মঙ্গলবার সকাল ৯টা ০৯ মিনিটে কপিলমুনি কালীবাড়ি ঘাটে গঙ্গা স্নানের (বারুণীর স্নান) মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে ৪শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মহাবারুণী মেলা। ¯œান উপলক্ষে মেলায় নেই চিত্তবিনোদনে কোনো ব্যবস্থা, বসেনি রকমারি পসরা নিয়ে তেমন কোনো দোকান। সে কারনে ¯œানে সীমাবদ্ধ ছিলো মহাবারুণী মেলা। জায়গার অভাব ও চলমান এইচএসসি পরীক্ষার কারণ, সহ রাজনৈতিক দলের সমন্বয়হীনতার অজুহাতে আয়োজক কমিটি মেলায় কোনো ব্যবস্থা না রাখলেও মূলত অভ্যন্তরীন মতানৈক্যকে দায়ি করছেন পর্বণ প্রিয় এলাকাবাসী। তাদের আশঙ্কা এমনটি চলতে থাকলে আগামীতে সম্পূর্ণ বিলীন হবে প্রায় ৪শ বছরের অধিককাল থেকে শুরু হওয়া ঐতিহ্যবাহী কপিলমুনি মহাবারুণী মেলা। সর্বপরি খননে কপোতাক্ষ নদ সচল হলেও ভাঁটা লেগেছে ¯œানোৎসবকে কেন্দ্র করে পক্ষকালব্যাপী মহাবারুণী মেলায়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে, এক চৈত্র মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশীতে মহামুনি কপিল দেব কপিলমুনির কপোতাক্ষ ঘাটে সিদ্ধি লাভ করেন। সিদ্ধিলাভের স্থানে তিনি মা গঙ্গার সাক্ষাৎ লাভ করেন। তাঁর সিদ্ধিলাভের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ধর্মপ্রাণ হিন্দুরা কপোতাক্ষ নদের কালীবাড়ি ঘাটে গঙ্গাস্নান বা বারুণী স্নান উৎসব পালন করে আসছেন। তাদের বিশ্বাস এ স্নানের মধ্যো দিয়ে দেহ মন পবিত্র হয়।
মেলার ইতিহাস থেকে জানাযায়, প্রায় ৪শ’ বছর পূর্বে দ্বাপর যুগে কপিল দেব নামে এক মুনি সিদ্ধি লাভ করেছিলেন কপিলমুনি কপোতাক্ষ পাড়ের কালী বাড়ি ঘাটের একটি বট বৃক্ষ মূলে। তার নামানুসারে প্রতিষ্ঠিত হয় কপিলমুনি বাজার, গড়ে উঠেছিল কালি মন্দির। সেই থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা প্রতি বছর বাংলা চৈত্র মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশীতে কপোতক্ষ নদের এই স্থানে পালন করে আসছে বারুণী স্নানোৎসব। আরেক অর্থে বরুণ জলের দেবতা আর তার স্ত্রী বারুণী। তবে বারুণীর ইতিহাস নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও ঐতিহ্য নিয়ে কারো বিতর্ক নেই। মেলা উপলক্ষে সেই স্মরণাতীত কাল থেকে কপিলমুনিতে মেলা উপলক্ষে বসতো সার্কাস, যাত্রা, যাদু প্রদর্শণী, পুতুল নাচ, নাগর দোলা। বসে রকমারী পসরার বাহারী সব দোকান-পাট। তবে এবার মেলা উপলক্ষে নেই কোনো আয়োজন। শুধু মাত্র মেলা প্রাঙ্গণ কালী বাড়ী ঘাট ও চত্তরে বসেছে কয়েকটি দোকান। দোকানিদের আশঙ্কা যেহেতু এবারকার মেলায় কোনো আয়োজন নেই তাই তাদের দোকানও টিকে থাকতে পারে ২/১ দিন।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মিলন স্থল খ্যাত কপিলমুনি বারুণী মেলায় ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে লাখ লাখ মানুষের পদচারনায় মুখরিত থাকে। তবে এবার শুধু মাত্র স্নানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে বারুণী মেলা। এমনটি চলতে থাকলে এক সময় ঐতিহ্য হারাবে মূল মেলার।
এ বিষয়ে কপিলমুনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন খোকন জানান, রাজনৈতীক সমন্বয়হীনতা ও গ্রুপিং এর কারনে গত কয়েক বছর বারুণী মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।
কপিলমুনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কওছার আলী জোয়াদ্দার জানান, আমার সদিচ্ছার কোনো ঘাঠতি নেই। জাতীয় ও উপজেলা নির্বাচন নিয়ে গ্রপিং এর বিষয় সামনে এনে বলেন, যদি কেউ মেলা আয়োজন করতে চায় আমি সার্বিক সহযোগীতার করবো। এলাকার ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে বারুণী মেলা হওয়া দরকার বলে আমিও মনে করি।