স্টাফ রিপোর্টার: আজ বুধবার পবিত্র লাইলাতুল মি’রাজ। সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী বিশ্ব মানবুার মুক্তির দূত হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর ২৩ বছরের নবুয়্যতী জীবনের অন্যতম অলৌকিক ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো এই মিরাজ। মদীনায় হিজরতের আগে মক্কায় অবস্থানকালে ২৬ রজব দিবাগত রাতে তিনি আল্লাহ প্রদত্ত বাহনে চড়ে মিরাজ গমনের মাধ্যমে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের মহান সান্নিধ্য লাভ করেন। মি’রাজ গমন করে হজরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর কাছ থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আদেশসহ ইসলামী সমাজ পরিচালনার বিধি-বিধান নিয়ে আসেন। পবিত্র কুরআনের সূরা বনি ইসরাঈলে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
বিশ্ব মানবুার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামকে একটি পূর্ণাঙ্গ ও সর্বজনীন জীবন ব্যবস্থা হিসেবে রূপ দেয়ার জন্য তিনি বিশ্বের পালনকর্তার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা পেয়েছিলেন পবিত্র মি’রাজ রজনীতে। এ জন্য এ রাতটি প্রত্যেক মুসলমানের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। রাসূল (সাঃ)-এর সকল মুুজিজার মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুজিজা হলো পবিত্র মি’রাজ। এ রাতে তিনি বায়তুল মোকাদ্দাসে সকল নবীর ইমাম হয়ে সাইয়্যিদুল মুরসালিনের আসনে স্থায়ীভাবে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। ফলে এ রাতটি নিঃসন্দেহে তার শ্রেষ্ঠত্বের গৌরবোজ্জল নির্দশন বহন করে।
মি’রাজ শব্দ এসেছে আরবী ‘উরুজুন’ শব্দ থেকে। উরুজুন অর্থ সিঁড়ি আর মি’রাজ অর্থ উর্ধ্বেগমন। যেহেতু সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠা হয় সে জন্য রাসূলের ঊর্ধ্বগমনকে মিরাজ বলা হয়। রাসূল (সাঃ) পথহারা মানুষদেরকে সঠিক পথের সন্ধান দিতে এক টানা ১২ বছর দাওয়াত দেন মক্কায়। কিন্তু তার দাওয়াতে কিছু সংখ্যক মানুষ ইসলাম কবুল করলেও অধিকাংশরা লেগে যায় বিরোধিতায়। ধীরে ধীরে বিরোধিতা তীব্র থেকে তীব্রতর আকার ধারণ করে। নানা রকম অমানবিক নির্যাতন শুরু হয় রাসূলের উপরে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সান্ত¡না দেয়ার জন্য এ সময়ই রাসূল (সাঃ)-কে তার সান্নিধ্যে নিয়ে যান। নিজের প্রিয় হাবিবকে তার সান্নিধ্যে নিয়ে যেতে আল্লাহ নিজ কুদরতে মি’রাজের আঞ্জাম দেন। বিভিন্ন তথ্যের মাধ্যমে তারই প্রমাণ ঘটে। এক মূহুর্তে ঘটে যায় মি’রাজের ঘটনা। তাফসীরকারকগণ বলেন, চোখের এক পলক সময় ব্যয়িত হয়। বর্ণিত আছে, মি’রাজ থেকে ফেরার পর দরজার কড়া নড়তে এবং অজুর পানি গড়াতে দেখেছেন রাসূল (সা.)।
পবিত্র কুরআনের সূরা বনী ইসরাঈলের প্রথম ও সপ্তম আয়াতে রাসূল (সাঃ)-এর মিরাজ গমনের বর্ণনা এসেছে, তিনি সেই পরম পবিত্র মহিমাময় সত্তা যিনি তার স্বীয় বান্দাহ (সাঃ)-কে এক রাতে ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত। যার পরিবেশকে করেছেন তিনি বরকতময়। যাতে তাকে নিজের কিছু কুদরত দেখান। নিশ্চয়ই তিনি সবকিছুরই শ্রোতা ও দ্রষ্টা।
২৬ রজব রাসূল (সাঃ) উম্মে হানী বিনতে আবু তালিবের ঘরে ঘুমিয়েছিলেন। হঠাৎ জিব্রাইল (আঃ) এসে রাসূল (সাঃ)-কে মসজিদুল হারামে নিয়ে যান। সেখানে তার বুক বিদীর্ণ করে জমজম কূপের পানি দিয়ে সিনা মোবারক ধৌত করে শক্তিশালী করেন। তারপর সেখান থেকে তিনি বোরাক নামক এক ঐশী বাহনে চড়ে বায়তুল মোকাদ্দাসে এসে সকল নবীর ইমামতি করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। তারপর তিনি বোরাকে চড়ে ঊর্ধ্বে গমন করতে থাকেন। একের পর এক আসমান অতিক্রম করতে থাকেন। পথিমধ্যে মূসা (আঃ) সহ অনেক নবী রাসূলের সাথে সাক্ষাৎ হয়। সপ্তম আসমানের পর বায়তুল মামুরে গিয়ে জিব্রাইল (আঃ)-কে রেখে তিনি রফরফ নামক আরেকটি ঐশী বাহনে চড়ে বিশ্বের সষ্ট্রা মহান আল্লাহর দরবারে হাজির হন। বর্ণনায় আছে, রাসূল (সাঃ) আল্লাহর এতটা কাছাকাছি গিয়েছিলেন যে দুজনের মধ্যখানে ধনুক পরিমাণ ব্যবধান ছিল। সেখানে আল্লাহর সাথে রাসূল (সাঃ)-এর কথোপকথন হয়। এক বর্ণনার মাধ্যমে জানা যায়, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রাসূল (সাঃ)-এর কাছে জানতে চান তিনি আল্লাহর জন্য কি উপহার এনেছেন। তখন রাসূল (সাঃ) তাশাহুদ পাঠ করেন এবং বলেন, এটি আপনার জন্য উপহার হিসেবে এনেছি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মুসলমানদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজসহ জীবন ও রাষ্ট্র পরিচালনার বিভিন্ন বিধি-বিধান রাসূলকে উপহার দেন। মি’রাজ থেকে আসার পর এ ঘটনার বর্ণনা দেয়া হলে বিনা প্রশ্নে তা বিশ্বাস করেন হজরত আবু বকর (রা.)।
রাসূলের মি’রাজ গমনের বিষয়ে পবিত্র কুরআন ও হাদীসে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। এ ছাড়া মুফাসসীরগণও এ সম্পর্কে ব্যাপক তথ্য প্রমাণাদি পেশ করেছেন।
পবিত্র মি’রাজের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে র্বুমান বিশ্বের মজলুম মুসলমানদেরকে কাফিরদের নির্যাতনের হাত থেকে মুক্তির জন্য কাজ করতে হবে। এ উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। মসজিদ মাদরাসাসমূহেও আলোচনা এবং দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
লাইলাতুল মি’রাজ উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আজ বুধবার বাদ আসর বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে ‘লাইলাতুল মি’রাজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক ওয়াজ ও মিলাদের আয়োজন করেছে।
বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মহিউদ্দিন কাসেম এদিন ওয়াজকরবেন। সভাপতিত্ব করবেন ইসলামিক