বিতর্কে নাজিম জয়

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ  বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের সময় রীতিমতো নায়ক হয়ে উঠে শিশু নাঈম ইসলাম। অগ্নিকাণ্ডের দিন ফায়ার সার্ভিসের একটি লিকেজ পাইপে পলিথিন পেঁচিয়ে তাতে পা দিয়ে চেপে  পানি আটকে মানুষের বিবেক জাগ্রত করেছিল। এমন দৃশ্যের ছবি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় নেট দুনিয়ায়।

সর্বমহলে প্রশংসায় ভাসতে থাকে ৮ বছর বয়সী নাঈম। তার পরের ঘটনাগুলো শিশু নাঈম আর তার পরিবারের জন্য অনেকটা বিব্রতকর। অভিনেতা শাহরিয়ার নাজিম জয় নাঈমের একটি সাক্ষাৎকার প্রচার করে। এর পরই শুরু হয় বিতর্ক। ওই সাক্ষাৎকার প্রচার করে জয় নিজেই ফেঁসে গেছেন। সাক্ষাৎকারে নাঈমের কাছে অভিনেতা জয় জানতে চান, তাকে অনেকেই পুরস্কার দিতে চাইছে।

পুরস্কারের টাকা সে কি করবে? জবাবে নাঈম জানায়, টাকা সে এতিমখানায় দিয়ে দেবে। নাঈম এও বলে যে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এতিমদের টাকা লুট করেছেন।

এ সাক্ষাৎকার প্রচারের পর অপর একটি সাক্ষাৎকারের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ওই সাক্ষাৎকারে নাঈম জানায়, এমন জবাব দিতে তাকে শিখিয়ে দেয়া হয়েছিল। এ ভিডিও প্রচারের পর থেকে সমালোচনার কেন্দ্রে শাহরিয়ার নাজিম হয়। সমালোচনা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র আক্রমনের শিকার হয়ে নিজের নিরাপত্তা চেয়ে জিডিও করেছেন অভিনেতা জয়। এছাড়া অন্য একটি আইডি থেকে শাহরিয়ার নাজিম জয় ফেসবুক লাইভে এসে ঘটনার ব্যাখ্যাও দেন। বলেন, এখন আমি আপনাদের কিছু কথা বলব। কথাগুলো অত্যন্ত জরুরি। কারণ আপনারা সবাই আমার ওপর ক্ষিপ্ত। আমাকে আপনারা ফোন দিচ্ছেন, থ্রেট দিচ্ছেন, আমার ফেসবুক হ্যাকড হয়েছে, আমাকে গালাগালি করছেন। আমি একটা কথা আপনাদের খুব দৃঢ়ভাবে বলতে চাই নাঈম ছেলেটির আমি যে ইন্টারভিউ নিয়েছি। আমি সব সময় ইন্টারভিউ প্রোগ্রাম করি। কিন্তু আমি আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি আমি কোন কথা তাকে শিখিয়ে দেই নাই। নাঈম যে বক্তব্য দিয়েছে সেটা সে কোথা থেকে শিখে এসে দিয়েছে সেটা আমি জানি না।

আমার অনুষ্ঠানে এসে নিজের দায়িত্বে এসব বলেছে। তিনি বলেন, কোন জাতীয় নেতা নিয়ে মন্তব্য করার সাহস আমার নাই। এবং আমি করতেও চাই না। কারন সবাই সম্মানিত। জাতীয় নেতা যারা, একসময় যারা ক্ষমতায় ছিলেন বা এখন যারা ক্ষমতায় আছেন তারা সবাই সম্মানিত। আমার মত ক্ষুদ্র মানুষ তাদের নিয়ে আলোচনা সাজে না। জয় বলেন, হ্যাঁ আমি কোন বিশেষ দলের সমর্থক হতে পারি। কিন্তু আমি অন্য দল নিয়ে বা অন্য দলের নেতা নিয়ে কটুক্তি করার অধিকার রাখি না। আমি সেটা করিওনা। নাঈম যেটি বলেছে সেটি আমি নিজে শুনেও হতবাক হয়েছি।

আমি তাকে দ্বিতীয় বার জিজ্ঞাসা করেছি। আমার ইন্টারভিউতে এ রকমভাবে উত্তর আশা করি নাই।  কিন্তু উত্তর হয়ে গেছে। আমি একটি দায়িত্ব নিতে পারি কেন আমি সেটা প্রচার করেছি। কিন্তু আমি মানুষ যা বলে সবকিছু দর্শকের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করি। আপনারা যারা আমাকে ভুল বুঝছেন তাদের কাছে আমি একটা রিকুয়েস্ট করতে পারি আপনারা আমাকে মিছি মিছি ভুল বুঝছেন। আমার ফেসবুক হ্যাকড করেছেন, আমাকে অপমান করছেন, থ্রেট দিচ্ছেন আমার জীবন হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছেন।  কিন্তু আমি বলব আমি এটার জন্য দায়ী না।

জয় বলেন, যদি কখনও কেউ প্রমাণ করতে পারে যে আমি তাকে শিখিয়ে দিয়েছি তবে আমি আর কোন দিন উপস্থাপনা করব না। আপনারা না চাইলে আমি উপস্থাপনা ছেড়ে দিব। আপনারা আমাকে অপমান অপদস্ত থ্রেট দিবেন না। আমি বাঁচতে চাই, কাজ করতে চাই, আমি খুবই সাধারণ একজন মানুষ আমার ক্ষতি করবেন না।

পুরো বিষয়টি জানতে গতকাল করাইল বস্তিতে কথা হয় নাঈমের মা নাজমা বেগমের সঙ্গে। এর আগে টেলিফোনে দেখা করার কথা বলতেই নাজমা বলেন নাঈম অসুস্থ। সে তার নানা বাড়ি সাভার চলে গেছে। দুই সপ্তাহ পরে আসবে। কিন্তু নাঈমদের কড়াইল বস্তির বাসায় গিয়ে খোঁজ নিয়ে নাঈমের অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যায়। তাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় অভিনেতা শাহরিয়ার নাজিম জয়ের কাছে সাক্ষাৎকার দেয়ার পর তারা অনেকটা চাপের মধ্যে আছেন। আগে সচরাচর সবার সঙ্গে কথা বললেও এখন এড়িয়ে যান। স্থানীয়রা মনে করছেন কোন মহল থেকে তাদের চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। এবং গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলা থেকে দুরে রাখা হচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায় নাঈম ও তার মা নাজমা বেগমের সঙ্গে কথা বলার উদ্দেশ্য তাদের বাসায় গেলে।

বাসায় তাদের খোঁজ নিতেই নাঈমের ছোট বোন কাজল জানায় তার মা নাঈমকে নিয়ে কোথাও চলে গেছেন। পরে নাজমা বেগমের কাছে ফোন দিলে জানান, তিনি অনেক দুরে আছেন বাসায় আসতে অনেক দেরি হবে। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা কথা বলেন নাঈমের মা নাজমা বেগমের সঙ্গে। তাদের অনুরোধে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হন নাঈম ও তার মা। নাজমা বেগম মানবজমিনকে বলেন, আমি লজ্জিত, অনুতপ্ত। জয় ভাইয়ের ইন্টারভিউতে আমার ছেলে একটা কথা বলে ফেলছে। এই কথাটা তাকে কেউ শিখিয়ে দেয়নি। সে নিজে থেকে এই কথাটা বলছে।

এজন্য মা হয়ে আমি প্রধানমন্ত্রী, খালেদা জিয়া ও  দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইছি। সবাই যেন আমার ছেলেকে ক্ষমা করে দেয়। আবার নাঈমও খালেদা জিয়ার কাছে ক্ষমা  চেয়েছে। সে বলেছে, ওই অনুষ্ঠানে গিয়ে সে বুঝে উঠতে পারে নাই।  সে যা বলেছে ভুল বলেছে। এটা বলা তার ঠিক হয়নি।

Check Also

সাতক্ষীরায় পুত্রবধূর হাতে নির্যাতিত সেই স্কুলশিক্ষক মারা গেছেন

ক্রাইমবাতা রিপোট, সাতক্ষীরা:   ছেলে ও পুত্রবধূর হাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশতলা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।