দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বোরোর বাম্পার ফলন

আব্দুর রাজ্জাক রানা: খুলনা:  ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ    দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এ বছর বোরো ক্ষেতে ব্লাস্ট ও অন্যান্য রোগ বালাই দেখা দেয়নি। ফেব্রুয়ারি ও মার্চে শিলাবৃষ্টিতে বড় ধাক্কা খেয়েছে বোরো ক্ষেত। এ বছরের ২২ মিলি মিটার বৃষ্টিপাতে বোরো আবাদে আশীর্বাদ বয়ে এনেছে। ইউরিয়া সারের ব্যবহার হয়েছে কম। এ অঞ্চলের খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও নড়াউল জেলায় ৯ লাখ ৮৬ হাজার ৮৭৯ মেট্রিক টন বোরো ধান উৎপাদন হবে। উৎপাদিত ধানের মূল্য দাঁড়াবে ৩ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা, এ আশাবাদ কৃষি কর্মকর্তাদের। গেল মওসুমে খুলনা জেলায় ৪৭ হেক্টর, বাগেরহাট জেলায় ২ হেক্টর, নড়াইল জেলায় ৮ হেক্টর ও সাতক্ষীরা জেলায় ৭ হেক্টর জমিত ব্লাস্টে আক্রান্ত হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার সূত্র জানান, চার জেলায় ২ লাখ ২৯ হাজার ৪৬৬ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আবাদ হয়েছে ২ লাখ ৩৫ হাজার ৬৫৭ হেক্টর জমিতে। গত বছর ২ লাখ ৩০ হাজার ৬৫২ হেক্টর জমিতে ১০ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়। আগামী মধ্য এপ্রিল থেকে ধান কাটা শুরু হবে। বিএডিসি’র সূত্র জানান, গত বছরের চেয়ে এবারে বীজের মূল্য বেশি ছিল। সরকারি গুদামে ৫০ মেট্রিক টন বোরো বীজ অবিক্রিত রয়েছে। স্থানীয় উপ-পরিচালক মো. লিয়াকত আলী জানান, শেষাবধি কম মূল্যে সরকারি বীজ বিক্রি করতে হয়েছে। খাদ্য বিভাগের আঞ্চলিক কর্মকর্তা জানান, গত বছর খাদ্য ঘাটতি থাকায় জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ভোমরা ও বেনাপল স্থলবন্দর দিয়ে ৩৬ হাজার মেট্রিক টন চাল ভারত থেকে আমদানি করা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, খুলনার অতিরিক্ত পরিচালক কাজী আব্দুল মান্নানের দেয়া তথ্য মতে, দক্ষিণাঞ্চলের চার জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চার শতাংশ বেশি জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এবারে এ অঞ্চলে বোরো ক্ষেতে রোগ বালাই দেখা দেয়নি। সবচেয়ে ভাল ফলন হবে নড়াইলের লোহাগড়া, কালিয়া, জেলা সদর, বাগেরহাটের ফকিরহাট, চিতলমারী, জেলা সদর, সাতক্ষীরার তালা, কলারোয়া, খুলনার পাইকগাছা, ডুমুরিয়া, তেরখাদা ও ফুলতলা উপজেলা। চার জেলায় ৩ হাজার ৬৩০ কোটি টাকার বোরো উৎপাদন হবে বলে তিনি আশাবাদী। সাতক্ষীরা জেলার উপ-পরিচালক অরবিন্দু বিশ্বাস জানান, ২৬ ফেব্রুয়ারি ও মধ্য মার্চের শিলাবৃষ্টিতে কলারোয়া উপজেলার হেলাতালা ইউনিয়ন ও সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভোমরা ইউনিয়নে বোরো খাতে ক্ষতি হয়। জেলায় ৭৬ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। সবচেয়ে ভাল ফলন জেলা সদর, কলারোয়া, দেবহাটা ও তালা উপজেলায়। বোরো ক্ষেতে শিষ দেখা দিয়েছে। বাম্পার ফলন হবে বলে তিনি আশাবাদী। তিন লাখ ৫ হাজার ৪৩০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদিত ধানের মূল্য দাঁড়াবে ৪৫৮ কোটি টাকা। ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছাদ্দেক হোসেন জানান, উপজেলায় ২১ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। উপজেলার গুটুদিয়া, হাটিয়া, খর্ণিয়া, ডুমুরিয়া, রংপুর ও শাহপুর এলাকায় ধানের ফলন আশাব্যঞ্জক। এবারে ব্লাস্ট বা অন্যান্য রোগ বালাই দেখা দেয়নি। ৪০ হাজার কৃষক পরিবার উৎপাদনের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ৬ মেট্রিক টন উৎপাদনে আশাবাদী। রূপসা উপজেলার তিলক গ্রামের চাষি আমজাদ হোসেন জানান, তিনি হীরা-২ জাতের বেসরকারি কোম্পানির হাইব্রিড জাতের বীজ ব্যবহার করেছেন। রূপসা উপজেলার দক্ষিণ বাঘমারা গ্রামের চাষি মো. কামরুল ইসলাম জানান, তিনি এসিআই কোম্পানির ছক্কা জাতের চার কেজি বীজ ক্রয় করেছেন। আশানুরূপ আবাদ হয়েছে। তেরখাদা উপজেলার ইছামতি গ্রামের চাষি আলিম কাজী জানান, তিনিও বেসরকারি কোম্পানির হাইব্রিড জাতের বীজ দিয়ে আবাদ করেন। বৃষ্টি আশীর্বাদ বয়ে এনেছে। কৃষকরা জানান বোরো ক্ষেতে এবার রোগ বালাই দেখা দেয়নি।

Check Also

কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করার সুপারিশ দেবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন

কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করার সুপারিশ করতে যাচ্ছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সচিবালয় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।