ্নিকুন্ডের ধোঁয়া সারা আকাশে বিস্তার লাভ করেছে। একটি বেদনাঘন শোক কাটতে না কাটতেই আরেকটি গভীর শোক আমাদেরকে আচ্ছন্ন করছে। দেশবাসী যেন একটা বিশাল বিস্তৃত গোরস্থানের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের মর্মস্পর্শী মৃত্যুর শোক কাটতে না কাটতেই বনানীর এফআর টাওয়ারের আগুনে পুড়ে মৃত্যুর ট্র্যাজেডি দেশবাসীকে শোকে বেদনায় নির্বাক করে দিয়েছে।
স্বজন হারানোর বেদনায় যন্ত্রনাকাতর মানুষ আর্তনাদ করছে। আমি এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত ২৫ জনের প্রতি গভীর শোক ও তাদের শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। হতাহতদের পরিবারগুলোকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, প্রতিদিনই প্রায় ৫০ জনের মতো মানুষের তাজা প্রাণ ঝরে যাচ্ছে নানা দুর্ঘটনায়। আগুনের কাছে, বেপরোয়া গতিতে চলা যানবাহনের কাছে, ফিটনেসবিহীন লঞ্চ ও বাসের কাছে মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে। একটা জবাবদিহীবিহীন সরকার থাকার কারনেই থামছে না মৃত্যুর মিছিল। এরা বিভিন্ন দূর্ঘটনায় মৃত্যুর সঠিক সংখ্যাটিও প্রকাশ করে না।
এরা ক্ষমতার মোহে এতটাই পাগল যে, মানুষের নিরাপত্তা দেয়ার কথা বেমালুম ভুলে যায়। সুশাসন থাকলে এই অব্যবস্থাপনা চলতো না। বিল্ডিং কোড অনুসরণ করা হয়নি, উঁচু তলার ভবনগুলোর কোনো নির্গমন পথ নেই, ভবনগুলোতে অগ্নিপ্রতিরোধক ব্যবস্থা নেই-সেটা তদারকির দায়িত্ব সরকারের। শুধু লোভ ও লাভের জন্যই বেআইনীভাবে এই ভবনগুলি নির্মান করা হয়েছে। আর এই কারনেই আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা বিশ্বের বসবাসের অযোগ্যের তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে। অথচ প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য নেতা-মন্ত্রীদের মুখে উন্নয়নের মহাসড়কের বুলি শুনতে শুনতে সাধারণ মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।
রিজভী বলেন, ২২ তলা ভবনে আগুন নেভানোর সরঞ্জাম নেই অথচ দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে বলে চাপাবাজি চলছে সপ্তকন্ঠে তারস্বরে। এফআর টাওয়ারে অগ্নিনির্বাপন ও হতাহতদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসসহ উদ্ধারকর্মীরা প্রানান্তকর চেষ্টা চালিয়েছেন, তাদেরকে আমরা আবারো ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আগুন নেভাতে ও মানুষ উদ্ধারে সরকার আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
আধুনিক যন্ত্রপাতি ও দুর্ঘটনার সংবাদ পাওয়ার কোনো লেটেষ্ট ডিভাইস নেই। দুর্ঘটনা স্থলে উদ্ধারকর্মীদের দ্রুত পৌঁছানোর জন্য কোনো উন্নতমানের বিকল্প ব্যবস্থা নেই। আগুন নেভাতে উন্নত ও স্বয়ংক্রিয় মই পর্যন্ত নেই। সবই সেকেলে ও মান্ধাতার আমলের। হেলিকপ্টারের সাথে ঝোলানো বালতিতে হাতিরঝিল থেকে পানি নিয়ে বিল্ডিংয়ে আগুন নেভাতে গিয়ে সেই বালতির সমস্ত পানি ফুটো তলানী দিয়ে ঝরে গেছে।
অথচ উন্নত দেশে আগুন নেভাতে ও মানুষ উদ্ধারে কত আধুনিক সরঞ্জাম ও ব্যবস্থাপনা দেখতে পাওয়া যায়। এর আগে আগুনে অসংখ্য মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুর পরেও বর্তমান শাসকগোষ্ঠী ফায়ার সার্ভিসকে আধুনিক যন্ত্রপাতিতে উন্নত করেনি। যদি করতো তাহলে এতো মানুষের আগুনে পুড়ে প্রাণ যেতো না।
তিনি বলেন, কিন্তু গণতান্ত্রিক সংগ্রামকে দমন করার জন্য কত যে আধুনিক মারনাস্ত্র নিয়ে আসা হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। নিয়ে আসা হয়েছে সর্বাধুনিক বিপজ্জনক টিয়ারশেল, স্মোক গ্রেনেড, সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট, গোলমরিচ-স্প্রেসহ নানা ধরণের আধুনিক অস্ত্র। বিএনপিসহ বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য, মানুষ হত্যার জন্য নিয়ে আসা হয়েছে ৩০ হাজার আধুনিক মরণঘাতি ১২ বোর শর্টগান। শর্টগানের জন্য ৩০ লাখ কার্তুজ আমদানী করা হয় হাজার কোটি টাকা খরচ করে। স্বীকারোক্তি আদায় বা নির্যাতনের জন্য আনা হয়েছে ইলেকট্রিক চেয়ার ও ইলেকট্রিক শক দেয়ার অত্যাধুনিক ডিভাইস।
বিরোধী দলের ফোনে আড়িপাতার জন্য বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত যন্ত্রপাতি নিয়ে আসা হয়েছে। গোপনে অডিও-ভিডিও করার উন্নতমানের ডিভাইস নিয়ে আসা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলার বিভিন্ন বাহিনীকে হেলিকপ্টার দেয়া হয়েছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। অর্থাৎ মানুষ হত্যার জন্য ব্যয়বহুল আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে কিন্তু মানুষ বাঁচানোর জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতির কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
রিজভী আরো বলেন, যে সরকার দাবি করে মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠিয়ে মহাকাশ জয় করেছে, অথচ মানুষ বাঁচানোর জন্য সেই সরকারের কোনো আগ্রহ নেই। দেশের জনগণ মনে করে এই আগুনে পুড়ে মানুষগুলো মরার দায় শেখ হাসিনার সরকারের। বিশ্বের মধ্যে দুষিত শহর ঢাকা, ধুলাবালির শহর ঢাকা, ধোঁয়ার শহর ঢাকা, বসবাসের অযোগ্য শহর ঢাকা। যারা মধ্যরাতে ভোট করে তারা গণবিরোধীই হয়। সেজন্য মানুষ বাঁচতে তার কোনো দায়বোধ করেনা।